গোল আটকানো প্রহরীরা

টাইব্রেকার ঠেকিয়ে আলোচনায় মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বুনুছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ মানেই নানামুখী রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা। বিশেষ করে নকআউট পর্বে গিয়ে এই রোমাঞ্চ অন্য মাত্রা পায়। কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতেও দেখা মিলেছে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের। দুটি ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়েছে টাইব্রেকে। যেখানে নায়ক হয়েছেন দুই গোলকিপার।

জাপানের বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক হয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার দমিনিক লিভাকোভিচ, আর স্পেনের বিপক্ষে ইতিহাস গড়েছেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। টাইব্রেকারের গোল খেয়ে খলনায়ক না হলেও, গোল বাঁচিয়ে নায়ক হওয়ার দারুণ সুযোগ থাকে। তেমনই কিছু পেনাল্টি ঠেকানোর রোমাঞ্চকর গল্প জেনে নিন:

হারাল্ড শুমাকার বনাম ফ্রান্স (১৯৮২)

১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের দুটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে জার্মানিকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেন হারাল্ড শুমাকার। তবে সেদিন শুমাকারের দলকে বাঁচানোর সুযোগই পাওয়ার কথা ছিল না। সেদিন ফরাসি ডিফেন্ডার প্যাট্রিক ব্যাটিসটনকে মারাত্মকভাবে ফাউল করেন শুমাকার। নিশ্চিত লাল কার্ড দেখার মতো অপরাধ হলেও, রেফারি সেটি পাত্তা দেননি। এরপর অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকে। যেখানে শুমাকার ম্যাক্সিমে বোসিস এবং দিদিয়ের সিক্সের পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক হয়ে দেশকে ফাইনালে নিয় যান। ফাইনালে অবশ্য ইতালির কাছে ৩–১ গোলে হেরে যায় পশ্চিম জার্মানি।

জার্মানির সাবেক গোলকিপার জেনস লেম্যান
ফাইল ছবি: এএফপি

জেনস লেম্যান বনাম আর্জেন্টিনা (২০০৬)

সেবার বিশ্বকাপে তাঁকে গোলকিপার করা নিয়ে ছিল বিতর্ক। তখনো খেলছিলেন জার্মানির ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালের খেলার নায়ক অলিভার কান। তবে কানের বদলে লেম্যানকে প্রথম গোলরক্ষক ঘোষণা করেন কোচ ইউর্গেন ক্লিন্সমান। যার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রতিটি স্পট কিকে সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে লেম্যান ঠেকিয়ে দেন রবার্তো আয়ালা ও এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসোর পেনাল্টি। পরে অবশ্য সেমিফাইনালেই থেমে যায় জার্মানির বিশ্বকাপ–যাত্রা।

রিকার্ডো বনাম ইংল্যান্ড (২০০৬)

২০০৪ সালের ইউরোতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে পর্তুগালের নায়ক হন রিকার্ডো। ইংলিশরা প্রতিশোধের উপলক্ষ পায় দুই বছর পর বিশ্বকাপে। তবে সেবারও রিকার্ডো–বাধা পেরোতে পারেনি ইংলিশরা। সেই ম্যাচে রিকার্ডো বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম গোলকিপার হিসেবে ঠেকিয়ে দেন তিনটি পেনাল্টি। যেখানে তিনি ঠেকান ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, স্টিভেন জেরার্দ এবং জেমি ক্যারাঘারের শট।

টিম ক্রুল বনাম কোস্টারিকা (২০১৪)

২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে দারুণ এক চমক দেন নেদারল্যান্ডস কোচ লুইস ফন গাল। পেনাল্টি স্পেশালিস্ট গোলকিপার হিসেবে জেসপার ক্লাসেনের বদলে নামিয়ে দেন টিম ক্রুলকে। এই বাজি দারুণভাবে কাজে লেগে যায়। দুর্দান্ত নৈপুণ্যে পেনাল্টি ঠেকিয়ে ডাচদের সেমিফাইনালে ওঠার নায়ক হয়ে ওঠেন ক্রুল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে অন্যতম এক চমকপ্রদ গল্প হয়ে আছে ক্রুলের বদলি নেমে পেনাল্টি ঠেকানোর ঘটনা।

২০১৮ বিশ্বকাপে ঝলক দেখান ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার দানিয়েল সুবাসিচ
ফাইল ছবি: এএফপি

দানিয়েল সুবাসিচ বনাম ডেনমার্ক (২০১৮)

২০০৬ সালে রিকার্ডোর তিন পেনাল্টি ঠেকানোর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটান ক্রোয়েশিয়ার সুবাসিচ। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে তিনিও একে একে তিন ড্যানিশ খেলোয়াড়ের শট ঠেকিয়ে দেন। ক্রোয়াট এই গোলকিপার সেদিন ঠেকান ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন, লাসে শোনে ও নিকোলাই ইয়োর্গেনসেনের পেনাল্টি শট। সে বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া।

ডোমিনিক লিভাকোভিচ বনাম জাপান (২০২২)

রিকার্ডো ও সুবাসিচের পর তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে তিনটি পেনাল্টি ঠেকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আরেক ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। এবারের কাতার বিশ্বকাপেই এই কীর্তি গড়েছেন দিনামো জাগরেভের এই গোলরক্ষক। দারুণ খেলে শেষ ষোলোয় ওঠা জাপানকে থামিয়েছেন লিভাকোভিচই।

ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ
ছবি: টুইটার

ইয়াসিন বুনু বনাম স্পেন (২০২২)

মরক্কোর ইতিহাস গড়ার অন্যতম নায়ক ইয়াসিন বুনু। স্পেনের বিপক্ষে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে দারুণ গোলকিপিং করা বুনু পেনাল্টি শুটআউটেও ছিলেন অনবদ্য। পেনাল্টিতে এই সেভিয়া গোলরক্ষক ঠেকিয়েছেন কার্লোস সোলের ও সের্হিও বুসকেটসকে। তাঁর নৈপুণ্যে ২০১০ সালে ঘানার পর দ্বিতীয় আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কো উঠল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।