আরেক ‘নতুন রোনালদো’ লিভারপুলের ঘরে

দিওগো জোতাকে বলা হচ্ছে ‘নতুন রোনালদো’ছবি:লিভারপুল টুইটার

পছন্দের খেলোয়াড়কে হারিয়ে যেতে দেখতে কার ভালো লাগে? কেউই চান না, তাঁর পছন্দের খেলোয়াড়টির মাঠের জাদু থেমে যাক। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে আজীবন খেলে যাওয়া সম্ভব না। প্রতিনিয়ত তাই মানুষের চোখ খুঁজে ফেরে পছন্দের খেলোয়াড়টার তরুণ সংস্করণকে। মনের মধ্যে হয়তো আকাঙ্ক্ষা থাকে ভক্তদের, পছন্দের তারকাটি অবসর নিলেও যেন তাঁর খেলার ধরন, কারিকুরি, বৈশিষ্ট্য হারিয়ে না যায়। নতুন কারওর মাঝে সেই তারকার ছায়া আনন্দ দেয় সবাইকে। এভাবেই ভক্তরা আজীবন পেতে চান মেসি, রোনালদো, নেইমার কিংবা পেলে, ম্যারাডোনা, জিদানদের স্বাদ। অবসরের পরেও।

অবসরের আগেও কী সেই স্বাদ পেতে চান না? অবশ্যই চান। না হয় অবসর নেওয়ার আগেই নতুন রোনালদো, নতুন মেসি, নতুন এমবাপ্পে এমনকি নতুন হরলান্ড কোত্থেকে চলে আসেন?

রোনালদোর কথাই ধরুন। গত এক দশকে ‘নতুন রোনালদো’ যে কত বের হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গুগলে 'নিউ রোনালদো' লিখে খুঁজুন, একরাশ তারকার আবির্ভাব হবে নিমেষে। এদের মধ্যে কেউ প্রত্যাশা পূরণ করেছেন, কেউ প্রত্যাশা পূরণের অপেক্ষায় আছেন, আবার কেউ হারিয়ে গেছেন কালের অতল গহ্বরে। এই নতুন রোনালদো পর্তুগিজই যে হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। পর্তুগালে জন্ম নেওয়া বা না নেওয়া, অনেকের গায়েই সেঁটেছে নতুন রোনালদোর তকমা। রোনালদোর দেশের ব্রুমা থেকে শুরু করে ভ্যালেন্সিয়ার গনকালো গেদেস, এসি মিলানের রাফায়েল লিয়াও - সবাইকেই নিয়েই ভক্তরা স্বপ্ন দেখেছেন, দেখছেন।

লিভারপুলের ২০ নম্বর জার্সি পরবেন জোতা।
ছবি : লিভারপুল টুইটার

এখন আবার মাতামাতি হচ্ছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জোয়াও ফেলিক্সকে নিয়ে। বিদেশিদের মধ্যে এই তকমা জুটেছে ফ্রান্সের গ্যাব্রিয়েল ওবেরতান, স্পেনের আলভারো ভাদিয়ো, ইতালির ফেদেরিকো মাচেদার কপালে। ইংলিশ ক্লাব উলভারহ্যাম্পটনেই যেমন কিছুদিন আগেই আরেক 'নতুন রোনালদো' কে দলে আনা হলো— ফাবিও সিলভা যার নাম। মজার ব্যাপার হলো, এই উলভসেই কয়েক বছর আগে থেকে একজন খেলোয়াড় ছিলেন, যিনি দলটার আক্রমণভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন, পরিচিত ছিলেন 'নতুন রোনালদো' হিসেবেও। তাঁর নাম দিওগো জোতা। অর্থাৎ কিছুদিনের জন্য উলভসের 'নতুন রোনালদো' সংখ্যা হয়ে গিয়েছিল দুজন। একজনকে তাই নিয়ে আসার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। জোতাকেই দলে এনেছে তাঁরা।

চার কোটি দশ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে সাদিও মানে-মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোর সতীর্থ হতে লিভারপুলে এসেছেন এই 'নতুন রোনালদো'। ২৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের সঙ্গে লিভারপুলের চুক্তি পাঁচ বছরের।

২০১৭-১৮ মৌসুমে স্প্যানিশ ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে ধারে উলভসে যোগ দিয়েছিলেন জোতা। প্রতি মুহূর্তে নিজের জাত চিনিয়েছেন। ১৩১ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৪৪টি। গত মৌসুমেই ইউরোপা লিগে বেসিকতাস ও এসপানিওলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সাধারণত জোতাকে ডান পায়ের খেলোয়াড় বলা হলেও বাঁ পায়েও তিনি সমানভাবে পারদর্শী। লেফট উইঙ্গার হিসেবে মূলত খেললেও দলের প্রয়োজনে স্ট্রাইকার হিসেবেও খেলতে সমস্যা হয় না তাঁর। যে কারণে গত মৌসুমে মেক্সিকান স্ট্রাইকার রাউল হিমেনেজের সঙ্গে আক্রমণভাগে বেশ ক'বার জুটি বাঁধতে দেখা গিয়েছিল জোতাকে। অর্থাৎ লিভারপুলের আক্রমণভাগের যেকোনো জায়গায় খেলার ক্ষমতা আছে তাঁর। মানে-সালাহ বা ফিরমিনোর বিকল্প হিসেবে তো বটেই, বেশি ভালো খেললে হয়তো বিখ্যাত 'ত্রিমূর্তি'র একজনকে বেঞ্চেও পাঠিয়ে দিতে পারেন প্রতিভাবান এই উইঙ্গার।

কিছুদিন আগে লিভারপুল থেকে ইংলিশ মিডফিল্ডার অ্যাডাম লালানা যোগ দিয়েছেন ব্রাইটনে। লালানার ফেলে যাওয়া ২০ নম্বর জার্সিটাই জুটেছে জোতার কপালে।

জোতাকে আনার পাশাপাশি নিজেদের এক খেলোয়াড়কে উলভারহ্যাম্পটনের কাছে বিক্রি করেছে লিভারপুল। পাঁচ বছরের চুক্তিতে ডাচ ডিফেন্ডার কি-জানা হোভার কে এক কোটি পাউন্ডে যোগ দিয়েছেন উলভসে।