অন্তত একটা শিরোপা দেখতে পাচ্ছেন নেইমার–এমবাপ্পেরা

দলের পঞ্চম পেনাল্টি নিয়েছেন নেইমার।ছবি: রয়টার্স

তিন মৌসুম পর লিগের শিরোপাটা বুঝি হাতছাড়া হয়েই গেছে। লিগে বাকি আর দুই ম্যাচ, তাতে শীর্ষে থাকা লিল ৪ পয়েন্ট পেলেই পিএসজির আর শিরোপা জেতা হবে না। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপার স্বপ্ন জাগানো যাত্রাও থেমে গেছে সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরে। নেইমার-এমবাপ্পের পিএসজি এবার কি তাহলে বড় কোনো শিরোপাহীন থাকবে?

এখনো সে উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি। তবে অন্তত একটা শিরোপা নিয়ে মৌসুম শেষ করার কাছাকাছি চলে এসেছে পিএসজি। উঠে গেছে ক্যুপ দো ফ্রান্সের ফাইনালে। রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনালে কাল মঁপলিয়ের মাঠে নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতার পর পিএসজি টাইব্রেকারে জিতেছে ৬-৫ ব্যবধানে।

ম্যাচে নেইমার শুরু থেকে খেলেননি, পিএসজির দুটি গোলই করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। আগামী ১৯ মে ফাইনালে পিএসজির প্রতিপক্ষ হবে আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মোনাকো ও চতুর্থ বিভাগের দল রুমিই ভাইয়েখের মধ্যে জয়ী দল।

ফাইনালে উঠে দুটি রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছে পিএসজি। এ নিয়ে ফ্রেঞ্চ কাপের ইতিহাসে ১৯তম ফাইনালে উঠেছে লে পারিসিয়েনরা, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে মার্শেইয়ের গড়া রেকর্ডের সমান। এই ১৯বারের মধ্যে ৭বারই পিএসজি উঠেছে সর্বশেষ সাত মৌসুমে, টানা ফাইনালে ওঠার রেকর্ডে পিএসজিই সবার ওপরে।

রেকর্ডের পথে অবশ্য পিএসজিকে ধুঁকতে হয়েছে বেশ। মৌসুমজুড়েই অবশ্য এবার পিএসজির পথচলা মসৃণ হয়নি, ফাইনালে ওঠাও তেমনই রইল। নেইমারকে বেঞ্চে রেখে পাবলো সারাবিয়া, মাউরো ইকার্দি ও এমবাপ্পেকে নিয়ে ৪-৩-৩ ছকের আক্রমণভাগ সাজিয়েছিল পিএসজি। এঁদের পেছনে বলের জোগান দিতে মাঝমাঠের তিনে ছিলেন রাফিনিয়া, পারেদেস ও গেয়ে।

পিএসজির দুই গোলই এমবাপ্পের।
ছবি: রয়টার্স

এই দল নিয়েই ম্যাচে অনেক সুযোগ তৈরি করেছে পিএসজি। বলের দখল ৬৩ শতাংশ রেখে শট নিয়েছে ২৩টি। কিন্তু এর শুধু দুটি কাজে লাগাতে পারা আর রক্ষণে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার কারণেই ম্যাচটা গড়িয়েছে টাইব্রেকারে।

হাঁটুর চোট কাটিয়ে ফিরে দারুণ খেলা এমবাপ্পে দুবার এগিয়ে দিয়েছিলেন পিএসজিকে। ১০ মিনিটে ইদ্রিসা গেয়ের থ্রু ধরে দারুণ গতিতে দুই ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে প্রথম গোল, বিরতির পাঁচ মিনিট পর পাল্টা আক্রমণ থেকে দ্বিতীয়টি। কিন্তু গায়েতান লোমবার্দের গোলে বিরতির আগেই প্রথমবার সমতা ফেরানো মঁপলিয়ে ৮৩ মিনিটে দ্বিতীয়বার সমতা ফেরায় অ্যান্ডি ডেলর্টের গোলে। ততক্ষণে এমবাপ্পেকে তুলে নিয়েছিলেন পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো, আর দল দ্বিতীয় গোল খাওয়ার পর নামান নেইমারকে।

