‘আরব সংস্কৃতি’ কে ভালোবেসে হাকিমি বদলালেন ইতিহাস

ম্যাচ জিতে মায়ের কাছে ছুটে যান হাকিমিছবি: টুইটার

ওই মুহূর্তে কী ভাবছিলেন আশরাফ হাকিমি? নতুন ইতিহাস লেখার চাপ তিনি কী একটুও অনুভব করেননি?

বোধ হয় না। অনুভব করলে কী আর ওই সময় ‘পানেনকা’ শটে বল জালে জড়াতে পারতেন! চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে পারফর্ম করার শিক্ষাটা হাকিমি সম্ভবত নিজের জীবন থেকেই পেয়েছেন। হাকিমিকে ফুটবলার বানাতে একটা সময় মাদ্রিদের রাস্তায় ফেরি করে মালামাল বিক্রি করতেন তাঁর বাবা, বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন তাঁর মা। এই গল্পটা তো অনেকেরই জানা।

হাকিমির ওই শটে কী ইতিহাস লেখা হলো, সেটা জানিয়ে রাখা ভালো। মরক্কো তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এর আগে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিল আটলাসের সিংহরা। হাকিমির জন্ম আরও ১২ বছর পর। মরক্কো চতুর্থ আফ্রিকান দেশ ও প্রথম আরব দেশ হিসেবে শেষ আটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।


ইতিহাস কিন্তু ভিন্নভাবেই লেখা হতে পারত। তাঁর শটে যে দেশটা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে, হতেই পারত কাতার বিশ্বকাপে সেই স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই হাকিমি। ফ্রান্সের হয়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পে একটা ভালো উদাহরণ হতে পারেন এখানে। এই ফুটবলার ফ্রান্সের হয়ে খেললেও, তাঁর নাড়িপোঁতা কিন্তু আফ্রিকাতেই। আর এক দেশে জন্ম, তবে খেলেন অন্য দেশের হয়ে—ফুটবলে তো এমনটা হরহামেশাই হয়।

আরও পড়ুন

কেন স্পেনের হয়ে না খেলে মরক্কোর হয়ে খেলছেন হাকিমির সামনে এই প্রশ্নই ওঠার সুযোগ ছিল না। কারণ তাঁর জন্মই তো স্পেনে। এমনকি স্পেন যুব দলে ডাকও পেয়েছিলেন। তবে সে ডাকে তিনি সাড়া দেননি।

দারুণ খেলছেন হাকিমি
ছবি: রয়টার্স

স্প্যানিশ পত্রিকা মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এর কারণটা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। আমার মনে হয়েছিল, এটি (স্পেন) আমার জন্য সঠিক জায়গা নয়। মানে আমি বাড়িতে যেভাবে থাকতাম, তেমনটা ছিল না। মরক্কান হওয়ায় আরব সংস্কৃতি আমার আপন ছিল।’

আরও পড়ুন

শুধু সেই ঠান্ডা মাথার পেনাল্টি নেওয়ার কারণেই তাঁকে নিয়ে এত কথা। মোটেই নয়। মরক্কোর হয়ে পুরো বিশ্বকাপেই পারফর্ম করেছেন এই রাইট ব্যাক। ক্লাবের হয়ে খেলার সময় শুধু ডান প্রান্তে ফেরারির গতিতে ছুটতে দেখা যেত হাকিমিকে। তবে বিশ্বকাপে তাঁর দলের জন্য তিনি দৌড়েছেন পুরো মাঠজুড়েই।

জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করতে কেন এত মরিয়া থাকেন হাকিমি। সে উত্তর অবশ্য তাঁর কথাতেই পাওয়া যায় ‘ক্লাব ফুটবলে খেলা মানে শুধু একটি শহরের জন্য খেলা। আর দেশের হয়ে খেলা মানে পুরো জাতির জন্য খেলা। এই খেলা মানে পূর্বপুরুষদের জন্য খেলা।’ মাত্র ৭ বছর বয়সে ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নজরে আসেন হাকিমি। খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। বর্তমানে খেলেন প্যারিস সেন্ট জার্মেই তথা পিএসজিতে।

হাকিমির নায়ক হওয়ার রাতে মরক্কো পেয়েছে আরও এক ‘চরিত্র’। যার নাম ইয়াসিন বুনু। স্পেনের পাবলো সারাবিয়া, কার্লোস সোলেরে ও সের্হিও বুসকেটসের পেনাল্টি শট রুখে দিয়ে তিনিই তো হাকিমির জন্য মঞ্চটা তৈরি করলেন।