আলো ছড়ানো পগবা বন্ধুর ‘ঠোকর’ ভুলে গেছেন
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে পল পগবাকে নিয়ে সমালোচনা কম হয় না। ধারাবাহিক হতে না পারাই তার কারণ। কিন্তু ফ্রান্সের জার্সিতে সেই একই খেলোয়াড় যেন অন্য মানুষ—কাল জার্মানি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
ইউরোয় জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছে ফ্রান্স। গোলটিও আত্মঘাতী। পগবা এ ম্যাচে কেমন খেলেছেন, তা স্কোরলাইন বোঝাতে ব্যর্থ।
ফরাসিদের তারকাখচিত আক্রমণভাগের—করিম বেনজেমা, আঁতোয়ান গ্রিজমান ও কিলিয়ান এমবাপ্পে—সঙ্গে মাঝমাঠের যোগসূত্র ছিলেন ইউনাইটেড মিডফিল্ডার।
২০ মিনিটে তাঁর অসাধারণ পাসটাই দেখুন, জার্মান ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস যার পরিণতিতে গোল হজম করলেন, ডান পায়ের বাইরের অংশ কী দুর্দান্ত ব্যবহার!
সেখান থেকে লুকাস হার্নান্দেজের ক্রস, বল ‘ক্লিয়ার’ করতে হামেলসের পা বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এদিকে ইউনাইটেড–সমর্থকেরা ভাবতে পারেন, গত মাসে ইউরোপা লিগের ফাইনালে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে হারের ম্যাচে কোথায় ছিলেন এই পগবা!
দুঃখিত, এই পগবাকে বোধ হয় শুধু ফ্রান্সের জার্সিতেই দেখা সম্ভব। কাল ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১২ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়েছেন পগবা, সর্বোচ্চ ১৩ বার জিতেছেন বল দখলের লড়াই আর দলকে এনে দিয়েছেন সর্বোচ্চ ৪টি ফাউল—তাঁকে ফাউল করে থামাতে বাধ্য হয়েছে জার্মান রক্ষণ।
এর সঙ্গে অহর্নিশ জার্মানি ডিফেন্সের ছিদ্র গলে বাড়ানো পাসের পসরা তো ছিলই। এনগোলো কান্তে দুর্দান্ত খেললেও ম্যাচসেরা পগবা ছাড়া আর কে!
কান্তের কথায় পরে আসা যাবে। আগে পগবাকে জড়িয়েই অন্য একটি ঘটনা বলা যাক। ২৮ বছর বয়সী এ মিডফিল্ডার কাল রাতে জার্মান রক্ষণের ‘ঠোকর’ও খেয়েছেন। ম্যাচের প্রায় আধা ঘণ্টার মাথায় জার্মান ডিফেন্ডার আন্তনিও রুডিগার পগবাকে বোতলবন্দী রাখতে তাঁর পেছনে লেগেছিলেন। তখন ক্যামেরায় ধরা পড়ে দৃশ্যটি।
পগবাকে পেছন থেকে জড়িয়ে মুখটা তাঁর পিঠে রেখেছিলেন চেলসিতে খেলা রুডিগার। ফরাসি তারকা মাঠে এর প্রতিবাদ করলেও মাঠের রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি, এমনকি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রযুক্তিও (ভিএআর) পাত্তা দেয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে হাস্যরস চলেছে। রুডিগারের কামড়ের শিকার হয়েছেন পগবা—এমন অভিযোগও তোলেন কেউ কেউ। কিন্তু পগবা এসব তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুবাদে দুজনেই বন্ধু।
তাই ওই ঘটনা নিয়ে পগবার কোনো অভিযোগ নেই, ‘আমরা বন্ধু। এটা এমন কিছুই না। টিভিতে তো সবাই দেখেছে, ওটা ওখানেই শেষ, এখন তা অতীত। এটার জন্য আমি হলুদ কার্ড কিংবা লাল কার্ড দেখানোর দাবিতে কান্নাকাটি করছি না। সে হালকা করে আমার ওপর ঠোকর মেরেছে।’
ইউনাইটেডের চেয়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলায় বেশি তৃপ্তি পাওয়ার কথা এর আগে সরাসরি বলেছেন পগবা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটির হয়ে তাঁর আক্রমণে ওঠার স্বাধীনতা থাকলেও রক্ষণ সামলানো মূল কাজ।
কিন্তু ফ্রান্সের জার্সিতে কোচের খেলানো ছকের কারণে আরও বেশি স্বাধীনতা পান তিনি। খেলা তৈরির কাজে তাঁর অংশগ্রহণ বেশি দেখা যায়। পাশে এনগোলো কান্তের মতো কেউ থাকলে তো কথাই নেই।
একজন বল কাড়ছেন তো আরেকজন তা নিয়ে ফাঁকা জায়গা বের করছেন, কাল এভাবে খেললেও আর কোনো খেলোয়াড় পগবার চেয়ে বেশি হেড ও ‘ইন্টারসেপ্ট’ করতে না পারায় তাঁকে আলাদা করে চোখে পড়েছে সবার।
এ দুজনের রসায়ন কতটা ভালো সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছে পরিসংখ্যান—পগবা ও কান্তে ফ্রান্সের মূল একাদশের হয়ে ২৮ ম্যাচে মাঠে নেমে কখনো হারেননি। ২২ জয় ও ৬ ড্র।