আবাহনীকে হারাতে না পারার আক্ষেপ মোহামেডানের

ম্যাচটা ড্র হয়েছে, কিন্তু কুমিল্লায় আবাহনীকে হারাতেও পারত মোহামেডান।ছবি: এম এ সাদেক

উত্তেজনা, আকর্ষণ, গোল—কী ছিল না ম্যাচে! কুমিল্লার দর্শকেরা এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতেন না। সার্থক হয়েছে ৩০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে গ্যালারিতে ঢোকা।

তবে আবাহনী সমর্থকদের মনটা একটু খারাপই হওয়ার কথা। ম্যাচটা দারুণভাবে শুরু করেও জিততে পারেনি আকাশি–নীলেরা। অন্যদিকে মোহামেডান সমর্থকেরা খুশিই। দুবার পিছিয়ে পড়েও প্রবল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচে ফিরে আসে মোহামেডান। এমনকি এই লিগ লড়াইয়ে জিতেও যেতে পারত মোহামেডান।

দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর ওপর প্রবল চাপ তৈরি করে সমর্থকদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন মোহামেডানের ফুটবলাররা। বিশেষ করে মালির স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতে ছিলেন দুর্দান্ত। নাইজেরিয়ার মিডফিল্ডার মোহামেদ নুরাতকেও আটকাতে হিমশিম খাচ্ছিল আবাহনী। মোহামেডানের আক্রমণের তোড়ে আবাহনীকে অনেকটা সময় অসহায় লাগছিল। হঠাৎ এমন রুদ্রমূর্তিতে মোহামেডানকে সাম্প্রতিক সময়ে কমই দেখা গেছে।

মোহামেডান গ্যালারি ছিল উৎসবমুখর
ছবি: এম এ সাদেক

তবে মোহামেডানের একটু আক্ষেপ হয়তো থেকেই যাবে আবাহনীর কাছে সর্বশেষ হারের বদলা নিতে না পারায়। গত ডিসেম্বরেই ফেডারেশন কাপে দুই দল মৌসুমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেদিন আবাহনীর কাছে ৩-০ গোলে উড়ে যায় মোহামেডান। আজ কুমিল্লায় আবাহনীকে একপর্যায়ে কোণঠাসা করেও পুরো ৩ পয়েন্ট না পাওয়া একটু হতাশারই সাদা–কালোর জন্য।

আবাহনীর এমন অবস্থা হয়েছিল যে একটা সময় চেনাই যাচ্ছিল না মাঠে। কারণও আছে। আবাহনীর পুরো শক্তির দল ছিল না এদিনও। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল, অধিনায়ক নাবিব নেওয়াজ নেই। রক্ষণে ওয়ালী ফয়সাল, নাসির উদ্দিনদের ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছে। তবু প্রথমার্ধে আবাহনীর আক্রমণে বেশ ধার থাকল। শুরুতেই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ফার্নান্দো রদ্রিগেজের ঠেলে দেওয়া বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট। গোটা ম্যাচে বেলফোর্ট চেষ্টা করেছেন। গোলও পেয়েছেন। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি।

তবে আজ আবাহনী প্রথম গোল পেয়ে যায় ১৪ মিনিটেই। তিন বিদেশির নিখুঁত সমন্বয়ে এক গোল। পাল্টা আক্রমণ থেকে মাঝমাঠে টেনে ধরা হয় জুয়েল রানাকে। আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানি দুরন্ত ফ্রিকিক নেন। সেই বল উড়ে আসে ঠিক বেলফোর্টের মাথায়। বেলফোর্টের হেডে যায় ব্রালিজিয়ান স্ট্রাইকার রদ্রিগেজের কাছে। রদ্রিগেজ দুরন্ত নিচে হেড নেন পোস্টে। মোহামেডান গোলকিপার আহসান হাবিবের পায়ের নিচ দিয়ে বল জালে। হেডে তেমন জোর ছিল না।

১৭ মিনিটে দারুণ এক পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে ১-১ করে ফেলে মোহামেডান। মালির স্ট্রাইকার বল বাতাসে রেখেই জালে পাঠান। এমনভাবে পাঠিয়েছেন তা মনে রাখার মতো। ঠিক ব্যাকভলি নয়, বলটা পেছন থেকে পায়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটান। আবাহনী তখন পুরো বিভ্রান্ত এক দল। পরিকল্পিত আক্রমণেই এই গোল আদায় করে নিয়েছে সাদা–কালোরা।

৩০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পেতে পারত আবাহনী। রদ্রিগেজের ফ্রিকিক মোহামেডানের দেয়ালের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে। ফিরতি বলে জুয়েল রানা সংযোগ ঘটাতে পারলে গোল হতে পারত। এই জুয়েলই করেছেন দ্বিতীয় গোল। ৩৩ মিনিটে রদ্রিগেজ থেকে জুয়েল বল পেয়ে যান। তাঁর কোনাকুনি শটে পরাস্ত মোহামেডান গোলকিপার। পরপরই আবার জুয়েল রানার ঠেলে দেওয়া বল জলে ঢোকে। তবে অফসাইডের কারণে গোল হয়নি।

দুইবার এগিয়ে গিয়েও আবাহনী পারেনি।
ছবি: এম এ সাদেক

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মোহামেডানের প্রবল আক্রমণ। সোলেমানের শট ঠেকান আবাহনীর গোলকিপার শহিদুল। ফিরতি বল নুরাত বারের ওপর দিয়ে মারেন। সমতাসূচক গোলটি এসে যায় পরপরই ৬৬ মিনিটে। সোলেমান দিয়াবাতে দারুণ গোল করেন। তৃতীয় গোলের জন্যও এরপর ঝাঁপাতে থাকে মোহামেডান। এ সময় আবাহনীও চেষ্টা করছিল খেলাটা আবার ধরতে। কিন্তু গুছিয়ে আর উঠতে পারেনি। ম্যাচে আরও কিছু সময় থাকলে হয়তো মোহামেডান জিতেই যেতে পারত। আবাহনী হাঁপ ছেড়ে বাঁচে!

চার বছর পর ঢাকার বাইরে আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচ। দারুণ উপভোগ্য এই ম্যাচ কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেও আশাবাদী করে তুলেছে। সামনে হয়তো আরও জমে উঠবে প্রিমিয়ার লিগে এই ভেন্যুর খেলা। বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডানের সৌজন্যে এই ভেন্যুতে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে এবার। আজ গ্যালারি প্রায় ভরেই গেছে। ১৩–১৪ হাজার দর্শক প্রাণ ভরেই দেখল খেলা। আর সেটা সম্ভব হয়েছে মোহামেডান সামর্থ্যের চেয়েও ভালো খেলায়।

এমনিতে সাদা–কালোরা তুলনামূলক পিছিয়ে। শক্তিতে এগিয়ে আবাহনী। তারপরও দুবার পিছিয়েও ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে সাদা–কালোরা ঢাকায় ফিরছে। ম্যাচ শেষে মোহামডানের সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বিররা মাঠে নেমে অভিনন্দন জানান সাদা–কালোর খেলোয়াড়দের। তাঁরা খুশি। না জিতলেও মোহামেডান যে মাতিয়ে দিল কুমিল্লার গ্যালারি।