আবার করের যন্ত্রণায় পড়লেন মেসি

বার্সেলোনায় নামতে না নামতেই মেজাজ খারাপ হয়েছে মেসির।ছবি: রয়টার্স

আর্জেন্টিনার জার্সিতে দারুণ সময় কাটছে মেসির। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলে সবার ওপরে চার ম্যাচ জেতা ব্রাজিল, তারপরই আছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের মতো সব ম্যাচ জিততে না পারলেও অন্তত অপরাজিত আছে দলটি। পেরুর বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে দারুণ খেলেছেন। নিজে গোল পাননি, কিন্তু যেভাবে খেলেছেন সেটা দলকে ২-০ গোলে জেতাতে দারুণ অবদান রেখেছে। আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে তৃপ্তি নিয়েই ফিরতে পেরেছেন মেসি।

মেসির সেই আনন্দ অবশ্য উবে গেছে বার্সেলোনায় ফিরতে না ফিরতেই। আর্জেন্টিনা থেকে দীর্ঘ যাত্রা শেষে স্পেনে নামতে না নামতেই ক্লাব নিয়ে অপ্রীতিকর প্রশ্ন শুনতে হয়েছে তাঁকে। ক্লাবে অন্য খেলোয়াড় কেন ভালো খেলছেন না, নাকি তাঁকে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে তাঁকে। খেপে গিয়ে মেসি বলেই বসেছেন, ক্লাবের সব সমস্যার দায় আর নিতে পারছেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন চাঁছাছোলা উত্তরের কারণটাও জানা গেছে। স্পেনে নামতে না নামতেই নাকি কর কর্তৃপক্ষ ঝামেলা করেছেন মেসি ও তাঁর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে।

মেসি ও স্প্যানিশ কর কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। কর ফাঁকির মামলায় ২১ মাসের জেলের সাজাও পেয়েছিলেন মেসি। স্পেনের আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা না হলে প্রথমবারে দুই বছরের কম মেয়াদের শাস্তি ভোগ করতে হয় না বলে জেল খাটা থেকে বেঁচে গেছেন মেসি ও তাঁর বাবা। তবু ৪১ লাখ ইউরো কর ফাঁকি দেওয়ার কারণে প্রথম ৫১ লাখ ইউরো (কর ও করে সুদ) এবং পরে জরিমানা হিসেবে আরও ১৭ লাখ ইউরো দিতে হয়েছিল। কর কর্তৃপক্ষের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চান, এমন গুঞ্জনও শোনা গেছে একসময়।

এ মৌসুমের শুরুতে এমনিতেই বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। ক্লাবের বোর্ড ও সভাপতির ওপর ত্যক্ত হয়ে ওঠা মেসি এখনো চুক্তি নবায়ন করেননি। আসছে জানুয়ারিতে চাইলেই অন্য ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলতে পারবেন মেসি। এমন অবস্থায় আবার স্পেনের কর কর্তৃপক্ষের মেসির সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি করার ঘটনায় দুশ্চিন্তায় পড়তেই পারেন বার্সেলোনা সমর্থকেরা। তবে এবারের ঝামেলা অন্তত আয়কর–সংক্রান্ত নয়। ঝামেলাটা হয়েছে মেসির নিজস্ব উড়োজাহাজে করে বার্সেলোনায় নামা নিয়ে।

আর্জেন্টিনা থেকে সঙ্গীদের নিজের উড়োজাহাজে করেই বার্সেলোনা নিয়েছেন মেসি। অবতরণের পরপরই স্পেনের কর কর্তৃপক্ষের পাঁচজন কর্মকর্তা তাঁর চার্টার বিমানে যান। মেসি ও তাঁর সঙ্গে থাকা সবার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। শুধু তা–ই নয়, অবতরণ শুল্কও চাওয়া হয়েছিল মেসির কাছে। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাই বের হতে সময় লেগেছে মেসিদের। এমন অবস্থায় সাংবাদিকদের ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন তাই ভালো লাগেনি।

গ্রিজমানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন মেসি।
ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনার জার্সিতে আলো ছড়ানো হচ্ছে না আঁতোয়ান গ্রিজমানের। এর দায় মেসির ঘাড়েই দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডের সাবেক এজেন্ট এরিক ওলহাটস। দাবি করেছেন, মেসির ‘একনায়কতন্ত্রে’র কারণেই গ্রিজমান ভালো করছেন না। মেসিই নাকি চাইছেন না গ্রিজমান ভালো করুক! ওদিকে মেসির আত্মীয় ইমানুয়েল লোপেজও দাবি করেছেন, শুরু থেকেই গ্রিজমান খারাপ করুক সে চেষ্টা চালিয়েছেন মেসি। জাতীয় দলের দায়িত্ব মাত্রই সেরে আসা মেসিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। ক্লান্তশ্রান্ত মেসি বলে উঠেছেন, ‘সব সময় সবকিছুর জন্য এভাবে দায়ী হতে হতে ক্লান্ত আমি। বিরক্ত হয়ে উঠেছি। ১৫ ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে দেখি কর কর্তৃপক্ষের লোক বসে আছে আমার সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য। এটা হাস্যকর।’

শনিবার রাতে আঁতোয়ান গ্রিজমানের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে খেলা বার্সেলোনার। আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচের আগে সতীর্থের পারফরম্যান্সের দায় ঘাড়ে ওঠা দেখতে নিশ্চয় ভালো লাগছিল না মেসির। এর মধ্যে আবার স্প্যানিশ কর কর্তৃপক্ষের বাড়াবাড়িতে নির্ঘাত খেপে উঠেছেন মেসি!