আট গোলের রোমাঞ্চ জিতে শেষ আটে স্পেন

মিকেল ওইয়ারসাবালের (ডানে) গোলে ৫–৩ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর স্প্যানিশদের উদ্‌যাপন।ছবি: রয়টার্স

১৬ দিন আগে এই মাঠেই ফুটবল বিশ্বের হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে অচেতন হয়ে পড়া ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের জন্য প্রার্থনায় বসেছিলেন বিশ্বজুড়ে ফুটবল–ভক্তরা। সেই পারকেন স্টেডিয়ামই আজ রোমাঞ্চকর এক ফুটবল ম্যাচ উপহার দিল। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো যে ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৫–৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে স্পেন। যেখানে ফ্রান্স অথবা সুইজারল্যান্ডকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে স্প্যানিশরা।

ম্যাচের প্রথম গোলটি খেয়েছিল স্প্যানিশরাই। সেটিও কী হাস্যকরভাবে। দলটির মিডফিল্ডার পেদ্রি মাঝমাঠ থেকে ব্যাকপাস দিয়েছিলেন গোলরক্ষক উনাই সিমনকে। বলটাকে ধরতে গিয়ে হাস্যকার কাণ্ডই না করলেন সিমন। বল তাঁর পায়ে লেগে চলে গেল জালে। এবারের ইউরোতে নবম আত্মঘাতী গোল এটি। সিমনের নামে নয়, গোলটি শেষ পর্যন্ত লেখা হয়েছে পেদ্রির নামে।

৮–দুই দল মিলে করেছে ৮ গোল। ইউরোর ইতিহাসে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলের ম্যাচ। ১৯৬০ সালে সেমিফাইনাল দেখেছিল ৯ গোল। ফ্রান্সকে ৫–৪ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে যুগোস্লাভিয়া।

ম্যাচের ধারার বিপরীতে অবিশ্বাস্য ওই গোল খেয়ে বসে স্পেন। ২০ মিনিটে হওয়া ওই গোলের আগে ম্যাচে শুধু একটি দলই ছিল—স্পেন। কোকে, মোরাতা, সারাবিয়া, হোসে গায়া ও আজপিলিকুয়েতা মিলে আধ ডজন গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন ওই সময়ে।

অবিশ্বাস্যভাবে আত্মঘাতী গোল খাওয়ার পর স্পেন গোলরক্ষক উনাই সিমনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সতীর্থ।
ছবি: রয়টার্স

এরপর পেদ্রি–সিমনের যুগলবন্দিতে ওই হাস্যকর আত্মঘাতী গোল। গোলটা হওয়ার পরই যেন ক্রোয়াটদের মনে পড়ে ফুটবল খেলতে নেমেছেন। অবিশ্বাস্য ওই গোলের পর ক্রোয়াট প্রথমবারের মতো তেড়েফুঁড়ে খেলতে শুরু করে। ২৫ মিনিটে নিকোলা ভ্লাসিচের শট সাইড নেটে ও পরের মিনিটেই মাতেও কোভাচিচের শট বারের ওপর দিয়ে যায়।

৩৮ মিনিটে পাবলো সারাবিয়ার গোলে সমতায় ফেরে স্পেন। জর্দি আলবার জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া লেফটব্যাক গায়ার শট ক্রোয়াট গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচ ফিরিয়ে দিলেও ১০ গজ দূর থেকে গোল করতে ভুল করেননি পাবলো সারাবিয়া।

৫৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ফেরান তোরেসের দারুণ ক্রসে সেজার আজপিলেকুয়েতার হেড জড়ায় ক্রোয়েশিয়ার জালে (২–১)। স্পেনের জার্সি গায়ে চেলসি ডিফেন্ডারের এটিই প্রথম গোল।

স্পেনের জার্সি গায়ে প্রথম গোলটি করছেন সিজার আজপিলেকুয়েতা।
ছবি: রয়টার্স

৭৭ মিনিটে ফেরান তোরেসের অসাধারণ এক গোলে ৩–১ করে স্পেন। গায়ার পাস ধরে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে গোলরক্ষকের ডান পাশ দিয়ে গোল করতে ভুল করেননি ম্যানচেস্টার সিটি তারকা।

এরপর আরও কত রোমাঞ্চ উপহার দেবে এই ম্যাচ সেটি তখন বোঝার উপায় ছিল না। ক্রোয়েশিয়ার দুই বদলি খেলোয়াড় মিসলাভ ওরসিচ ও মারিও পাসালিচ ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেন। ৮৫ মিনিটে ওরসিচের গোলে ব্যবধান কমায় ক্রোয়েশিয়া। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সমতা ফেরায় ক্রোয়াটরা। ওরসিচের ক্রস থেকে পাসালিচ হেডে গোল করে ম্যাচকে নিয়ে যান অতিরিক্ত সময়ে।

মারিও পাসালিচের এই গোলই অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে ম্যাচটিকে।
ছবি: রয়টার্স

অতিরিক্ত সময়ের ৬ মিনিটে ভাগ্যক্রমে গোল খায়নি স্পেন। ওরসিচের ক্রস থেকে আরেক বদলি ক্রামারিচের শট পা দিয়ে আটকে বাঁচিয়ে দেন সিমন। ১০০তম মিনিটে স্পেনের বদলি খেলোয়াড় দানি ওলমোর ক্রস ধরে আলাভারো মোরাতা ছোট বক্সের প্রান্ত থেকে দারুণ শটে গোল করে দলকে ৪–৩ গোলে এগিয়ে দেন। ইউরোতে এটি মোরাতার পঞ্চম গোলে। ইউরোতে স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে ফার্নান্দো তোরেসের পাশে বসলেন মোরাতা।

তিন মিনিট পর আরেক বদলি মিকেল ওইয়ারসাবাল বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করে দলকে ৫–৩ ব্যবধানে এগিয়ে নেন। ডান পাশ থেকে দানি ওলমোর নিখুঁত ক্রস খুঁজে পেয়েছিল অরক্ষিত ওইয়ারসাবালকে।