কিন্তু এরপরও ম্যাচটা হয়ে রইল পিএসজির সুযোগ তৈরি আর সেগুলো কাজে লাগাতে না পারার গল্প। প্রথমার্ধে এমবাপ্পের গোলের পর দুবার এমবাপ্পে ও ইকার্দিকে গোলবঞ্চিত করেন মঁপলিয়ে গোলকিপার। দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক মঁপলিয়ে দু-একবার পিএসজির রক্ষণে ভয় ধরিয়েছে বটে, পিএসজি গোলকিপার কেইলর নাভাসকে দু-একবার গোল বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে এদিক-সেদিক, কিন্তু পিএসজির সুযোগ হারানোর তুলনায় তা হয়তো কিছুই নয়।

মাঠে থাকার সময়টুকু জুড়ে মঁপলিয়ে রক্ষণে ত্রাস ছড়ানো এমবাপ্পে দারুণ দুটি সুযোগ হারিয়েছেন, একবার প্রতিপক্ষের চাপের মধ্যেও শরীরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে নেওয়া তাঁর শট ফিরিয়েছেন মঁপলিয়ে গোলকিপার। সারাবিয়া নষ্ট করেছেন দারুণ একটি সুযোগ। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে একেবারে যোগ করা সময়েও ইকার্দির একটা শট মঁপলিয়ে রক্ষণ ফিরিয়েছে গোললাইন থেকে।

এরপর টাইব্রেকারে দম বন্ধ করা উত্তেজনা। প্রথম পাঁচ শটে দুই দলের সবাই গোল করেছেন। পিএসজির হয়ে আনহেল দি মারিয়া প্রথম শট নিয়েছেন, শেষটি নেইমার। এর মাঝে একে একে বল জালে জড়িয়েছেন ইউলিয়ান ড্রাক্সলার, লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও মারকিনিওস। কিন্তু ষষ্ঠ শটে এসে মঁপলিয়ের জুনিয়র সাম্বিয়া গোল করতে ব্যর্থ, সুযোগটা দুহাতে নিয়ে পিএসজিকে ফাইনালে তুলে দিয়েছেন মইজে কিন।

মঁপলিয়ের দ্বিতীয় গোলের ঠিক এক মিনিটে আগে, ৮২ মিনিটে বদলি হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া এমবাপ্পে পুরো টাইব্রেকার নাটকটা দেখেছেন বেঞ্চে বসে। এই অসহায় হয়ে থাকাটা ভালো লাগছিল না তাঁর, ‘সাইডলাইন থেকে বসে শুটআউট দেখা স্নায়ুর জন্য ভীষণ চাপের। শেষ পর্যন্ত ট্রফিটা ধরে রাখার সুযোগ আমরা তৈরি করতে পেরেছি, এটাই ভালো লাগছে। গত কয়েক ম্যাচের চেয়ে আজ ভালো খেলেছি। তবে এভাবে প্রতিপক্ষকে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া থামাতে হবে আমাদের।’

মঁপলিয়ের রক্ষণে ত্রাস ছড়িয়েছেন এমবাপ্পে।
ছবি: রয়টার্স

লিগে সর্বশেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষকে এভাবে ফিরে আসতে দিয়েছে পিএসজি। গত রোববার রেনের মাঠে ১-১ গোলে ড্র পিএসজির লিগ স্বপ্ন বলতে গেলে শেষই করে দিয়েছে। লিগে ৩৬টি করে ম্যাচ শেষ, আর দুটি করে ম্যাচ বাকি। তাতে শীর্ষে থাকা লিলের পয়েন্ট ৭৯, দুইয়ে থাকা পিএসজির ৭৬।

এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত একটা শিরোপাই জিতেছে পিএসজি, সেটিও ‘ত্রফি দে শাম্পিওন।’ ইংল্যান্ডের কমিউনিটি শিল্ডের মতো ‘প্রীতি ম্যাচের টুর্নামেন্ট’ মর্যাদা পাওয়া এই ট্রফিকে বড় ট্রফির স্বীকৃতি কেউ দেন না। তারওপর খেলোয়াড়দের ধকল কমানোর জন্য, স্পেন-জার্মানি-ইতালির মতো ঘরোয়া সর্বোচ্চ দুটি টুর্নামেন্ট রাখার জন্য এই মৌসুম থেকে ফ্রান্সের লিগ কাপ বা ক্যুপ দো লা লিগ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে, যে ট্রফিটা গত বছর জিতেছে পিএজি। এবার সেটিও নেই।

চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমিফাইনালে বাদ পড়া পিএসজি লিগও না জিতলে মৌসুমে শিরোপার একমাত্র আশা হয়ে তো এই ফ্রেঞ্চ কাপ বা ক্যুপ দো ফ্রান্সই থাকল!