অবশেষে স্বস্তির আনন্দ মারিও লেমোসের

অবশেষে শিরোপার স্বাদ পেলেন মারিও লেমোসছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতা কাপের ট্রফিটা তখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি মারিও লেমোসের। দানিয়েল কলিনদ্রেস, ডরিয়েলতন গোমেজ, নাবিব নেওয়াজরা গলায় পদক ঝুলিয়ে, ট্রফিটা মাথার ওপর তুলে ছুটলেন আবাহনীর গ্যালারির দিকে। কোচও ফুটবলারদের পেছনে উদ্‌যাপনের মিছিলে শামিল হতে দৌড় দিলেন।

তিন মৌসুম ধরে আবাহনীর ডাগআউটে কোচের দায়িত্বে আছেন এই পর্তুগিজ কোচ। কিন্তু শিরোপা তো দূরে থাক, কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালেই উঠতে পারেনি আবাহনী। বিবর্ণ আবাহনী সর্বশেষ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে হয়েছে তৃতীয়।

মারিও লেমোস
ছবি: প্রথম আলো

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে আজ বসুন্ধরা কিংসকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আবাহনী। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোচের আনন্দ ছিল বাঁধনহারা। ফুটবলাররা কোচকে মাথার ওপর তুলে একদফা নাচিয়েছেন। সেই ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম স্বাধীনতা কাপের মুকুট ফিরে পেল আবাহনী।

৩৫ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ কোচ আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করায় স্বস্তি ফিরে পেলেন, ‘অবশ্যই আমার কাছে এই ট্রফি বিশেষ কিছু। তিন বছরের মধ্যে এক বছর করোনায় পার হয়েছে, এর মধ্যেও অনেক পরিশ্রম করেছি আমরা। যখন আপনি ট্রফি না জিতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়ে শেষ করবেন বা টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়বেন, তখন সেটা বড় হতাশার ব্যাপার হবে। এখন মনে হচ্ছে, আমার কাজের স্বীকৃতি পেলাম। এই জয় আমার জন্য অনেক বড় স্বস্তির।’

প্রথম গোলেই শিরোপার স্বাদ পেলেন রাকিব (সামনে)
ছবি: প্রথম আলো

ফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবেননি কোচ, ‘গত বছরে বসুন্ধরা কিংস টানা শিরোপা জিতেছে। গতবারের চেয়ে আমাদের এবারের দল আরও শক্তিশালী। খারাপ বা ভালো হোক, আমরা সব সময় খেলোয়াড় পরিবর্তন করে খেলিয়েছি। আমরা টুর্নামেন্ট জিততেই চেয়েছিলাম। সেটা পেরেছি।’

চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে এবারের মৌসুমে আবাহনীতে যোগ দিয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছেন রাকিব হোসেন। টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠলেন রাকিব। আজই প্রথম গোল পেলেন, শিরোপাও জিতলেন। রোমাঞ্চিত রাকিব বলছিলেন, ‘আমাদের যারা খেলেছে, যারা খেলেনি—সবাই পরিবারের মতো। আমরা শুধু চেয়েছিলাম শিরোপা জিততে। সেটা আমরা করতে পেরেছি। আবাহনীর জার্সিতে প্রথম গোল, ভীষণ আনন্দ লাগছে। কয়েকটা ম্যাচ ধরেই চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু হচ্ছিল না। আমি একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ফাইনালে গোল করতে পেরেছি, খুব ভালো লাগছে।’

জোড়া গোল করেছেন আবাহনীর ডরিয়েলতন (ডানে)
ছবি: প্রথম আলো

গ্রুপ পর্বে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে ২ গোল করেছিলেন ডরিয়েলতন। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে কোনো গোল পাননি। সেমিফাইনালে তাঁর বদলে কোচ খেলিয়েছিলেন নাবিব নেওয়াজকে। আজ ফাইনালে নাবিব নেওয়াজের বদলে কোচ একাদশে রাখেন ডরিয়েলতনকে। আর কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে বসুন্ধরার বিপক্ষে করেছেন গুরুত্বপূর্ণ দুটি গোল। চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন। হয়েছেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। ম্যাচ শেষে ডরিয়েলতন ছিলেন উচ্ছ্বসিত, ‘আমি কতটা আনন্দিত, নিশ্চয় আমার চেহারা দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। আমি গোল পেয়েছি, দল জিতেছে। এ জন্য খুবই খুশি আমি। স্বাধীনতা কাপের এই ট্রফি মৌসুমের বাকি সময়ে আমাদের দলের সবাইকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করবে।’

স্বাধীনতা কাপের মুকুট হারিয়ে হতাশ বসুন্ধরা কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন। জনাথন ফার্নান্দেজ, তপু বর্মণ ও কাজী তারিক রায়হানের মতো খেলোয়াড়দের চোটের কারণে ফাইনালে পাননি আজ। এরপর আজ ৩০ মিনিটে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন আতিকুর রহমান। ‘চোটের কারণে তিন খেলোয়াড় না থাকাটাই আমাদের ভুগিয়েছে। সোহেল রানা (স্বাধীনতা কাপে নৌবাহিনীতে খেলতে হয়েছে) থাকলেও জনাথনের জায়গায় ওকে খেলাতে পারতাম। আসলে আমাদের ভাগ্যই খারাপ,’ বলেছেন ব্রুজোন।