তিন ভূমিকায় শিরোপা, মোহামেডানে আলফাজ-কাব্য
মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি ক্লাবে ছিলেন না। ঘাড়ে ব্যথার জন্য থেরাপি নিতে একটু আগেই মতিঝিল ক্লাব ভবন ছেড়েছেন আলফাজ আহমেদ। কিন্তু তাঁর বুকেও তখন চলছে অদৃশ্য ধুকধুকানি। সমীকরণ ছিল পরিষ্কার—ফর্টিসের কাছে আবাহনী হারলেই ২৩ বছর পর দেশের শীর্ষ লিগ জিতবে মোহামেডান। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া পেশাদার লিগে এটাই হবে সাদা–কালোদের প্রথম শিরোপা।
সব জল্পনার শেষে, আবাহনী-ফর্টিস ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা হয়ে গেল—তিন ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। আর এর নেপথ্য নায়ক আলফাজ।
এই শিরোপা তাঁর জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তিনটি ভিন্ন ভূমিকায় মোহামেডানের হয়ে লিগ জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়েছেন তিনি—১৯৯৬ সালে খেলোয়াড় হিসেবে, ১৯৯৯ সালে অধিনায়ক হিসেবে, ২০০৫ সালে জাতীয় লিগ জেতেন অধিনায়ক হয়ে। আর এবার, ২০২৫ সালে কোচ হিসেবে এনে দিলেন পেশাদার যুগের প্রথম লিগ শিরোপা।
২০১৩ সালে এই মোহামেডানের জার্সিতেই পেশাদার ফুটবলে ইতি টানেন আলফাজ। ২০২০ সালে ক্লাবটিতে সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন। তখন প্রধান কোচ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শন লেন। লেনের পর দায়িত্ব পান শফিকুল ইসলাম মানিক। মোহামেডানের সময়টা তখন ভালো যাচ্ছিল না। ২০২৩ সালের লিগের দ্বিতীয় পর্বে সহকারী থেকে প্রধান কোচের দায়িত্ব পান আলফাজ। সেই মৌসুমেই জেতান ফেডারেশন কাপ—১৪ বছর পরে এই টুর্নামেন্ট জেতে সাদা–কালোরা। ২০২২-২৩ মৌসুমে সেই শিরোপা জয়ের পর ২০২৩-২৪ মৌসুমে লিগ, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে হয় রানার্সআপ। চলতি মৌসুমে চ্যালেঞ্জ কাপে আবারও রানার্সআপ। ফেডারেশন কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়।
তবে আজকের এই সাফল্য ছাপিয়ে গেল সব—২৩ বছরের অপেক্ষার অবসান, পেশাদার লিগে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর ফোনে ধরা হলে আবেগ লুকাতে পারেননি আলফাজ। বললেন, ‘২০২২-২৩ মৌসুমে যখন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিই, দল তখন ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্টে। সেখান থেকে দলকে এনে চতুর্থ করেছিলাম, ফেডারেশন কাপ জিতেছিলাম। এবার জিতলাম লিগ। মোহামেডানের যে ঐতিহ্য ছিল, সেটা ফিরিয়ে আনাই ছিল লক্ষ্য। কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পেরে গর্ব হচ্ছে। কারণ, এই ক্লাব থেকেই আমার পথচলা শুরু। আমার পরিচিতি, ভালোবাসা—সবকিছুই মোহামেডানময়।’
মোহামেডানের সঙ্গে আলফাজের এই যাত্রা দেশের ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকল।