যেভাবে জিতলে লোকসান, হারলেও লাভ হবে ডর্টমুন্ডের

বরুসিয়া ডর্টমুন্ড দলএএফপি

ফুটবলে উঁচু সারির ক্লাবগুলোই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলে। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারাই অন্য রকম গর্বের ব্যাপার। শুধু গৌরবের দিক দিয়েই নয়, অর্থের দিক থেকেও চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্লাবগুলোর জন্য বেশ পয়া।

ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় খেলা মানেই ক্লাবের ‘ব্যাংক ব্যালেন্স’ ফুলে–ফেঁপে ওঠা, যা পরবর্তী সময়ে ক্লাবের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় হয়ে থাকে। দুঃসময়ে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতেও কাজে লাগে। আবার অনেক ক্লাবকেই দেখা যায় চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে নতুন খেলোয়াড় কেনে, নিজেদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে। এ কারণে শীর্ষ ক্লাবগুলোর লক্ষ্য থাকে প্রতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা না যাক, অন্তত হাজিরা যেন দেওয়া যায়।

এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। দল দুটি আজ রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াই মুখোমুখি হবে। রিয়াল-ডর্টমুন্ডের যে–ই জিতবে, তার হাতেই শোভা পাবে রুপালি ট্রফি।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল আয়োজনে প্রস্তুত লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম
এএফপি

কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেই কি মৌসুমজুড়ে এত খাটাখাটনি ব্যর্থ হয়ে যাবে? ক্লাবগুলো শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা বাবদ কত টাকা পাচ্ছে, সে অঙ্কের দিকে চোখ রাখলে অন্তত সেটা মনে হবে না।

এবার সব মিলিয়ে ২১০ কোটি ইউরো প্রাইজমানি বা অর্থ পুরস্কার দেবে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের আয়োজক উয়েফা, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকার বেশি। ওয়েম্বলি যে রুপালি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরবে, সেই দল পাবে ২ কোটি ইউরো (২৫৪ কোটি টাকা)। রানার্সআপ দল পাবে ১ কোটি ৫৫ লাখ ইউরো (১৯৭ কোটি টাকা)। দুই সেমিফাইনালিস্ট ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজির প্রত্যেকে পাবে ১ কোটি ২৫ লাখ ইউরো (১৫৯ কোটি টাকা) করে।

এ ছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ৮ দলের প্রত্যেকে পাবে ১ কোটি ৬ লাখ ইউরো করে (১৩৫ কোটি টাকা), শেষ ষোলোর একেকটি দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যুক্ত হবে ৯৬ লাখ ইউরো (১২২ কোটি টাকা)। আর গ্রুপ পর্বে খেলা ৩২ দলের প্রত্যেকের জন্য থাকছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো (১৯৯ কোটি টাকা)।

২০২৩–২৪ চ্যাম্পিয়নস লিগে কোন পর্যায়ে কত অর্থ পুরস্কার

প্রশ্ন উঠতে পারে, রানার্সআপ দলের চেয়েও গ্রুপ পর্বে খেলা দল বেশি টাকা পাবে কেন? কারণটা হলো, রানার্সআপ হওয়া দলকে শুধু ফাইনাল খেলার জন্য ১ কোটি ৫৫ লাখ ইউরো দেওয়া হবে। আর গ্রুপ পর্বের একেকটা দল ১ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো পাবে ৬টি ম্যাচ খেলার জন্য। চ্যাম্পিয়ন দলও ২ কোটি ইউরো পাবে শুধু ফাইনাল জেতার জন্য। নকআউট পর্বে ওঠা সব দলকে যেহেতু গ্রুপ পর্ব খেলে আসতে হয়েছে, তাই তারাও ১ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো করে পাবে।

একইভাবে ধাপে ধাপে ওপরের পর্যায়ে ওঠা দল নিচের পর্যায়ে খেলে আসার জন্য ওই পর্যায় থেকে বিদায় নেওয়া দলের সমপরিমাণ অর্থ পুরস্কার পাবে।

আরও পড়ুন

ম্যাচের ফলের সঙ্গেও অর্থ পুরস্কার সম্পর্কিত। যেমন—একটি ম্যাচ জিতলে পাওয়া যায় ২৮ লাখ ইউরো (৩৫ কোটি টাকা), ড্র করলে দুই দলের প্রত্যেকে পায় ৯ লাখ ৩০ হাজার ইউরো করে (১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা)। আর হারলে স্বাভাবিকভাবেই কোনো অর্থ পুরস্কার থাকে না।

