‘অতীতের ভুল থেকে শিখুন সালাউদ্দিন’

সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররা চান সালাউদ্দিনের সাফল্য।ছবি: প্রথম আলো

টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। নির্বাচন শেষ হতেই কাল রাতে হোটেল সোনার গাঁওয়ে সভাপতিকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন জাতীয় দলের ফুটবলার মামুনুল ইসলাম, আশরাফুল রানাসহ অনেকে। সভাপতিকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মামুনুলরা নিজেদের প্রত্যাশার কথাও জানালেন কাজী সালাউদ্দিনের কাছে।

গত ১২ বছর ধরে বাফুফের সভাপতি হিসেবে আছেন সালাউদ্দিন। শুনতে হয়েছে নানা নেতিবাচক সমালোচনা। এবার নির্বাচনের আগে তো রীতিমতো তাঁর সরে যাওয়ার দাবি উঠেছিল। গতকাল নির্বাচনে ৯৪ ভোট পেয়ে আবারও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দেশের সাবেক এই তারকা ফুটবলার। নতুন মেয়াদে সালাউদ্দিনকে সফল দেখতে চান সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররা। তাঁদের কথা, খেলোয়াড়ি জীবনে যিনি আদর্শ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যাঁর ফুটবল জীবন এমন সাফল্যময়, তিনি কেন ব্যর্থ হবেন। গত ১২ বছরে নিজের সব ভুলভ্রান্তি শুধরে তিনি এবার মানুষের হৃদয় জয় করার কাজে মনোযোগ দেবেন বলেই বিশ্বাস আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, খুরশিদ আলম বাবুলের মতো সাবেকদের। বর্তমানের মামুনুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম রানাদেরও চাওয়া একই।

সালাউদ্দিনের নতুন মেয়াদে জাতীয় দলকে নিয়ে প্রত্যাশা সাবেকদের।
ছবি: প্রথম আলো

খুরশিদ আলম জাতীয় দলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে খেলেছেন, খেলেছেন আবাহনীতেও। তিনি চান, সালাউদ্দিন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন, ‘কাজী সালাউদ্দিন অতীতের যে সব ভুল ভ্রান্তি করেছেন সেসব শুধরে নিয়ে যদি নিষ্ঠার সঙ্গে ফুটবলের জন্য কাজ করেন, সেটিই আসল। আমার মনে হয় সেটা এবার তিনি করতে পারবেন। উনি খেলোয়াড়ি জীবনে মানুষের কাছে আদর্শ ছিলেন, সংগঠক হিসেবেও তাঁর এমন কিছুই করা উচিত যা মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয়। তিনি সফল হন, এটিই আমার চাওয়া।’

গত ১২ বছরে সালাউদ্দিনের দায়িত্বে একবারই সাফের সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। বাকি পাঁচ আসরে সাফের গ্রুপ পর্বই পার হতে পারেনি। সাফের শিরোপাটা যেন কাজী সালাউদ্দিন নিজের হাতে তুলে দিতে পারেন, সেটাই চাওয়া খুরশিদ আলমের, ‘বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান যখন দিনকে দিন নিচের দিকে যাচ্ছে তখন ধরে নিতে হবে মুখে যতোই বলি না কেন মাঠে আমরা ভালো করতে পারিনি। তাই আশা করি সালাউদ্দিন ভাই বিশ্বকাপে যাওয়ার স্বপ্ন না দেখিয়ে সাফ ফুটবলের শিরোপা উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখানোর কোনো দরকার নেই আমাদের।’

জম জমাট ঘরোয়া ফুটবল দেখা যাবে সালাউদ্দিনের নতুন মেয়াদে?
ফাইল ছবি

সত্তর-আশি-নব্বইয়ের দশকটা ছিল বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি অতীত। স্টেডিয়াম উপচে পড়ত দর্শকে। আবারও সেই দর্শক যেন মাঠে আসে এমনটাই চান সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, ‘সালাউদ্দিন ভাই ১২ বছর ফুটবলে ছিলেন। নতুন করে তাই বলার কিছু নেই। যেহেতু তিনি ভোটে পাস করে এসেছেন নিশ্চয় আমাদের চেয়ে বিজ্ঞ। তবে আগে যা হয়েছে সেটা ভুলে উনি কেমন করেন সেটা দেখার জন্য আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমি শুধু একটা কথায় বলব, ফুটবলটা গণমানুষে খেলা, গণমানুষের মধ্যে যেন আবারও সেটা বিস্তার লাভ করে। সত্তর, আশির দশকের ফুটবলটা আবারও আমি মাঠে দেখতে চাই।’

এমন গ্যালারিই চান সবাই।
ফাইল ছবি

সফল সালাউদ্দিনকে দেখার প্রত্যাশায় জাতীয় দলের গোলরক্ষক আশরাফুল রানা, ‘সালাউদ্দিন ভাইসহ যারা নতুনভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন। আসলে সালাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। একটা সংগঠনে সাফল্য ব্যর্থতা থাকতেই পারে। ব্যর্থতার যে জায়গাগুলো ছিল সেই জায়গা শোধরাতে হবে এবার। যাতে আমজনতা যেন এবার বলতে না পারে সালাউদ্দিন ভাই এটা করতে পারেননি, ওটা করতে পারেননি। আমরা এবার একজন সফল সালাউদ্দিন ভাইকে দেখতে চাই।’

‘সোনালী অতীত’ ফেরাতে পারবেন সালাউদ্দিন নতুন মেয়াদে?
সংগৃহীত ছবি

আরও একধাপ বাড়িয়ে বললেন জাতীয় দলের মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, ‘আমরা এবার বিশেষ কিছু চাই সালাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে। আমাদের জাতীয় দলের ফুটবলারসহ যারা পাইপলাইনে থাকবেন ওদের একটা চুক্তির ভেতর আনার দাবি করছি। একটা বেতন কাঠামোর ভেতরে যেন ৫০-৬০ জন ফুটবলার থাকে। ওরা মাসিক বেতন পেলে আরও ভালো ফুটবল খেলবে। এ ছাড়া জেলা লিগ, পাইওনিয়ার থেকে প্রথম বিভাগ সহ সব লিগ নিয়মিত চালু হতে হবে। যাতে ফুটবলাররা সারা বছর যেন একটা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে থাকে।’