রিয়াল মাদ্রিদের ব্যাজে রাজমুকুটের রহস্য
দৃশ্যটা খুবই সাধারণ, খুবই পরিচিত।
প্রথমবার ক্লাবের জার্সি পরার পর, মাঠের খেলায় ভালো একটা গোলের পর কিংবা শিরোপা জয়ের পর—জার্সিতে থাকা ক্লাব ব্যাজে পরম মমতায় একটা চুমু আঁকেন খেলোয়াড়েরা।
ধারে ও ভারে প্রকাণ্ড হয়ে ওঠা ক্লাবকে ক্ষণিক জড়িয়ে ধরার মাধ্যম যে ওই ব্যাজটাই। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে এমন দৃশ্যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে যেমন নিয়মিত দেখা যেত, দেখা যায় হালের ভিনিসিয়ুসদেরও।
১৪ বারের ইউরোপসেরা ক্লাবটির ব্যাজে একটা বিশেষত্ব আছে। এমসিএফ—তিনটি বর্ণের সমন্বয়ে তৈরি লোগোর সঙ্গে একটি রাজমুকুট আছে। স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে যা খুব বেশি ক্লাবের নেই।
কীভাবে রিয়াল মাদ্রিদের ব্যাজে যুক্ত হলো এই রাজমুকুট?
রিয়াল মাদ্রিদের জন্ম ১৯০২ সালে। তখন কিন্তু নামের সঙ্গে রিয়াল ছিল না। নাম ছিল মাদ্রিদ সিএফ বা মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব। এমসিএফ শব্দ তিনটির ডিজাইনে বদল আনা হয় ১৯০৮ সালে, যোগ করা হয় নীল রঙের ছাপ। তখনো রাজমুকুট ছিল না।
রাজমুকুট যুক্ত হয় ১৯২০ সালে, রাজা ত্রয়োদশ আলফনসো যখন ক্লাবটিকে ‘রয়্যাল’ উপাধি দেন।
বিশ্বজুড়ে মাদ্রিদ শহরকে তুলে ধরার জন্য ক্লাবের নামের সঙ্গে জুড়ে দেন রয়্যাল বা রিয়াল। তখন থেকে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রিয়াল মাদ্রিদ সিএফ। পরিবর্তিত নাম অনুসারে সংক্ষেপ করলে এমসিএফের আগে একটি ‘আর’ শব্দ যুক্ত হয়।
কিন্তু সেটি করতে গেলে ব্যাজে পরিবর্তন করতে হবে, যা চাচ্ছিলনা তখনকার কর্তৃপক্ষ। ব্যাজের মধ্যে ‘আর’ বা রয়্যাল যুক্ত করার চেয়ে একটি মুকুট পরিয়ে দেওয়াটাকে তারা ভালো মনে করে। এভাবেই রিয়াল মাদ্রিদের ব্যাজে যুক্ত হয়ে যায় রাজমুকুট।
তবে চল্লিশের দশকে স্পেনে রাজতন্ত্রের উৎখাত হলে রয়্যাল উপাধি এবং রাজমুকুটের ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হয়েছিল ক্লাবটিকে। নাম হয়ে যায় আগের মতো মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব, ব্যাজও হয়ে যায় মুকুটবিহীন। তবে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ শেষ হলে ১৯৪১ সালে আবারও মুকুট ফিরিয়ে আনা হয়, সেই সঙ্গে নামও।
এরপর রিয়াল মাদ্রিদের ব্যাজে আর বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ১৯৯৮ সালে অ্যাডিডাসের সঙ্গে চুক্তির কারণে নীল রঙের স্ট্রিপে বদল আনা হয়।
রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া স্পেনের প্রথম বিভাগে খেলা আরও ছয়টি দলের ব্যাজে রাজমুকুট আছে। ক্লাবগুলো হচ্ছে—রিয়াল সোসিয়েদাদ, রিয়াল বেতিস, রিয়াল ভায়াদোলিদ, সেল্তা ভিগো, রিয়াল মায়োর্কা ও এসপানিওল।