ম্যারাডোনা নেই, বোকায় তবু অস্বস্তিতে রিকেলমে

ম্যারাডোনা–রিকেলমের সম্পর্কে হঠাৎ ফাটল ধরেছিলছবি : এএফপি

২৫ মার্চ ১৯৯৭। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে তারিখটির অন্য রকম একটি মাহাত্ম্য আছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা এই দিনেই তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।

ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি তিনি খেলতে নেমেছিলেন আর্জেন্টিনার ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের জার্সিতে, দলটির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিভার প্লেটের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তিনি বদলি হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। যখন মাঠ ছাড়েন, বোকা ১-০ গোলে পিছিয়ে। তাঁর জায়গায় মাঠে নেমেছিলেন হুয়ান রোমান রিকেলমে। তরুণ প্লেমেকার মাঠে নেমে খেলা ঘুরিয়ে দেন, বোকা ম্যাচ জেতে ২-১ গোলে। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকার বিদায়ের দিনে ভবিষ্যৎ এক তারার আবির্ভাবের ঢাক বাজালেন রিকেলমে।

বিদায়বেলায় রিকেলমেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ম্যারাডোনা। শুধু সেদিনের সেই জড়িয়ে ধরাই নয়, দুজনের সম্পর্কটা বেশ ভালোই ছিল। রিকেলমের খেলায় যে একটা অলস সৌন্দর্য ছিল, সেটার প্রশংসা অনেকবারই করেছেন ম্যারাডোনা। কতবার যে বোকার ভিআইপি বক্সে বসে রিকেলমের জন্য গলা ফাটিয়েছেন, সেটার হিসাব দেওয়াও মুশকিল।

২০১৫ সালে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেন রিকেলমে
ছবি : এক্স

ম্যারাডোনা ও রিকেলমে—দুজনকেই ভালোবাসেন বোকার সমর্থকেরা।
কিন্তু কোথা থেকে এক ঝড় এসে হঠাৎই ফাটল ধরায় দুজনের সম্পর্কে। সে ফাটল এতটাই বড় হয়ে যায় যে বন্ধ হয়ে যায় কথা বলা, মুখ–দেখাদেখিও বন্ধ।

দুজনের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পেছনের আসল কারণ কী, তা এখনো অনাবিষ্কৃতই। তবে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, ম্যারাডোনা ২০১০ বিশ্বকাপের দলে রিকেলমেকে রাখেননি বলেই দুজনের সম্পর্কটা দা-কুমড়া হয়ে উঠেছিল। রিকেলমেকে দলে না রাখার বিষয়ে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘তার অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে।’ এর কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে রিকেলমে বলেন, ‘আমার জন্য জাতীয় দলের অধ্যায় শেষ। বিশ্বকাপ দেখব টেলিভিশনে।’

আরও পড়ুন

২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বোকা জুনিয়র্স ছেড়ে রিকেলমে নাম লেখান ম্যারাডোনার আরেক সাবেক ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে। সেখানে এক মৌসুম খেলে ফুটবলকে বিদায় বলে দেন আর্জেন্টিনার সাবেক প্লেমেকার। ২০১৯ সালে আবার রিকেলমে বোকায় যান সংগঠক হিসেবে। সেবার বোকার ভোটে রিকেলমেকে হারাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন ম্যারাডোনা। কেন রিকেলমে ও তাঁর প্যানেলের কাউকে ভোট দেওয়া উচিত হবে না, সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা কথা বলেন আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক। রিকেলমে আর তাঁর প্যানেলকে অবশ্য ঠেকাতে পারেননি ম্যারাডোনা।

রিকেলমের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত তাঁর সমর্থকেরা
ছবি : এক্স

চরম এই বিরোধিতার শোধ রিকেলমে তোলেন ২০২০ সালে। ম্যারাডোনা তখন আর্জেন্টিনার ক্লাব জিমনাসিয়ামের কোচ। তাঁর দল নিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন বোকার মাঠে। সেখানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবার বেঁকে বসেন রিকেলমে। শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয় বোকা কর্তৃপক্ষকে। ম্যারাডোনা এখন আর নেই। ২০২০ সালেরই নভেম্বর মাসে না–ফেরার দেশে চলে গেছেন কিংবদন্তি ফুটবলার। কিন্তু বোকায় কি স্বস্তিতে আছেন রিকেলমে?

সংগঠক রিকেলমে আসলে স্বস্তিতে নেই বোকায়। এত দিন দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করা রিকেলমে এবার নিজেই প্রেসিডেন্ট হতে চান। নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মরিসিও মাকরি। দুজনের এ নিয়ে বিরোধ চলছে। চলছে কথার লড়াই। যার পথ ধরে আদালত নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ম্যারাডোনা বেঁচে না থাকলেও স্বস্তিতে নেই রিকেলমে।