আর্জেন্টিনার রক্ষণে মুগ্ধ ব্রাজিল কোচ

দারুণ খেলেছে আর্জেন্টিনার রক্ষণছবি: রয়টার্স

গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হারল ব্রাজিল। কোচ তিতের অধীন এই প্রথমবারের মতো ঘরের মাটিতে হারের স্বাদ পেলেন নেইমাররা। আর হারটাও এল বড্ড বিদ্‌ঘুটেভাবে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে, তা–ও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে। হারতে অবশ্যই চাননি তিতে!

ম্যাচ হারলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার প্রশংসা করতে কিপটেমি করেননি ৬০ বছর বয়সী এই কোচ। গোটা ম্যাচ আর্জেন্টিনা যেভাবে ব্রাজিলের আক্রমণভাগকে বোতলবন্দী করে রাখল, তিতের চোখে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে, ‘আর্জেন্টিনাকে বাহ্বা দিতেই হবে। ওরা দুর্দান্ত রক্ষণ করেছে। গোলকিপার থেকে শুরু করে রক্ষণভাগের চারজন, সবাই অসাধারণ খেলেছে। তাই ম্যাচ যতই নেতিবাচক হোক না কেন, সেটা বলে আমাদের ব্যর্থতা আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই।’

আর্জেন্টিনার রক্ষণে মুগ্ধ ব্রাজিল কোচ
ছবি: রয়টার্স

এবার কোপা জিতলে টানা দুবার কোপা জেতা হয়ে যেত। নেইমার পেতেন তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম কোপার স্বাদ। কিছুই হয়নি। তিতের খারাপ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যতটা খারাপ লাগছে, তার চেয়ে বেশি তিতে বিরক্ত ফাইনালে দুই দলের খেলার মান নিয়ে। যে পরিমাণ ফাউল করেছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা, তিতে তো সরাসরি নেতিবাচক ফুটবলই বলে দিয়েছিলেন এ ধরনের খেলাকে, ‘খারাপ লাগছে অবশ্যই। আমার কাছে যেটা মনে হয়, ম্যাচটা অনেক বেশি শরীরনির্ভর ছিল। নেতিবাচক ফুটবল হয়েছে। সব সময় ফাউল হচ্ছিল। রেফারিও বাঁশি বাজাচ্ছিলেন বারবার। খেলায় কোনো ছন্দ ছিল না।’

সুযোগ বুঝে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল সংস্থা কনমেবলকেও ধুয়ে দিয়েছেন তিতে। যেভাবে তাড়াহুড়া করে কোপার আয়োজন করা হয়েছে ব্রাজিলে, গোটা ব্যাপারটাই বিরক্তিকর ঠেকেছে তিতের কাছে, ‘এখন কিছু কথা বলা দরকার। এই প্রতিযোগিতা এত তাড়াতাড়ি যাঁরা আয়োজন করেছেন, তাঁদের বেশ কিছু কারণে জবাবদিহি করতে হবে। মাঠের মান অনেক খারাপ ছিল। আমরা চোটের কারণে এভারটনকে হারাতেই বসেছিলাম আরেকটু হলে। পিচের কারণে ও আঙুলে চোট পেয়েছে। আমি কনমেবলের সভাপতি আলেহান্দ্রোর কথা বলছি, যিনি অনেক অল্প সময়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছেন এখানে।’

ব্রাজিলকে সুযোগই দেয়নি আর্জেন্টাইন রক্ষণ
ছবি: রয়টার্স

মাঠে মেসি-নেইমার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-ই করেছেন। একচুলও ছাড় দেননি একে অন্যকে। কিন্তু যে-ই খেলা শেষ, তাঁরা ভুলে গেলেন মাঠের সেই পেশাদারি তিক্ততা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর খেলা, সমর্থকেরা একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ লালন করেন। অথচ দ্বৈরথের দুই নায়কই ম্যাচ শেষে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে তৈরি করলেন অসম্ভব সুন্দর এক দৃশ্য। কে যেন বলছিলেন, আজ মাঠে খেলা যা-ই হোক, দি মারিয়ার গোল কিংবা মেসির সেই দৌড়, নেইমারের সেই ড্রিবলিং—মারাকানার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছে ম্যাচের পরই। স্বাভাবিকভাবেই সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সংবাদ সম্মেলনে। তিতে ব্যাপারটাকে নিয়েছেন ইতিবাচকভাবেই, ‘আমি এর আগেও বলেছি, খেলার মাঠে নেইমার ও মেসি প্রতিপক্ষ, কিন্তু শত্রু নয়। এমন দৃশ্য ফুটবলই আপনাদের দেখাবে। ফুটবলের সবচেয়ে বড় গুণ এটাই। খেলাটা আপনাকে খেলোয়াড়দের মানবিক দিকটা দেখাবে।’