অনুতাপের প্রশ্নে বার্সা সভাপতিকে দেখিয়ে দিলেন সুয়ারেজ

সুয়ারেজের বিদায় অনুষ্ঠানে বার্তোমেউ ছিলেন পাশে।ছবি: টুইটার

অবশেষে সব নাটকের শেষ হলো। সুন্দরভাবে না হলেও সমাপ্ত লুইস সুয়ারেজের ছয় বছরের বার্সেলোনা অধ্যায়। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর যাঁকে ৭৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডে লিভারপুল থেকে নিয়ে এসেছিল বার্সা, তাঁকে আজ বিদায় জানাল আনুষ্ঠানিকভাবে। তাঁর ভবিষ্যৎ গন্তব্যও চূড়ান্ত, বার্সার প্রতিপক্ষ আতলেতিকো মাদ্রিদ।

বিদায়ের ক্ষণে সুয়ারেজের আবেগ ধরা পড়েছে তাঁর চোখের জলে, তাঁর প্রতিটি শব্দে। তবে এর মধ্যেও ইঙ্গিতে যেন বার্সা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর প্রতি অভক্তিটা বুঝিয়ে দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। বার্সায় তাঁর কোনো অনুতাপ আছে কি না, প্রশ্নে মাথা বাঁকিয়ে যে পাশে থাকা বার্তোমেউর দিকে দেখিয়ে দিলেন সুয়ারেজ!

গত কদিনে তাঁর ক্লাব ছাড়া-না ছাড়া নিয়ে যত নাটক হয়েছে, কিংবদন্তিদের প্রতি বার্সেলোনার সম্মান দেখানো নিয়ে তাতে প্রশ্ন উঠেছে আরও বেশি। নতুন কোচ রোনাল্ড কোমান এসেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সুয়ারেজ তাঁর পরিকল্পনায় নেই। বার্সার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লাব ছাড়তে যাচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এরপরই। কিন্তু প্রথমে ঝামেলা বাঁধে বার্সার সঙ্গে সুয়ারেজের চুক্তিতে বাকি থাকা এক বছরের দফারফা নিয়ে। সেখানে সমঝোতা এল, এদিকে ঝামেলা বাঁধল সুয়ারেজের পরের গন্তব্য নিয়ে।

প্রথমে জুভেন্টাসের কথা শোনা গেলেও ইতালিয়ান ভিসা পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে জটিলতায় সে দলবদল ভেস্তে গেছে। এরপর আতলেতিকো সুয়ারেজের দিকে হাত বাড়ায়। দুই পক্ষে সমঝোতা হয়ে যাওয়ার পর বাধ সাধেন বার্সা সভাপতি বার্তোমেউ। সুয়ারেজের সঙ্গে সমঝোতায় প্রথমে পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ—এই চার ক্লাবে সুয়ারেজ যাবেন না ঠিক হলেও বার্তোমেউ এসে শেষ মুহূর্তে দাবি করেন, তালিকায় আতলেতিকোকেও যোগ করতে হবে। কিন্তু সুয়ারেজের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সে ঝামেলাও মেটে। কালই আতলেতিকো আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানিয়ে দেয়, সুয়ারেজ তাদের নতুন খেলোয়াড়।

ক্যাম্প ন্যু-তে আজ সুয়ারেজের আনুষ্ঠানিক বিদায় অনুষ্ঠানে ছিলেন লিওনেল মেসি, সের্হিও বুসকেতস, জেরার্ড পিকেরা। সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। অনুষ্ঠানে শুরুতে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বার্তোমেউ অবশ্য সুয়ারেজকে প্রশংসায়ই ভাসিয়েছেন। জানিয়ে দেন, ‘বার্সা সব সময়ই তোমার বাড়ি থাকবে। যেদিন তুমি ফুটবলকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেবে, আশা করি সেদিন আমরা তোমাকে সম্মান জানিয়ে একটা ম্যাচের আয়োজন করতে পারব। ততদিনে এই মহামারিও চলে গেলে সব সমর্থককে নিয়ে তোমাকে বিদায় জানাতে পারব।’

বার্সায় ১৯৮ গোল, ১৩ শিরোপা আর মেসি-নেইমারসহ অনেক বন্ধুত্বের স্মৃতি রেখে যাওয়া সুয়ারেজ কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তাঁর। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির জর্জো কিয়েল্লিনিকে কামড়ানোর পরও বার্সা যে তাঁর ওপর ভরসা রেখেছে, সে জন্য বার্সাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুয়ারেজ। ‘একজন খেলোয়াড় শুধু নয়, অনেক আবেগ নিয়ে একজন মানুষ বিদায় নিচ্ছে। এটা কঠিনই। আমি শুধু ভালোটুকুই মনে রাখব। এটা মনে রাখব যে আমার সন্তানেরা তাদের বাবাকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা দলে খেলতে দেখেছে’—আবেগী সুয়ারেজের কথা।

বার্সায় তাঁর আগের ছয় বছরের কথা স্মরণ করলে আবেগটা যদি হয় সুখের, গত কিছুদিনে সেখানে তিক্ততাই বেশি। সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গগুলোও এসেছে। কোমানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সুয়ারেজের অবশ্য তেমন খেদ নেই, ‘এমন কিছু হবে ধরেই নিয়েছিলাম। তিনি (কোমান) আমাকে জানানোর আগেই এমন কিছু বলাবলি হচ্ছিল। সরে যেতে আমার আপত্তি ছিল না। তবে পরের ক্লাব খুঁজে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টাতে এখানেই অনুশীলন করে যেতে চেয়েছিলাম। কোমান তাতে সম্মত হয়েছেন।’ আতলেতিকো কেন বেছে নিয়েছেন, ‘এল পিস্তলেরো’ দিয়েছেন সেই ব্যাখ্যাও, ‘একটু অন্যরকম শোনাতে পারে, তবে যখন বার্সেলোনাকে আমাকে দলবদলের তালিকায় রেখেছিল, অনেক প্রস্তাবই ছিল আমার কাছে। আমি এমন একটা দলে যেতে চেয়েছিলাম যেখানে আমি বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।’

এরপরই এল বার্তোমেউর প্রতি সেই ইঙ্গিত। সুয়ারেজের উদ্দেশে প্রশ্নটা ছিল, বার্সেলোনায় আপনার কোনো অনুতাপ আছে কি না। উত্তরের শুরুতে মজার ছলেই বার্তোমেউকে একটা খোঁচা মেরেছেন সুয়ারেজ। মঞ্চে শুধু সুয়ারেজ আর বার্তোমেউই ছিলেন, সুয়ারেজের ডানদিকে বার্তোমেউ। সুয়ারেজ প্রশ্নটা শুনে বললেন, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, নাকি...’ বলতে বলতে মাথাটা ডানদিকে হেলিয়ে ইঙ্গিত করেন বার্তোমেউর দিকে, মুখে হাসি।

বার্সায় সুয়ারেজ সব সময়ই পাশে পেয়েছেন মেসিকে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

পরে অবশ্য অনুতাপের ফিরিস্তি দিয়েছেন এভাবে, ‘নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ নেই। আমি হালকা ব্যথা, চোট নিয়ে খেলেছি। কিন্তু আত্মসমালোচনায় গেলে বলতে হয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে একের পর এক বিদায়ে আমরা যত ভুল করেছি...এমনটা একবার, দুবার, তিনবার হয়েছে।’
গত কয়েক মৌসুমে বার্সেলোনার সবারই আক্ষেপ সেটি।