আলফাজ আবার মোহামেডানে, নতুন ভূমিকায়

নতুন ভূমিকায় দারুণ উচ্ছ্বসিত আলফাজ আহমেদ। এ যেন ঋণ শোধের সুযোগ। নব্বইয়ের দশকে সাদা-কালো জার্সিতেই তো তাঁর ‘আলফাজ’ হয়ে ওঠা। আজ এত বছর পর সেই ঋণের কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ। সেই সুযোগ তিনি নেবেন না কেন! তাই যখন প্রস্তাব এল নতুন মৌসুমে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করার, সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি।

মোহামেডানের সহকারী কোচ হলেন আলফাজ আহমেদ।
ফাইল ছবি

ফুটবল ছেড়েছেন সেই ২০১৩ সালে। ২০০৮ সালে জাতীয় দল থেকে বিদায়ের পর ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন আরও পাঁচ বছর। এই মোহামেডানের জার্সি গায়ে দিয়েই। এবার কোচিং স্টাফের একজন সদস্য হিসেবে নতুন দিনের সন্ধানে থাকা মোহামেডানকে সাহায্য করতে চান, ‘আমি যে মোহামেডানে খেলেছি, সেই মোহামেডান এখন আর নেই। মাঝখানে নানা কারণে এলোমেলো। গত বছর থেকে মোহামেডান আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন ম্যানেজমেন্টের অধীনে সহকারী কোচের দায়িত্বটা নিলাম; বলতে পারেন, এই দায়িত্বের মাধ্যমে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার একজন হতেই।’

আলফাজ থাকবেন ইংলিশ কোচ শন লিনের অধীনে। দুই মৌসুম ধরেই লিনের ওপর আস্থা মোহামেডান ম্যানেজমেন্টের। প্রায় ভঙ্গুর একটা দলকে এই ইংলিশ কোচই মোটামুটি পথ দেখিয়েছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া সবশেষ মৌসুমে লিনের অধীনে বেশ কয়েকটি ম্যাচে চমক দেখিয়েছিল একসময়ের বাংলাদেশের ফুটবল পরাশক্তিরা।

মোহামেডানের সঙ্গে আলফাজের চুক্তি আপাতত এক বছরের। ইতিমধ্যেই নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে গেছেন তিনি। ৫ নভেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবেন নিজের পুরোনো কর্মক্ষেত্রে নতুন ভূমিকায়।

কোচ হিসেবে আলফাজের শুরুটাতে অবশ্য ছেদ ফেলেছে করোনাভাইরাসই। সবশেষ মৌসুমে মোহামেডানের সাবেক তারকা উত্তর বারিধারার কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। মোহামেডানের সহকারী কোচের ভূমিকাটাকে আলফাজ কোচ হিসেবে নিজের শেখার উপলক্ষ হিসেবেও দেখছেন, ‘কোচ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই আমি। মোহামেডানের সহকারী কোচ হিসেবে আমি শন লিনকে পাব। এই ইংলিশ কোচ উঁচুমানের। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব। ক্লাবের প্রতি টান আমার শেখার কালকে আরও সমৃদ্ধ করবে।’ এর আগে কিশোর ফুটবলারদের সঙ্গে কাজ করে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১২ দল নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া সফরের অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর।

‘আমি যে মোহামেডানে খেলেছি, সেই মোহামেডান এখন আর নেই। মাঝখানে নানা কারণে এলোমেলো। গত বছর থেকে মোহামেডান আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন ম্যানেজমেন্টের অধীনে সহকারী কোচের দায়িত্বটা নিলাম; বলতে পারেন, এই দায়িত্বের মাধ্যমে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার একজন হতেই।’
আলফাজ আহমেদ, সহকারী কোচ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব

বেশ অনেক দিন ধরেই মোহামেডান সমর্থকদের জন্য বিরাট এক হতাশার নাম। ১৮ বছর ধরে লিগ শিরোপা ঘরে ওঠে না ঐতিহ্যবাহী ও দর্শকপ্রিয় এ ক্লাবের। ক্যাসিনো–কাণ্ড ক্লাবের সুনামকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আলফাজ এসব ব্যাপার মাথায় রেখেও নিজের আশাবাদ জানাতে ভোলেননি, ‘আমি মনে করি, গত মৌসুমের আগে মোহামেডানের ম্যানেজমেন্টে যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে আশাবাদী হওয়াই যায়। কর্মকর্তারা চেষ্টা করছেন। গত মৌসুমে দলটাও মোটামুটি ভালো হয়েছিল। এবার সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আশা করি ভালো করব। নিজের কাজ দিয়েই মোহামেডানকে আবারও শীর্ষ দলে পরিণত করতে চাই।’

দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স—সব বড় ক্লাবেই খেলেছেন এই তারকা ফুটবলার। তবে ১৯৯৫ সালে মোহামেডানে যোগ দিয়েই নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। ১৯৯৯ সালে অধিনায়ক হিসেবে লিগ জিতিয়েছিলেন সাদা-কালো শিবিরকে।