আর্জেন্টিনা- ব্রাজিল জুটিতে উড়ছে বসুন্ধরা

সেমিফাইনালে চলে গেল বসুন্ধরা।ছবি: শামসুল হক

বসুন্ধরা কিংস ক্লাব–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই বলেন এখনো পুরোপুরি ফিট নন তাদের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরা। এতে যেন বয়েই গিয়েছে বেসেরার! আজও গোল পেয়েছেন তিনি, আর বসুন্ধরাও পেয়েছে জয়। টানা তিন ম্যাচে গোল পেয়েছেন বেসেরা। শেখ জামাল ধানমন্ডিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। অন্য গোলটি ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রবসন ডি সিলভার।

বেসেরার চেয়ে এক গোল কম করলেও ম্যাচসেরা হওয়ায় রবসনের ধারেকাছে কেউ নেই। তিন ম্যাচেই ম্যাচসেরা হয়েছেন রবসন। নতুন মৌসুমে বসুন্ধরার মোট ৬ গোলের পাঁচটিই বেসেরা ও রবসনের। অন্য গোলটি আত্মঘাতী।

বল দখলের লড়াই চলছে।
ছবি: প্রথম আলো

বসুন্ধরার বিপক্ষে শেখ জামাল পারবে না, তা অনুমেয়-ই ছিল। ব্যবধানটা কেমন হতে পারে, তাই ছিল দেখার বিষয়। বসুন্ধরার আক্রমণভাগের সামনে রক্ষণ সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে জামালকে। অতিরিক্ত চাপে মাংসপেশিতে টান নিয়ে প্রথমার্ধেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে জামালের সেন্টারব্যাক রেজাউল করিমকে। ব্যবধানটা আরও বেশি হয়নি, জামালের সান্ত্বনা বলতে এই যা। তবে ধানমন্ডির দলটিও পেয়েছিল গোলের সুযোগ, যা তালগোল পাকিয়ে নষ্ট করেছেন তাদের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড পা ওমর জোবে।

ফেডারেশন কাপের শুরু থেকেই অস্কার ব্রুজোন ৪-৩-৩ ফরমেশনে দলকে খেলাচ্ছেন। তবে স্প্যানিশ এই কোচ মানেই প্রতি ম্যাচের একাদশেই পরিবর্তন। আজ মাসুক মিয়াকে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে ফিরিয়ে এনেছেন। মাসুকের ওপরে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে জুটি বেঁধে খেলার সুযোগ হয়ে যায় দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন ও জোনাথন ফার্নান্দেজের। নাম্বার নাইন হিসেবে আর্জেন্টাইন রাউল বেসেরা। ত্রিভুজ আকৃতিতে দেখা দিলেন লাতিন ত্রয়ী। ডান প্রান্তে মতিন মিয়া ও বাঁ প্রান্তে মাহবুবুর রহমান।

রবসন, জোনাথন ও বেসেরার বোঝাপড়াটা এখনো পুরোপুরি জমে না উঠলেও এতেই উতরে যাচ্ছে। বিশেষ করে রবসনের পায়ের ঝলক বরাবরই আলো কেড়ে নেয়। তবে তাঁর অতিরিক্ত বলের দখল রাখা কখনো কখনো খেলার ছন্দ কিছুটা হলেও নষ্ট করে। আজ অনেকটা ফ্রি রোলে খেলেছেন। মাঠের সব জায়গায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। একক প্রচেষ্টায় গোল করার মতো কয়েকটি সুযোগ নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। কিন্তু কখনো ক্রসবার উঁচিয়ে মেরেছেন, আবার কখনো দেরি করে শট নেওয়ায় ব্লক করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার।

ফ্রিকিক আটকানোর সুযোগ পাননি জামাল গোলরক্ষক।
ছবি: প্রথম আলো

আজ মনে হচ্ছিল শুধু ভালো খেলার সান্ত্বনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে তাঁকে। কিন্তু শেষ দিকে ফ্রিকিক থেকে দুর্দান্ত গোল করে আলোটা নিজের দিকেই রেখেছেন। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর ডান পায়ের ফ্রিকিক সরাসরি জালে জড়িয়ে যায়।
খেলার সৌন্দর্যে রবসনের প্রতিযোগিতাটা স্বদেশি জোনাথনের সঙ্গে। রবসনের গোলের আগ পর্যন্ত ম্যাচে জোনাথনের কার্যকারিতা ছিল বেশি। ১০ মিনিটে প্রথম গোলের উৎস এই মিডফিল্ডারই। বিশ্বনাথের এরিয়াল থ্রু ডান প্রান্ত থেকে প্রথম স্পর্শেই ঠিকানা লেখা ক্রস করেন জোনাথন। দূরের পোস্ট থেকে পা ছোঁয়াতে কোনো ভুলই করেননি বেসেরা, ১-০।

৩৪ মিনিটে ২-০ করতে পারতেন জোনাথন নিজেই। বেসেরার সঙ্গে লাতিন ছন্দে ওয়ান টু ওয়ানে বক্সে প্রবেশ করেছিলেন। প্রতিপক্ষ দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে নেওয়ার তাঁর শট গোললাইন থেকে স্লাইড করে রক্ষা করেন শেখ জামালের রাইটব্যাক মোজাম্মেল হোসেন। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বসুন্ধরার চেয়ে বেশি ভালো খেলেছে শেখ জামাল। সমতায়ও ফিরতে পারত ধানমন্ডির দলটি। ৪২ মিনিটে গোলের সহজ একটি সুযোগ নষ্ট করেছেন পা ওমর জোবে। সোলোমন কিংয়ের থ্রুতে বসুন্ধরা রক্ষণভাগ আলগা হয়ে গেলে গোলরক্ষক আনিসুর রহমানকে একা পেয়েছিলেন জোবে। ক্রসবার উঁচিয়ে বলটি বাইরে মারেন গাম্বিয়ান এই ফরোয়ার্ড।

ম্যাচসেরা রবসন গোলও পেয়েছেন।
ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয়ার্ধে আবার ম্যাচের লাগাম টেনে ধরে বসুন্ধরা। কিন্তু চলতে থাকে গোল মিসের মহড়া। ৬৩ মিনিটে পালা করে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন মাহবুবুর রহমান ও বেসেরা। ডান প্রান্ত থেকে বিশ্বনাথের ক্রসে আনমার্কড অবস্থায় হেড নেন মাহবুবুর। গোলরক্ষক মামুন খান সেভ দিলে ফিরতে বলে পা লাগিয়েছিলেন বেসেরা। এবার গোললাইন থেকে সেভ করেন জামালের ডিফেন্ডার।

এর ৫ মিনিট পরেই বক্সের মধ্যে থেকে ক্রসবার উঁচিয়ে মারেন রবসন। অবশ্য এই ক্ষত মিটিয়েছেন ৮৯ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে গোল করে। রবসনের রক্ষণচেরা পাস নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই জোনাথনকে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে বক্সের বাইরে ফাউল করেন গোলরক্ষক মামুন। সেই ফ্রিকিক থেকেই ২-০ করেছেন রবসন।
এখন পর্যন্ত অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছে বসুন্ধরা। ৭ জানুয়ারি ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে তারা। আগামীকাল আবাহনী লিমিটেড ও উত্তর বারিধারার মধ্যকার জয়ী দল হবে বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ।