আলফাজের মোহামেডানের জয়ের হ্যাটট্রিক

মোহামেডান জিতেছে ডিফেন্ডার মুনজির কুলদিয়াতির (৪ নং) একমাত্র গোলে।ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রধান কোচ শন লেন ছুটিতে। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে সহকারী কোচ আলফাজের অধীনে যেন উড়ছে মোহামেডান। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে ১-০ গোলে হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক উদ্‌যাপন করল সাদা–কালো দলটি। জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছেন মোহামেডানের ডিফেন্ডার মুনজির কুলদিয়াতি।
লিগের প্রথম পর্বের ১২ ম্যাচে মোহামেডানের জয় ছিল ৫টি। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে যেন অন্য চেহারায় মোহামেডান। আরামবাগ ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের পর এবার হারাল শেখ রাসেলকে। লিগে কঠিন এক বাধাই পার করল আজ মোহামেডান।

ফুটবল ক্যারিয়ারে দীর্ঘ সময় আলফাজ খেলেছেন মোহামেডানের জার্সিতে। সেই আলফাজ এখন দলের সহকারীর দায়িত্বে। ম্যাচ শেষে আলফাজের কণ্ঠে তাই বাড়তি উচ্ছ্বাস। যদিও টানা তিন ম্যাচ জয়ের পেছনে সব কৃতিত্ব দিতে চাইলেন ফুটবলারদের, ‘লকডাউনের মধ্যে আমাদের অনুশীলন চলেছে পুরোদমে। শন এখানে নেই। কিন্তু কোচ যেভাবে আমাকে অনুশীলনসূচি দিয়েছে, সেটাই মেনে মাঠে খেলিয়েছি। এই সাফল্যের সব কৃতিত্ব আসলে ফুটবলারদের।’

এই দলটাকে লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের দুই বা তিনের মধ্যে দেখতে চাই আমরা।
আলফাজ আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত কোচ, মোহামেডান

মোহামেডানের এই জয়ের ধারাবাহিকতা শেষ পর্যন্ত দেখতে চান আলফাজ, ‘কোচের অনুশীলন মেনে এমন সাফল্য পাওয়ায় আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা সবাই ফুটবলারদের বাড়তি উৎসাহ দিচ্ছি। নতুন কমিটি এসেও তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। এই দলটাকে লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের দুই বা তিনের মধ্যে দেখতে চাই আমরা।’

মোহামেডানের ডাগআউটে আলফাজ আহমেদ।
ছবি: প্রথম আলো

কাগজে–কলমে শক্তিতে মোহামেডানের চেয়ে এগিয়ে শেখ রাসেল। জাতীয় দলের ফুটবলার মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে মাঝমাঠে বখতিয়ার দুশোবেকভ। আর আক্রমণে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ওবে মনেকের সঙ্গে ব্রাজিলিয়ান জিয়ানকার্লো লোপেস রদ্রিগেজ। কিন্তু সেই শেখ রাসেলকে আজ বেশ নিষ্প্রভ মনে হলো মাঠে।
যদিও দুয়েকবার ওবে মনেকে গোলের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কখনো পোস্টে লেগে ফিরেছে বল। ম্যাচের ৫০ মিনিটে এসে চোটে পড়েন ওবে মনেকে, কোচ সাইফুল বারী বাধ্য হয়েই তুলে নেন তাঁকে মাঠ থেকে। কিন্তু ওবে মনেকের উঠে যাওয়ার পর আক্রমণের ধারও অনেকটা কমে গেছে শেখ রাসেলের।

বরং গত দুই ম্যাচে যেমন আক্রমণাত্মক মোহামেডানকে দেখা গেছে, আজও শুরু থেকে তেমনই খেলেছে তারা। ম্যাচের ৩ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত মোহামেডান। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আতিকুজ্জামানের থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে মনজুর কুলদিয়াতি দারুণ এক হেড করেন। কিন্তু সে যাত্রায় গোললাইন সেভ করেন শেখ রাসেলের ডিফেন্ডার সিউভুস আসরোরভ।

এই হেডেই গোল করেছেন কুলদিয়াতি।
ছবি: প্রথম আলো

এরপর ৩৬ মিনিটে আর কুলদিয়াতিকে আটকাতে পারেনি শেখ রাসেল। কর্নার থেকে হাবিবুর রহমানের উড়ে আসা বলে দারুণ দক্ষতায় হেডে কুলদিয়াতি গোল করেন।
বিরতির ঠিক পরপরই মোহামেডান ব্যবধান দ্বিগুণ করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু জাফর ইকবাল যে এভাবে সুযোগ নষ্ট করবে কে জানত! ডান প্রান্ত থেকে মোহামেডানের ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড ইয়াসান ওউয়াচিংয়ের বাড়িয়ে দেওয়া বলে টোকা দিলেই চলত। কিন্তু ফাঁকা পোস্ট পেয়েও জাফর ইকবাল বল পাঠালেন বাইরে! আসলে দ্বিতীয়ার্ধে সময় যত গড়িয়েছে, ততই চাপে পড়েছে শেখ রাসেল। সেই চাপ সামলে সেভাবে আক্রমণেই উঠতে পারেনি। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে অবশ্য বখতিয়ার দুশোবেকভ বক্সে ঢুকেছিলেন বল নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বল তুলে দেন মোহামেডান গোলরক্ষক হোসেন সুজনের হাতে।

প্রথম পর্বে শেখ রাসেলের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল মোহামেডান। কিন্তু এবার জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে সাদা–কালোরা। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে শেখ রাসেলকেও টপকে গেল মোহামেডান। ১৫ ম্যাচে ৮ জয়, ৪ ড্র, ৩ হারে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে উঠল মোহামেডান। আর সমান ম্যাচে ৮ জয়, ২ ড্র ও ৫ হারে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে শেখ রাসেল।