অলিম্পিক নিয়ে স্বপ্ন দেখতে বললেন সাবের চৌধুরী

মনোয়ার আনিস খানের ‘মেয়েরাও পারে’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হলো আজছবি: প্রথম আলো

অলিম্পিকে এ পর্যন্ত দশবার অংশ নিলেও কোনো পদক জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ভবিষ্যতে অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হলে মেয়েদের ক্রিকেট দিয়ে অলিম্পিকে পদক আনা সম্ভব, অন্তত এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

সম্প্রতি অলিম্পিকে আবারও ক্রিকেট ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে আইসিসি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল)। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে পুরুষ ও নারী দুই বিভাগেই দেখা যেতে পারে ক্রিকেট। ওই অলিম্পিকে মেয়েদের দিয়ে একটা পদক আনার স্বপ্ন দেখেন সাবের হোসেন চৌধুরী। আজ ঢাকা ক্লাবে মনোয়ার আনিস খানের (মিনু) লেখা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট–সম্পর্কিত বই ‘মেয়েরাও পারে’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাবের হোসেন চৌধুরী তাঁর অলিম্পিক স্বপ্নের কথা শোনালেন, ‘অলিম্পিকে এ পর্যন্ত আমরা কোনো পদক পাইনি। আমি মনে করি, নারী ক্রিকেটে আমরা প্রথম পদকটি পেতে পারি। আমরা যদি এখন থেকে সেভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করি এবং যদি মেয়েদের সঠিক পরিচর্যা করতে পারি, তাহলে অলিম্পিকে পদক জেতা সম্ভব।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটের টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে বিসিবি সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর প্রথম বোর্ড সভায় তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা সবাইকে বলেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল টেস্ট মর্যাদা। শেষ পর্যন্ত ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ লাভ করে টেস্ট মর্যাদা।

মেয়েদের ক্রিকেট নিয়েও তেমন স্বপ্ন দেখার কথা বললেন সাবের হোসেন চৌধুরী, ‘আমাদের সমস্যা দৃষ্টিভঙ্গিতে, মন–মানসিকতায়। এ জন্য আগে আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন দেখার সাহস থাকতে হবে।’

২০১৮ সালে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের ক্রিকেট একটা জায়গায় থমকে গেছে বলেই মনে হয়েছে তাঁর, ‘আমরা মেয়েদের ক্রিকেটে সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। এ জন্য অনেক পরিকল্পনা করতে হবে। ই-কমার্স, বিমা, ব্যাংক এদের পৃষ্ঠপোষকতায় আনতে হবে। এনবিআরের কাছ থেকে চিঠি আনতে হবে যাতে স্পনসরদের ট্যাক্স মওকুফ করা যায়। বিসিবিতে বর্তমানে কয়েক শ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট আছে। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা না পেলে এটা সম্ভব হতো না। টেস্ট মর্যাদা না পেলে আমাদের সরকারের ওপর নির্ভর করতে হতো। একইভাবে নারী ক্রিকেটেও স্বপ্ন দেখি অলিম্পিকে পদক জেতার। কারণ, এই মেয়েদের সম্ভাবনা আছে ভালো কিছু করার।’

সাবের হোসেন চৌধুরী মনে করেন মেয়েদের সম্ভাবনা আছে ভালো কিছু করার
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েদের পথচলা শুরু ২০০৭ সালে। কিন্তু এর আগে ১৯৮৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় দলের বিপক্ষে ইডেনে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। মনোয়ার আনিস খান তাঁর লেখা বইয়ে তুলে এনেছেন বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের বিবর্তনের ইতিহাস। বিসিবির নারী উইংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ার আনিস খান বইটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখেন, ‘আমাদের মেয়েরা অনেক দিন থেকে ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু তাদের সব কার্যক্রম কোথাও লেখা নেই। আমরাও হারিয়ে গেছি। আবার আমাদের প্রজন্মও হারিয়ে যাওয়ার পথে। সালমারা যেসব অর্জন করেছে, এগুলোর রেকর্ড রাখা দরকার। সবকিছুর পেছনেই ইতিহাস থাকে। সেই ইতিহাসকেও সামনে এনেছে এই বই । কখন কোথা থেকে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের শুরু, নতুন প্রজন্মের সবাই জানতে পারবে এই বইয়ের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে নারী ক্রিকেটের অবদান রাখতে এই বই ভূমিকা রাখবে। এই বইয়ের মধ্যে থেকে মেয়েরা অনুপ্রেরণা পাবে।’ বইটির ইংরেজি সংস্করণ করে সেটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান।

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন সাবের হোসেন চৌধুরী ও মেয়েদের ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক মোছারাত কবির আইভি। উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক, সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাশেম, ইশতিয়াক আহমেদ, বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম, বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, সাবেক নারী ক্রিকেটার কামার আফরোজ লাভলী, আফসানা আক্তার, পারভীন নাসিমা নাহার পুতুল, পাপিয়া হক প্রমুখ।