আর্জেন্টাইন তারকাকে মারতে গিয়েছিলেন কোচ

আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন পাপু গোমেজছবি : রয়টার্স

অথচ আতালান্তার সমর্থকেরা তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই মাথায় তুলে রাখত। ইয়োসিপ ইলিচিচ, দুভান জাপাতাদের নিয়ে যে দুর্দান্ত আক্রমণভাগ গড়ে তুলেছিলেন, সে আক্রমণভাগ গত কয়েক মৌসুম ধরেই সুনাম কুড়াচ্ছে। ছিলেন দলের অধিনায়ক, দলের প্রতীক। আতালান্তা দলগতভাবে যতই দুর্দান্ত খেলুক না কেন, গত কয়েক বছর ধরে আতালান্তা বলতেই মানুষ পাপু গোমেজকেই চিনত। পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন ভক্ত-সমর্থকদের। সে গোমেজই গত মৌসুমে ক্লাব ছেড়ে পাড়ি জমালেন সেভিয়ায়!


কোচ জিয়ানপিয়েরে গাসপেরিনির সঙ্গে মন কষাকষি চলছে, এটা বোঝা গিয়েছিল আগেই। কিন্তু পাপু নিজে বিস্তারিতভাবে কখনই জানাননি, সে দ্বন্দ্বের মাত্রাটা কতটুকু ছিল। এক বছর পর অবশেষে মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন, কোচ তাঁকে একবার মারতেও উদ্যত হয়েছিলেন!

স্পেনের সেভিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন পাপু গোমেজ
ছবি: টুইটার

চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বে সেবার ড্যানিশ ক্লাব মিতিউলানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল আতালান্তা। প্রথমার্ধ শেষে বিরতির সময় কথা-কাটাকাটি হয় কোচ গাসপেরিনি ও অধিনায়ক গোমেজের মধ্যে। কোচের একটা কৌশলগত পরিকল্পনার সঙ্গে একমত ছিলেন না গোমেজ। ব্যস, আর যায় কোথায়! শিষ্যকে মারতে গিয়েছিলেন গাসপেরিনি!

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম লা নাসিওনকে সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন গাসপেরিনি, 'আমি তাঁর একটা কৌশলগত পরিকল্পনা অমান্য করেছিলাম। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে তিনি আমাকে ডানে এসে খেলতে বলেন। কিন্তু আমি বাঁয়ে ভালো খেলছিলাম। তাই আমি সে কথা অমান্য করি।'

জিয়ান পিয়েরে গাসপেরিনি
ফাইল ছবি

কাজটা করে গোমেজ যে ঠিক করেননি, সেটা তখনই বুঝেছিলেন, 'আমি জানতাম ম্যাচের মধ্যে ক্যামেরার সামনে এভাবে কথা না শুনলে তিনি খেপে যাবেন, হয়েছেও সেটাই। আমি জানতাম ড্রেসিংরুমে উনি আমাকে বকাঝকা করবেন। কিন্তু বিরতির সময় এভাবে সীমা অতিক্রম করবেন সেটা বুঝিনি। উনি আমাকে শারীরিকভাবে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন।'


এরপরেও গোমেজ হয়তো ক্লাব ছাড়তেন না, যদি গাসপেরিনি ক্ষমা চাইতেন, 'ব্যাপারটা যখন মারামারির পর্যায়ে চলে যায়, সেটা সহ্য করা যায় না। তাই আমি ক্লাব সভাপতি আন্তোনিও পেরকাসির সঙ্গে দেখা করি। আমি তাঁকে বলি, দেখুন, আমার ক্লাবের হয়ে খেলতে সমস্যা নেই। আমি মানি, আমারও দোষ ছিল, আমি কোচের কথা মানিনি। কোচের কথা অমান্য করে খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। কিন্তু আমি চাই ওই ঘটনার জন্য কোচ আমার কাছে অন্তত ক্ষমা চাক।'

গাসপেরিনি কখনই গোমেজের কাছে ক্ষমা চাননি, গোমেজ তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও, 'পরদিন গোটা দলের সঙ্গে একটা সভা ছিল। সে সভায় আমি সবার সামনে কোচ আর সতীর্থদের কাছে ক্ষমা চাই। কিন্তু কোচ আমার কাছে ক্ষমা চাননি তাঁর দুর্ব্যবহারের জন্য।'

এই ঘটনার পরেই গোমেজের মাথায় রক্ত চড়ে যায়, 'কিছুদিন পর আমি সভাপতির সঙ্গে কথা বলি। তাঁকে জানাই, গাসপেরিনির অধীনে আমার পক্ষে আর খেলা সম্ভব না। সভাপতি আমাকে সাফ জানিয়ে দেন, আমার চুক্তি বাতিল করা সম্ভব না তাঁর পক্ষে। যে কারণে শেষ ক'মাসে ক্লাবের সঙ্গে দূরত্বের সৃষ্টি হয় আমার। আমাকে স্কোয়াড থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়, আমি একা একা অনুশীলন করতে থাকি।'

সভাপতিকেও দুষেছেন গোমেজ, 'যে ক্লাবকে আমি এত কিছু দিলাম, সে ক্লাবের মানুষজন আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করল! সভাপতির সাহস ছিল না কোচকে বলার, যেন তিনি আমার কাছে ক্ষমা চান।'


পরের দলবদলেই ক্লাব ছেড়ে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ায় পাড়ি জমান গোমেজ। ৫০ লাখ ইউরোর বিনিময়ে ৩৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গারকে কিনে নেয় স্প্যানিশ ক্লাবটা। এ নিয়ে সেভিয়ার হয়ে ১৯ লিগ ম্যাচে ৩ গোল করেছেন তিনি।