আবাহনীর বাজি দুই ব্রাজিলিয়ান

করোনাকালে ফেডারেশন কাপ দিয়েই প্রথম মাঠে গড়াচ্ছে ঘরোয়া ফুটবল। টুর্নামেন্ট শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর। নতুন মৌসুম শুরুর আগে প্রথম সারির দলগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে ৮ পর্বের ধারাবাহিকের সপ্তম পর্বে আজ থাকছে ঢাকা আবাহনীর কথা

ধানমন্ডিতে নিজেদের মাঠে অনুশীলনে গা গরমের ম্যাচ খেলছেন আবাহনী লিমিটেডের খেলোয়াড়েরাছবি: তানভীর আহাম্মেদ

মাঠের এক পাশে নিবিড় অনুশীলনে চার গোলকিপার। মাঝখানে মারিও লেমোস শিষ্যদের দেখিয়ে দিচ্ছেন নানা কৌশল। ধানমন্ডি আবাহনী মাঠে এটি এখন প্রতিদিন বিকেলের দৃশ্য। সহকারীদের নিয়ে শেষ মুহূর্তে দল তৈরি করছেন ঢাকা আবাহনীর তরুণ পর্তুগিজ কোচ।

আপাত লক্ষ্য পরিত্যক্ত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হারিয়ে ফেলা ফেডারেশন কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার। সবচেয়ে বড় লক্ষ্য অবশ্যই প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষস্থানে আবার বসা। সেই সামর্থ্য আবাহনীর ষোলো আনাই আছে। ২০১৬ থেকে গত ৪টি ফেডারেশন কাপের প্রথম ৩টিতেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। সর্বশেষ টুর্নামেন্টটি অবশ্য বসুন্ধরা কিংসের। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া পেশাদার লিগে প্রথম ১০ আসরে ৬ বারই সেরা আবাহনী। লিগের ১১তম আসরে আবির্ভাবেই পেশাদার লিগটা নিজেদের রঙে রাঙিয়ে নেয় বসুন্ধরা। নতুন মৌসুমে আবাহনী আবার তা আকাশি রঙে রঙিন করতে চায়।

বসুন্ধরার প্রবল দাপট এড়িয়ে লক্ষ্যে পৌঁছা কঠিন আবাহনীর জন্য। তাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ১৩-১৪ জন, আর আবাহনীতে ৬-৭ জন। তবে নতুন মৌসুমে বসুন্ধরার দানিয়েল কলিনদ্রেসের মতো বিশ্বকাপে খেলা আলোচিত তারকা নেই। আবাহনীর জন্য এটা স্বস্তির।

কোনো দেশি খেলোয়াড় ছাড়েনি আবাহনী, নেয়নি নতুন কাউকেও। নতুন মৌসুমে দেখা যাবে পুরোনো আবাহনীকেই। গতবারের রানার্সআপ শিবিরে বদল হয়েছে ু বিদেশি খেলোয়াড়। বার্নার্ড ও মাইলসন বিদায় নিয়েছেন। বয়সের সঙ্গে ঝাঁজ কমে আসায় নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে সিজোবার ওপর ভরসা রাখা হয়নি। সানডে স্বার্থপর খেলোয়াড়-সতীর্থদের এই কথায় এবার তাঁকে আনেনি ক্লাব।

তবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানিকে। গত মৌসুমের আগের মৌসুমে এফসি কাপ ও ঘরোয়া ফুটবলে তিনি আকাশি-নীল জার্সিতে ভালো খেলেছেন। গত মৌসুমে আবাহনী ছেড়ে ভারতের লিগে চলে যাওয়া সাইগানির ফিরে আসা ভালো খবর। গতবারের ৫ বিদেশির মধ্যে রাখা হয়েছে শুধু হাইতির ফরোয়ার্ড বেলফোর্টকে। নতুন সংযোজন দুই ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সিসকো তোরেস ও রাফায়েল আগস্তো। দুজনকেই ভাবা হচ্ছে আবাহনীর বাজি। তাঁরা ভালো খেললে ফেডারেশন কাপ ও লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার হয়তো কঠিন হবে না।

