আরামবাগের সেই ছেলেটি এখন জাতীয় দলের

প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন মোহাম্মদ জুয়েল।ছবি: প্রথম আলো

কোচ জেমি ডে দল ঘোষণার পরই একটা কথা বলে রেখেছিলেন, ‘অতিরিক্ত যে কজন খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে, তাদেরও মূল দলে খেলার সুযোগ আছে।’ চ্যালেঞ্জটা খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া মোহাম্মদ জুয়েল। বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব দলের মিডফিল্ডার তখনই বলেছিলেন, ‘কোচ বলেছেন, অতিরিক্ত খেলোয়াড়দেরও মূল দলে ঢোকার সুযোগ আছে। এই কয়েক দিনের অনুশীলনে আমি সে চেষ্টাটাই করব।’

পুলিশের সেই জুয়েলের যেমন কথা, তেমন কাজ। অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে ডাক পেয়ে শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নিয়েছেন মূল দলেও। দলের কোনো খেলোয়াড় অসুস্থ হননি বা চোটে পড়েননি। অনুশীলনে জুয়েলের পারফরম্যান্স দেখেই জেমি ডে বাধ্য হয়েছেন তাঁকে নেপালে ত্রিদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলে রাখতে। ২৫ জনের একজন হিসেবে তাঁকে নিয়ে ১৮ মার্চ নেপালে রওনা দেবেন জেমি ডে।

জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দলে আসা মোহাম্মদ জুয়েল।
ছবি: প্রথম আলো

নেপালে অনুষ্ঠেয় তিন জাতি টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে দুই সেশন মাঠের অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। অনেক দূর থেকেও সবার মধ্যে আলাদা করে চিনে নেওয়া যায় জুয়েলকে। সেটি মূলত ভিন্ন ঘরানার চুলের স্টাইলের জন্যই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে অনুসরণ করে পেছনে ঝুঁটি বাঁধেন ২০ বছর বয়সী তরুণ। রোনালদোর সঙ্গে জুয়েলের তুলনা হয় না কোনোভাবেই। তবে জুভেন্টাস তারকার মতো মনের জোর আছে তাঁরও।

মূল দলে জায়গা করে নিয়ে সেই জিদের কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন জুয়েল, ‘অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলে এসেছিলাম। চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। লক্ষ্য ছিল দলে জায়গা করে নেব। আশা করছি সুযোগ পাব এবং তা কাজে লাগাতে পারব।’
আরামবাগ ক্লাবপাড়ায় বাড়ি। এলাকার বালুর মাঠেই ফুটবলে হাতেখড়ি। ২০১৩ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। সেখান থেকে বের হওয়ার আগেই নিজ এলাকার ক্লাব আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের জার্সিতে জুয়েলের আগমনী বার্তা। ২০১৮ সালের আরামবাগের স্বাধীনতা কাপ জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। বর্তমানে খেলছেন বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবের হয়ে। লিগে গোল করেছেন মাত্র একটি। তবে একমাত্র গোলটি দিয়ে জুয়েলের পারফরম্যান্স বিচার করা যাচ্ছে না। মূল স্ট্রাইকারের পেছন থেকে দলের খেলাটা তৈরি করেন তিনিই।

নেপাল সফরেই জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়ে যেতে পারে জুয়েলের। যদিও এর আগে ২০১৩ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ খেলতে গিয়ে অভিজ্ঞতাটা ভালো হয়নি। নেপালের ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল তাঁর। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েও মূল দলে থাকতে পারেননি। এবার প্রথমবারের মতো অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েই জায়গা করে নিয়েছেন মূল দলে। বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলার সুবাদে তাঁর জানা আছে জাতীয় দলে খেলার চ্যালেঞ্জটা। জুয়েল বলেন, ‘বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছি। সেখানে খেলা আসলে অনেক কঠিন। তবে আশা করছি সামনে তা হবে না। ভালো কিছুই হবে।’

জুয়েল ছাড়াও দলে ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল, সুমন রেজা, মতিন মিয়া, মেহেদী হাসান। খেলার সুযোগ পেতে লড়াইটি এখন তাঁদের সঙ্গে। জুয়েলের আপাতত শেখার দিকেই নজর, ‘বড় ভাইদের কাছ থেকে অনুশীলনে শিখছি। খারাপ কিছু হলে সব শেষ হবে, তা নয়। সামনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব আছে। এখন জীবন ভাই ইনজুরিতে। হয়তো একটু সমস্যা হতে পারে। তবে অন্যরা ভালো করছে। লিগে গোল পাচ্ছে। আশা করছি, আমরা নেপালে ভালো কিছু করতে পারব।’