অস্ট্রিয়া: একটা জয়ের খোঁজে...

অস্ট্রিয়া দলছবি : টুইটার
কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।

এবার তৃতীয়বারের মতো ইউরো খেলবে অস্ট্রিয়া। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, প্রতিবারই মোটামুটি ভালো মানের কিছু খেলোয়াড় নিয়ে ইউরোয় এলেও কখনো প্রথম রাউন্ড পার হতে পারেনি তারা। সে হিসাবে এবার অন্তত এক ম্যাচ জিতলেও ইউরোয় সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে অস্ট্রিয়ার জন্য। গ্রুপে যেহেতু উত্তর মেসিডোনিয়া ও ইউক্রেনের মতো দল আছে, জয় না পাওয়াই হবে বরং আশ্চর্যের।

কিন্তু যে দলে ডেভিড আলাবা, মার্সেল সাবিৎসার, স্তেফান ইলসাংকার ও মার্কো আরনাউতোভিচের মতো প্রতিভাবান কিছু খেলোয়াড় আছেন, তাঁরা সহজ গ্রুপ পেয়ে শুধু একটি জয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন কেন?

দল: অস্ট্রিয়া

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ২৩

দলে আছেন যাঁরা

গোলকিপার

আলেক্সান্ডার শ্লাগার (এলএএসকে), ড্যানিয়েল বাখম্যান (ওয়াটফোর্ড), পাভাও পারভান (ভলফসবুর্গ)

সেন্টারব্যাক

আলেক্সান্দার দ্রাগোভিচ (বায়ার লেভারকুসেন), মার্টিন হিন্টেরেগার (আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট), স্তেফান পশ (হফেনহেইম), ফিলিপ লিনহার্ট (ফ্রেইবুর্গ), মার্কো ফ্রিডল (ভেরডার ব্রেমেন)

রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক

স্তেফান লাইনার (বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ), ক্রিস্টোফার ট্রিমেল (উনিয়ন বার্লিন)

মার্ক আরনাউতোভিচ
ছবি : টুইটার

লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক

আন্দ্রেয়া উলমার (রেড বুল সালজবুর্গ)

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার

ডেভিড আলাবা (রিয়াল মাদ্রিদ), ইউলিয়ান বমগার্টলিঙ্গার (বায়ার লেভারকুসেন), স্তেফান ইলসাংকার (আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট), ফ্লোরিয়ান গ্রিলিটশ (হফেনহেইম), জাভের শ্লাগার (ভলফসবুর্গ), কনরাড লাইমার (লাইপজিগ)

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার

লুইস শোয়াব (লুজার্ন), ক্রিস্তফ বমগার্টনার (হফেনহেইম)

উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার

আলেসসান্দ্রো শোফ (শালকে ০৪), ভ্যালেন্তিনো লাজারো (বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ), মার্সেল সাবিৎসার (আরবি লাইপজিগ), মিকায়েল গ্রেগোরিটশ (অগসবুর্গ)

স্ট্রাইকার

মার্কো আরনাউতোভিচ (সাংহাই পোর্ট), সাশা কালায়জিচ (স্টুটগার্ট), করিম ওনিসিও (মেইঞ্জ)

কোচ ফ্রাঙ্কো ফোডা
ছবি : টুইটার

কোচ

ফ্রাঙ্কো ফোডা

অধিনায়ক

ইউলিয়ান বমগার্টলিঙ্গার

ইউরোয় সেরা সাফল্য

গ্রুপপর্ব (২০০৮, ২০১৬)

গ্রুপে প্রতিপক্ষ

উত্তর মেসিডোনিয়া (১৩ জুন)

নেদারল্যান্ডস (১৭ জুন)

ইউক্রেন (২১ জুন)

ডেভিড আলাবাই দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়
ছবি : টুইটার

শক্তি

সবচেয়ে বড় শক্তি দলগত প্রেসিং ফুটবল। রক্ষণ থেকে মাঝমাঠ, সবাই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বিস্তার করে খেলায় পারদর্শী। প্রতিপক্ষকে তারা বেশিক্ষণ বল পায়ে রাখতে দেয় না। ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে ৪০৪ বার বল প্রতিপক্ষের কাছ থেকে উদ্ধার করে রেকর্ড গড়েছে অস্ট্রিয়া। মিডফিল্ডার ও উইংব্যাকদের প্রাণশক্তি অফুরন্ত। আলাবা, সাবিৎসার, লাইমার, লাইনার, ইলসাংকারের মতো খেলোয়াড়েরা প্রতিপক্ষের ঘুম হারামের কারণ হতে পারেন। স্টুটগার্টের দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার সাশা কালায়জিচ আশা জোগাচ্ছেন। বুন্দেসলিগার সবচেয়ে লম্বা এ খেলোয়াড় নিয়মিত গোল করে দলের গোল–খরা মেটাবেন, এটাই আশা।

