ইউনাইটেডকে পেনাল্টি আদায় করতে শেখাননি মরিনিও

ইউনাইটেডের পেনাল্টি ভাগ্যে নিজের কোনো অবদান স্বীকার করেত রাজি নন মরিনিও।ছবি: এএফপি

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে সবার আগে মুখ খুলেছিলেন জোসে মরিনিও। গত মৌসুমের শেষে ছুটি কাটাতে গিয়ে ব্রুনো ফার্নান্দেজকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন মরিনিও। সেই পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে হঠাৎ এই সপ্তাহে আলোচনা বেড়ে গেছে। সে আলোচনা বাড়িয়ে দিয়েছেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। ইউনাইটেড কীভাবে এত পেনাল্টি পায়, এটা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন ক্লপ।

আগামীকালই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে লিভারপুল ও ইউনাইটেড। শিরোপাদৌড়ের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এই ম্যাচের আগে ইউনাইটেডের পেনাল্টিভাগ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটু আলোড়নই তুলেছেন ক্লপ। তাঁর কথায় ইঙ্গিত ছিল মাঠে অতিমাত্রায় নাটুকেপনা করে পেনাল্টি আদায় করেন মার্কাস রাশফোর্ডরা। আবার রাশফোর্ড সে আলোচনায় টেনে এনেছেন মরিনিওকে।

রাশফোর্ড দাবি করেছেন, তাঁদের পেনাল্টি আদায় করা শিখিয়েছেন মরিনিওই! বর্তমানে টটেনহামের দায়িত্বে থাকা মরিনিওর এভাবে এমন বিতর্কে জড়ানো একদম ভালো লাগেনি। তাই বেশ কড়া জবাবই দিয়েছেন রাশফোর্ডকে। বলেছেন সম্ভব হলে পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হোক, কখন থেকে ইউনাইটেড এত এত পেনাল্টি পাচ্ছে!

কাল লড়াইয়ে জিতবেন কে?
ছবি: এএফপি

পেনাল্টি প্রসঙ্গে ক্লপের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন সাবেক রেফারি মার্ক ক্ল্যাটেনবার্গ। এই রেফারির দাবি, এভাবে ম্যাচের আগে রেফারিং নিয়ে কথা বলে আগে থেকেই চাপ সৃষ্টি করছেন ক্লপ। যাতে ম্যাচে ইউনাইটেডের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় দ্বিধায় ভোগেন রেফারি পল। ক্ল্যাটেনবার্গের দাবি, সাবেক ইউনাইটেড কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতো মনস্তত্ত্বের খেলা খেলছেন ক্লপ। এর মধ্যে আবার ক্লপ ঝাঁজালো জবাব দিয়েছেন, বলেছেন তিনি ফার্গুসন নন।

তুমুল এ আলোচনার মধ্যেই আগুনে ঘি ঢেলেছেন রাশফোর্ড। ইউনাইটেডের হয়ে গত আড়াই মৌসুমে ৯টি পেনাল্টি আদায় করেছেন রাশফোর্ড। এ ব্যাপারে এই ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘আগে আমরা কোনো পেনাল্টি পেতাম না। আমার মনে আছে, যখন জোসে ম্যানেজার ছিলেন, তখন পাঁচ–ছয়বার এমন হয়েছে, আমার মনে হয়েছে, পেনাল্টি পাওয়া উচিত ছিল। জোসে পরে আমাকে বললেন, তুমি যেভাবে এটা করো সেটা যথেষ্ট ভালো না হলে তুমি কখনো পেনাল্টি পাবে না। এরপরই আমরা কিছু পেনাল্টি পাওয়া শুরু করলাম—উন্নতির কথা বলতে গেলে, আপনাকে এভাবে শিখতে হবে এবং বুঝতে হবে।’
রাশফোর্ডের ইঙ্গিত পরিষ্কার, মরিনিও তাঁদের পেনাল্টি কীভাবে আদায় করতে হয়, সেটা শিখিয়ে দিয়েছেন। যদিও ইউনাইটেডের পেনাল্টি পাওয়ার পরিসংখ্যান উলে গুনার সুলশারের সময়টায় ফুলে–ফেঁপে উঠেছে। গত আড়াই বছরে ৩২টি পেনাল্টি পেয়েছে ইউনাইটেড। আর সেখানে ক্লপের অধীনে লিভারপুল সাড়ে পাঁচ বছরে পেয়েছে মাত্র ৩০টি। এই দিকটার কথাই সবার সামনে তুলে ধরেছেন ক্লপ।

মরিনিওকে টেনে এনেছেন রাশফোর্ড।
ছবি: এএফপি

মরিনিওকে রাশফোর্ডের এই মন্তব্যের কথা শোনাতেই তাই কড়া জবাব দিয়েছেন মরিনিও। প্রথমে বলেছেন এ নিয়ে কথা বলবেন না, ‘প্রথমত, লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এমনিতেই যথেষ্ট বড় ম্যাচ, আমাকে আর বড় করতে হবে না এটা। এমন এক বড় ম্যাচের আগে আমাকেও সংবাদ শিরোনাম বানাতে হবে না। কারণ জানি, এ ম্যাচ দুই দল ও তাদের সমর্থকদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাই এ ব্যাপারে এখন কোনো মন্তব্য করব না, পরে করব।’

কিন্তু তিনি যে মরিনিও। কথা না বলে কি থাকতে পারেন? তাই ইঙ্গিতেই জবাব দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন তাঁর দিকে তির ছোড়ার আগে পরিসংখ্যান দেখে নিতে, ‘এ নিয়ে যদি আপনাদের (সাংবাদিকদের) কিছু লিখতেই হয়, তাহলে খুব সহজ উপায়ে করুন। পরিসংখ্যান, অপ্টাতে (ফুটবলের পরিসংখ্যানের জন্য বিখ্যাত ওয়েবসাইট) যান, সেখানে গিয়ে ম্যানেজার হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে আমার ১০ মৌসুমের ইতিহাস দেখেন। সেটা তুলনা করে দেখেন এবং এরপর সিদ্ধান্ত নেন।’

মরিনিওর শেখানো বুদ্ধি অনুসরণ করেই দেখা যাচ্ছে, তাঁর অধীনে ২০১৬–১৭ মৌসুমে সাতটি পেনাল্টি পেয়েছে ইউনাইটেড। এবং পরের মৌসুমে পেয়েছে ছয়টি। তৃতীয় মৌসুমে ২৪ ম্যাচেই ছয়টি পেনাল্টি পেয়েছিলেন মরিনিও। এরপরই ছাঁটাই হয়েছেন। মৌসুমের বাকি সময়ে ৯টি পেনাল্টি পেয়েছে উলে গুনার সুলশারের ইউনাইটেড।
পেনাল্টিসংখ্যা গত দেড় মৌসুমে আরও বেড়েছে ইউনাইটেডের। গত মৌসুমে ২২টি পেনাল্টি পেয়েছে ইউনাইটেড। এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগেই দলটি পেয়েছে ১৪টি। আর এ মৌসুমের মাঝপথেই ১১ পেনাল্টি পেয়ে গেছে ইউনাইটেড।