‘আমরা খেলোয়াড়দের খুন করে ফেলব’

আবারও চোটে পড়েছেন নেইমার।ফাইল ছবি এএফপি

নেইমার আবার চোটে পড়েছেন। নতুন এই চোটে পিএসজির হয়ে আগামী তিন সপ্তাহ আর তাঁকে দেখা যাবে না। এতে যে শুধু পিএসজির ক্ষতি হচ্ছে এমনটা নয়, ব্রাজিলও বিপাকে পড়েছে। নভেম্বরের মাঝপথে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুটি ম্যাচ আছে ব্রাজিলের। এখন পর্যন্ত যে পূর্বাভাস, তাতে কোনোটিতেই নামার সম্ভাবনা নেই তাঁর। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী ২০ নভেম্বর মোনাকোর বিপক্ষে লিগ ম্যাচে দেখা যেতে পারে নেইমারকে।

দলের সেরা খেলোয়াড়কে হারিয়ে বিপদে আছেন পিএসজি কোচ টমাস টুখেল। কিন্তু সেটা নিয়ে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না। আজই আবার নঁতের বিপক্ষে মাঠে নামবে পিএসজি। এ নিয়ে গত ১৬ দিনে পাঁচ ম্যাচ খেলবে পিএসজি। এখানেই শেষ নয়। এরপরই চ্যাম্পিয়নস লিগে লাইপজিগ ও লিগে রেনের বিপক্ষে নামতে হবে তাদের। এরপর একটু বিশ্রাম পাবেন টুখেল। কিন্তু তাঁর ফুটবলারদের তো মুক্তি নেই। আন্তর্জাতিক ফুটবলের দায়িত্ব পালন করতে সবাই যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। খেলোয়াড়দের এভাবে টানা মাঠে নামতে দেখে চিন্তিত হয়ে উঠেছেন জার্মান কোচ। তাঁর ধারণা এভাবে চলতে থাকলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাবে ফুটবলারদের।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে গত মৌসুম শেষ হতে বেশ দেরি হয়েছে। ২০২০/২১ মৌসুমটাও তাই স্বাভাবিকের তুলনায় একটু পিছিয়ে শুরু করতে হয়েছে। ফ্রেঞ্চ লিগ অবশ্য গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে। এর ফলে এ মৌসুমে কোনো প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি পাননি খেলোয়াড়েরা। আগের মৌসুমের জড়তা কাটিয়ে ওঠা হয়নি। আবার মৌসুম দেরিতে শুরু করায় সূচিতে জট পেকে গেছে। প্রতি সপ্তাহেই অন্তত দুটি ম্যাচ থাকছে। লিগের খেলার সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগ আছে। বেশ কিছু দেশে সে সঙ্গে ঘরোয়া কাপের খেলাও চলছে। এর সঙ্গে জাতীয় দলের দায়িত্ব তো আছেই।

পিএসজির খেলোয়াড়েরা নভেম্বরে জাতীয় দলের দায়িত্ব সারার পরও যে ছুটি পাবেন, এমন নয়। ২০ নভেম্বর থেকে বড়দিন বন্ধের আগ পর্যন্ত আরও ১০টি ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। টুখেলের চোখে এমন ব্যস্ত সূচিটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে সব দিক থেকেই, ‘আমরা খেলোয়াড়দের খুন করে ফেলতে যাচ্ছি। আমি বরাবরই এটা বলে এসেছি। আমরা ওদের খুন করতে যাচ্ছি কারণ প্রস্তুতি, পারফরম্যান্স ও বিশ্রামের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।’

ব্যস্ত সূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন টুখেল।
ছবি: এএফপি

এমন ঠাসা সূচিতে তারকা ফুটবলারদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে ধারণা টুখেলের। কারণ, বড় তারকারাই সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন পাশাপাশি দেশের হয়ে খেলার গৌরবও হাতছাড়া করতে চান না। টুখেলের চোখে এভাবে টানা খেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছেন না ফুটবলাররা, ‘ফুটবলে এ চাপটা সব সময় সেরাদের ওপর পড়ে। কারণ এরা সব সময় দেশের হয়ে খেলবেই। তারা বিরতির সময়েও খেলে, তাদের ভ্রমণ করতে হয় এবং আমার চোখে এই ভ্রমণটা বাড়াবাড়ি। ওরা বিশ্রামের কোনো সময় পায় না। ফলে ফিরে এসে সঠিকভাবে প্রস্তুত হতে পারে না। এটা তো গোপন কিছু না। খেলায় এটাই হয়। প্রস্তুতি চোট ও পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব রাখে।’ রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদানও এই ব্যস্ত সূচি নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, এতটাই ব্যস্ত যে জয় উদ্‌যাপন করার সময়ও পাচ্ছেন না তারা। পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে হচ্ছে সবাইকে।

শুধু নিজের দল চোটে পড়ছে বলেই টুখেল উচ্চকণ্ঠ নন। ইউরোপের অন্য পরাশক্তি লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি ও বায়ার্ন মিউনিখের উদাহরণও টেনেছেন জার্মান, ‘প্রস্তুতি ছাড়া খেলোয়াড়রা আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং সেটা সামলানো কঠিন হয়ে যায়। এটা কোনো অজুহাত নয়, এটাই সত্য। আমাদের খুব দ্রুত সমাধান খুঁজে নিতে হবে এবং আশা করি আমরা সেটা পাব। ইদানীং প্রতি ম্যাচেই আমরা একজন করে হারাচ্ছি। শুধু আমরাই যে চিন্তিত সেটাও না। লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি এবং বায়ার্ন মিউনিখেও একই অবস্থা।’

চোটের কারণে মাঠের বাইরে আছেন কুতিনিও (ডানে)।
ছবি: রয়টার্স

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে লিগ শুরু করা পিএসজি টানা ছয় জয়ে লিগের শীর্ষস্থান বুঝে নিয়েছে। এ সময়ে ২০ গোল দিয়ে মাত্র একটি হজম করেছে দলটি। কিন্তু দলের খেলোয়াড়দের ওপর যে চাপ যাচ্ছে সেটা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না, ‘আমরা তুরস্ক থেকে ফিরলাম (বৃহস্পতিবার) এবং খেলার পর আজই (শুক্রবার) আমাদের দ্বিতীয় দিন। চোটের দিক থেকে এটাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিন, এর মানে আজ আমরা প্রায় কিছুই করব না। আমরা আপাতত ধকল কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি এবং যারা বাশাকশেহিরের বিপক্ষে খেলেনি তাদের হালকা অনুশীলন করিয়েছি। আর (শনিবার) আমরা আবার উড়াল দেব আরেকটি ম্যাচ খেলতে।’