ইঁদুর-বানরদের সুবাদে লাভ তুলছেন রোনালদোরা

তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে ফুটবলে।ছবি: এএফপি

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তো বটেই, তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থরাও ভীষণ বিস্মিত হতে পারেন। মাঠে তাঁদের খেলা, দৌড়াদৌড়ি সর্বোপরি ‘মুভমেন্ট’-এর ভিডিও থেকে নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকেন কোচ। ধরুন, পর্তুগাল জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা জানতে পারলেন, এভাবে ভিডিও থেকে মাঠে তাঁরা কেমন খেলছেন, সে বিশ্লেষণ করার কাজটা করা হচ্ছে অন্য সব প্রাণী ও অঙ্গের আচরণ ধরতে ব্যবহার করা প্রযুক্তি দিয়ে। এই যেমন ধরুন—ইঁদুর, বানর ও মানুষের চোখের নড়াচড়া।

বার্তা সংস্থা এএফপির এই খবর এতক্ষণে রোনালদো এবং তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থদের কানে পৌঁছানোর কথা। সংবাদ সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের প্রতিষ্ঠান ‘মেট্রিকা স্পোর্টস’-এর স্প্যানিশ প্রধান নির্বাহী রুবেন সাভেদ্রা জানিয়েছেন, ইঁদুরের নড়াচড়া ও আচরণ বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্যকে রূপান্তর করে ‘মাঠে খেলোয়াড়দের চলাফেরা’ ধরতে ব্যবহার করা এমন কঠিন কোনো কাজ না।

সাভেদ্রা মেট্রিক স্পোর্টসের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এ প্রতিষ্ঠানের অন্য সহপ্রতিষ্ঠাতা আর্জেন্টাইন ব্রুনো দাগনিনো। দুজনে নেদারল্যান্ডসে গিয়েছিলেন পিএইচডি করতে। দাগনিনো তখন বানর ও মানুষের চোখের নড়াচড়া নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। নিজেদের মধ্যে বিজ্ঞান ছাড়াও অন্য এক বিষয়ে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাভেদ্রা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে দুটি মিল ছিল। বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত হিসেবে লিওনেল মেসি তো ছিলই। আর আমাদের বিভাগে শুধু আমরা দুজনই ছিলাম, যারা ফুটবল ভালোবাসতাম। ওখানে বিজ্ঞান নিয়ে ব্যস্ত অনেকেরই শখ বলতে কিছু ছিল না না। ভাগ্যিস, ফুটবল নিয়ে কথা বলতে পারতাম আমরা দুজন।’

সাভেদ্রা ও দাগনিনোর সঙ্গে আরেক আর্জেন্টাইন এনজো আনজিয়েত্তা যোগ দেওয়ার পর পরিপূর্ণ হয় তাঁদের দল। আনজিয়েত্তার ভিডিও প্রযোজনার প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনজন মিলে এমন একটি প্রকল্প উদ্ভাবন করেন, যা ভিডিও বিশ্লেষণের সঙ্গে অন্য তথ্যগুলোও উপস্থাপন করতে পারে। এর আগে এসব তথ্য দিতে হলে ভিন্ন কোথাও বানিয়ে তার পর যোগ করতে হতো। কিন্তু এই তিনজন মিলে তথ্য ও ভিডিওর সন্নিবেশ ঘটিয়ে এমন এক সফটওয়্যার বানালেন, যেখানে ফুটবল বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে।

সাভেদ্রার ভাষায়, ‘শুধু গ্রাফ ও একগাদা তথ্য ক্লাবগুলোর তেমন কাজে আসছিল না।’

বাঁ থেকে দাগনিনো, সাভেদ্রা ও আনজিয়েত্তা।
ছবি: টুইটার

সাভেদ্রাদের এই ‘সিস্টেম’ মাঠে ফুটবলাররা কতটা জায়গা নিয়ে খেললেন, শুধু এসব তথ্যই দেয় না। খেলার দক্ষতা ও ম্যাচের নানা সময় তাঁদের অবস্থা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ ও তথ্য দেয়। পর্তুগাল ও প্যারাগুয়ে জাতীয় দল ছাড়াও সান্তোস ও মেলবোর্ন ভিক্টরির মতো ক্লাব এই সিস্টেম ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। এ জন্য বছরে দলগুলোকে ব্যয় করতে হচ্ছে এক লাখ ইউরো। বিভিন্ন ক্লাব ও দল এত সহজে খেলোয়াড়দের তথ্য বিশ্লেষণ করার সুযোগটা লুফে নিয়েছে। আর এই প্রকল্পে লাভবান হওয়ার পর মুফতে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করার সুযোগ দিচ্ছে। অর্থ ব্যয় করে নেওয়া সফটওয়্যারের সব সুবিধা না পেলেও ছোট ছোট ক্লাব বা আর্থিকভাবে দুর্বল একাডেমিগুলোর জন্য এটা দারুণ এক সুযোগ। এটি ডাউনলোড করে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের সাধারণ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে পারবেন যে কেউ। এরই মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন একাডেমি এই বিনা মূল্যে পাওয়া সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে। শুধু ফুটবলই নয়, রাগবি, ক্রিকেট ও আইস হকির ক্ষেত্রেও তথ্য দিতে পারে এই ওয়েবসাইট।

বড় ক্লাবগুলো অনেক টাকা দিয়ে মেট্রিকের সেবা পেলেও এতে তাঁদের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিচার করতে সময় অনেক কম লাগছে। সাভেদ্রার ভাষায়, ‘আগে এসব হাতে হাতে করতে হতো। কিন্তু এখন প্রচুর সময় বেঁচে যাচ্ছে। আগে একজন ভিডিও বিশ্লেষক বসে ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত দেখতে বারবার থামাতেন, বিশ্লেষণ করতেন। একটা ম্যাচের জন্য চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগত। মেট্রিকা স্পোর্টসে মাত্র কয়েকটি ক্লিকে দুই-তিন মিনিটের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে সব।’