দুর্বলতা

দলের সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা একজন নির্ভরযোগ্য গোলদাতার অনুপস্থিতি। উইঙ্গার কিংবা স্ট্রাইকারদের কেউ নির্ভরযোগ্য গোলদাতা নন। প্রথমে গোল খেলে কীভাবে পরে ফিরে আসা যায়, সেটাও এই দলের কাছ থেকে তেমন দেখা যায়নি। বড় মঞ্চে এখনো অধিকাংশ খেলোয়াড় নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি।

অস্ট্রিয়ার সম্ভাব্য একাদশ
ছবি : সংগৃহীত

সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৪-২-৩-১)

তিনজন ডিফেন্ডার নিয়ে মাঝেমধ্যে দলকে খেলালেও কোচ ফ্রাঙ্কো ফোডা মূলত ৪-২-৩-১ ছকেই দলকে খেলাতে পছন্দ করেন। অস্ট্রিয়ার হয়ে গত কয়েক বছর মূল গোলকিপার হিসেবে আলেক্সান্ডার শ্লাগার ও পাভাও পারভান খেললেও ওয়াটফোর্ডের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মের জন্য ড্যানিয়েল বাখমানকে মূল একাদশে জায়গা করে দিতে পারে।

তবে যে কৌশলেই ফোডা দলকে খেলান না কেন, বায়ার্ন মিউনিখ থেকে সদ্যই রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া ডেভিড আলাবাকে কোথায় খেলাচ্ছেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় এক যুগ ধরে লেফটব্যাক, লেফট উইংব্যাক, সেন্টারব্যাক, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, ওয়াইড মিডফিল্ডার, লেফট উইঙ্গার—সব পজিশনে খেলে যাচ্ছেন আলাবা। ক্লাবে ডিফেন্ডার হিসেবে খেললেও জাতীয় দলে খেলেন আরও সামনে। নির্দিষ্ট কোনো পজিশনে নেই তাঁর। গত তিন ম্যাচেই খেলেছেন তিনটি আলাদা পজিশনে।

মার্সেল সাবিৎসার
ছবি : টুইটার

আলাবা যদি লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলেন, তাহলে লেফটব্যাক হিসেবে খেলানো হবে সালজবুর্গের উলমারকে। কিন্তু লেফটব্যাক হিসেবে খেললে জায়গা হারাবেন উইলমার, তখন লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলতে পারেন মার্কো আরনাউতোভিচ কিংবা ক্রিস্টোফ বমগার্টনার। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেললে জায়গা হারাতে পারেন স্তেফান ইলসাংকার কিংবা ইউলিয়ান বমগার্টলিঙ্গারের মধ্যে একজন।

অর্থাৎ আলাবার অবস্থানের ওপর লেফটব্যাক উলমার, মিডফিল্ডার ইলসাংকার, বমগার্টলিঙ্গার, উইঙ্গার বমগার্টনার ও শোফ, স্ট্রাইকার অরনটোভিচ, মিডফিল্ডার কনরাড লাইমার, জাভের শ্লাগারদের মূল একাদশে জায়গা পাওয়া ও পজিশন নির্ভরশীল। তবে যে-ই খেলুন না কেন, একটি বিষয় নিশ্চিত অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে যেকোনো প্রতিপক্ষেরই প্রচুর ‘প্রেস’ মোকাবিলা করতে হবে। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় হয় জার্মান লিগে খেলেছেন বা খেলছেন, প্রত্যেকেই প্রেসিংনির্ভর খেলা বেশ ভালোই খেলতে পারেন।

‘আমাদের মনোভাব বেশ ইতিবাচক। কেননা, আমাদের এই দলকে যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, সেটা তারা পূরণ করতে পেরেছে। এখন অস্ট্রিয়ার ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ইউরোতে একটা ম্যাচ জয়ের হাতছানি তাদের সামনে’
ফ্রাঙ্কো ফোডা, অস্ট্রিয়া কোচ

প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

অস্ট্রিয়ার গ্রুপ তুলনামূলক সহজ। সে হিসেবে অন্ততপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা তারা করতেই পারে। কিন্তু কোচ ফ্রাঙ্কো ফোডার সাবধানী কৌশল ও স্ট্রাইকারদের গোলহীনতার কারণে সেই প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না-ও ঘটতে পারে।