এক চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুম শেষে কোন ক্লাব কত টাকা আয় করবে, তা নির্ভর করে ‘মার্কেট পুলের’ ওপর। ‘মার্কেট পুল’ হলো গ্রুপ পর্বের অবস্থান, জয়ের বোনাস, সম্প্রচারস্বত্বের ভাগ এবং উয়েফা আয়োজিত টুর্নামেন্টের অতীত ফল থেকে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থ। সে হিসাবে বড় ক্লাব ও ছোট ক্লাবগুলোর আয়ে তারতম্য হয়। কারণ, উয়েফা আয়োজিত টুর্নামেন্টে অতীত পারফরম্যান্স দেখে যে অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়, তাতে বড় দলগুলোর আয় বেশি হয়।

আজ রাতে এই ট্রফির জন্য লড়বে রিয়াল মাদ্রিদ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
উয়েফা

রিয়াল যেহেতু রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন, তাই অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কারণেই সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করবে। রিয়াল চ্যাম্পিয়ন হলে পাবে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ইউরো (১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা), অতীতে সবচেয়ে বেশি সাফল্যের জন্য ‘মার্কেট পুলের’ তালিকায় সবার ওপরে থাকায় মোটা অঙ্কের টাকা পাবে। এর বাইরেও সম্প্রচারস্বত্বের ভাগ, গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসা এবং ম্যাচ জেতা ও ড্র করার জন্য টাকা তো পাবেই। সব মিলিয়ে রিয়ালের আয় গিয়ে ঠেকবে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ইউরোয় (১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা)।

আরও পড়ুন

তবে যেহেতু চ্যাম্পিয়নস লিগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড মাত্র একবারের চ্যাম্পিয়ন, অতীত রেকর্ডও রিয়ালের মতো সমৃদ্ধ নয় এবং এ মৌসুমে ২ ম্যাচ হেরেছে ও ৩টিতে ড্র করেছে, তাই জার্মান ক্লাবটি আজ শিরোপা জিতলেও ৭ কোটি ৭৯ লাখ ইউরোর (৯৯২ কোটি টাকার) বেশি আয় করতে পারবে না। আর ‘মার্কেট পুলে’ অবস্থান, সম্প্রচারস্বত্বের ভাগ ও অন্যান্য বিষয়াদি যোগ করলে ডর্টমুন্ডের আয় হবে ১০ কোটি ২১ লাখ ইউরো (১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা)।

রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন হলে সব মিলিয়ে তাদের আয় হতে পারে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ইউরো
রয়টার্স

তবে আজকের ফাইনালে জেতা–হারার সঙ্গে মজার একটা ব্যাপার সম্পর্কযুক্ত। যদি বলা হয়, ডর্টমুন্ড ফাইনালে জিতলেই আর্থিক দিক দিয়ে লোকসান গুনবে, আর হারলেই বরং লাভবান হবে! ব্যাপারটা কারও কারও কাছে হাস্যকর আবার অনেকের মতো চমকপ্রদ মনে হতে পারে। তবে যে যা–ই মনে করুন, এটাই বাস্তব।

কেন—কারণটা খোলাসা করা যাক। জুড বেলিংহাম এই মৌসুমে কোন দল ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন, মনে আছে নিশ্চয়! আজকের ফাইনালে রিয়ালের প্রতিপক্ষ ডর্টমুন্ড। বেলিংহামকে ডর্টমুন্ডের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে রিয়ালকে ১০ কোটি ৩০ লাখ ইউরো দিতে হয়েছিল। এর সঙ্গে সম্ভাব্য বিবিধ বোনাস। দলবদলের সেই চুক্তিপত্রের একটি অংশে লেখা ছিল, বেলিংহাম যদি রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিততে পারেন, তাহলে ডর্টমুন্ডকে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো (৩১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা) বোনাস দিতে হবে।

তার মানে, ডর্টমুন্ড আজ ফাইনাল জিতলে উয়েফার পক্ষ থেকে পাবে দুই কোটি ইউরো। কিন্তু তারা হেরে গেলে বেলিংহামের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রিয়ালের পক্ষ থেকে পাবে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। হারলেই বরং লাভ ৫০ লাখ ইউরো।

ডর্টমুন্ড কী করবে, সিদ্ধান্ত তাদের!