স্ট্রাইকার তোরেস সর্বশেষ খেলেন ইন্দোনেশিয়ার লিগের রানার্সআপ দলে। করোনায় লিগ বন্ধ হওয়ার আগে ৩ ম্যাচে ২টি গোলও করেন। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ‘ফ্রি’ থাকায় যোগ দিয়েছেন আবাহনীতে। আরব আমিরাত, কুয়েত, জর্ডান, ফিনল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ২৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার রাফায়েল শুরুতে ছিলেন ব্রাজিলের শীর্ষ লিগের দল ফ্লুমিনেন্সের যুবদলে। ৫ বছর ধরে খেলেছেন আইএসএলে। চেন্নাইয়িন এফসিতে ৩ বছর খেলে সর্বশেষ খেলেন বেঙ্গালুরু এফসির জার্সিতে। ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২০ যুবদলে ডাক পেয়েছেন রিও ডি জেনিরোর এই ফুটবলার।

নতুন দুই ব্রাজিলিয়ানে আস্থা রাখছেন এবারের সম্ভাব্য অধিনায়ক নাবিব নেওয়াজ, ‘রাফায়েল অনেক ভালো খেলোয়াড়। ভারতের আইএসএলে দুবার চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২০ দলেও ছিল। তোরেসও অনেক ভালো। অনুশীলনে যা দেখলাম মনে হচ্ছে, করোনায় আট মাস বসে থাকায় পুরো ফিট নন তোরেস। একটু সময় লাগবে।’

গত মৌসুমে আতিকুর রহমান দল ছড়ার পর ভালো রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের শূন্যস্থানটি পূরণ হয়নি। মামুনুলের পড়ন্ত বেলা। জাতীয় দলের জার্সিতে জেমি ডে যাঁকে উইংয়ে ব্যবহার করেন, সেই সাদ উদ্দিনকে আবাহনী কোচ মূলত রাইট ব্যাকেই খেলাবেন। প্রয়োজনে ওপরেও রাখবেন। ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ বলেন, ‘সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি দলের শক্তি বাড়াতে। বিদেশি বদল করেছি। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি। গতবার অনেক ভুল ছিল। সেসব এবার শুধরাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হব আশা করি।’

৪৮ বছরের ইতিহাসে আবাহনী বহু যুদ্ধ জিতেছে। একসময় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের প্রবল চ্যালেঞ্জ উতরে শিরোপা ঘরে তুলেছে। ফিরে আসার সূত্রটা তাই আবাহনীর অজনা নয়।

আমাদের কিছু জিততে হবে

মারিও লেমোস, কোচ

গতবারের ভুলগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। দলে নতুন তিনজন বিদেশি নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, এতে দলের শক্তি বেড়েছে। দলের প্রধান কোচ হিসেবে বলব, আমাদের অবশ্যই কিছু জিততে হবে। কিছু জিততে না পারলে বুঝব আমি আমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারিনি। ব্যর্থতার দায় আমার কাঁধেই আসবে। বসুন্ধরা কিংস অনেক শক্তিশালী দল। শেখ রাসেল, চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ জামাল-কেউই কম যায় না। তবে আমরাও পিছিয়ে নেই। ফেডারেশন কাপ ও লিগে শিরোপা পুনরুদ্ধার করাই হবে নতুন মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য। এএফসি কাপেও ভালো করা চেষ্টা থাকবে।

নতুন মৌসুমে আবাহনী লিমিটেড

গোলকিপার: শহিদুল, সুলতান, নাইম, শামীম, সোহাগ

রক্ষণ: মাসিহ সাইগানি (আফগানিস্তান), রায়হান, টুটুল হোসেন, মামুন মিয়া, নাসির, ওয়ালী, সাদ উদ্দিন, আতিকুর, নাজিম, শাকির, তাসিন

মাঝমাঠ: রাফায়েল আগস্তো ( ব্রাজিল), সোহেল রানা, সোহেল রানা ( জুনিয়র), মামুনুল, প্রাণোতোষ, দিপক, হৃদয়।

আক্রমণ: নাবিব নেওয়াজ. ফ্রান্সিসকো তোরেস (ব্রাজিল), শীতল, রুবেল মিয়া, জুয়েল, বেলফোর্ট (হাইতি)