ইউরোতে আলো ছড়িয়ে ক্লাবগুলোর নজর কেড়েছেন যাঁরা

গোসেনস-লোকাতেল্লি-ফিলিপস ; তাঁদের চাইছে সবাইছবি : রয়টার্স

প্রতিটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের পরেই ব্যাপারটা দেখা যায়। তথাকথিত ছোট ক্লাবে খেলা বেশ কিছু খেলোয়াড় দুর্দান্ত খেলে আলো ছড়ান, যাঁদের নিয়ে টুর্নামেন্টের পরেই টানাটানি লাগে বড় ক্লাবগুলোর।


এই ইউরোর পরেও এই ধারার ব্যতিক্রম ঘটবে না, এটা নিশ্চিত। এবারের ইউরোতেও অখ্যাত ক্লাবে খেলা অনেকেই আলো ছড়িয়েছেন। যাঁদের নিয়ে এর মধ্যেই বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। এবার কোন কোন খেলোয়াড়কে নিয়ে টানাটানি শুরু হবে? ইউরোতে আলো ছড়িয়ে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কোনো ‘অখ্যাত’ খেলোয়াড়ের?

২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের স্বপ্নযাত্রার দুই সারথি এল হাজি দিউফ ও সালিফ দিয়াও নাম লিখিয়েছিলেন লিভারপুলে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যাঁদের কেউ তেমন চিনতেনই না। এভারটনের তরুণ ওয়েইন রুনি ২০০৪ সালের ইউরোর পরেই নাম লেখান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ২০০৬ বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলার পর দিনামো মস্কোর পর্তুগিজ মিডফিল্ডার মানিশকে দলে টানে আতলেতিকো মাদ্রিদ। ২০০৮ ইউরোতে আলো ছড়ানো স্পার্তাক মস্কোর রাশিয়ান স্ট্রাইকার রোমান পাভল্যুচেঙ্কোকে দলে টেনেছিল টটেনহাম, সেই ইউরোতেই আলো ছড়ানো রাশিয়ান উইঙ্গার আন্দ্রেই আরশাভিনকে পরের জানুয়ারিতে জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে নিয়ে যায় আর্সেনাল।

২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির জার্সিতে আলো ছড়িয়ে ইউরোপের নজরে আসেন মেসুত ওজিল। সেবার রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব নিয়েই জোসে মরিনিও জানিয়ে দেন, ওজিলকে তাঁর লাগবে! ২০১২ ইউরোর পরপরই ভলফসবুর্গ ছেড়ে বায়ার্ন মিউনিখে নাম লিখিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচ এবং ভ্যালেন্সিয়া ছেড়ে বার্সেলোনায় যান স্প্যানিশ লেফটব্যাক জর্দি আলবা। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর হামেস রদ্রিগেজ আর কেইলর নাভাসকে মোনাকো আর লেভান্তে থেকে দলে টানে রিয়াল মাদ্রিদ। ফাইনাল খেলা আর্জেন্টাইন লেফটব্যাক মার্কোস রোহো স্পোর্তিং লিসবন থেকে নাম লেখান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে।


এবার তেমন দলবদলের অংশ হতে পারেন, এমন ২০ জনের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক!

মিকেল ডামসগার্ড
ছবি : রয়টার্স

মিকেল ডামসগার্ড (উইঙ্গার | ডেনমার্ক | সাম্পদোরিয়া)
সাম্পদোরিয়ায় খেলা ২১ বছর বয়সী এই উইঙ্গারকে কয়জনই–বা চিনতেন ইউরোর আগে? প্রথমে ডেনমার্কের মূল একাদশে সুযোগ পাবেন কি না, সেটা নিয়েই ছিল সংশয়। মাঠেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর সুযোগ পেয়ে যান ডামসগার্ড। আর কী দুর্দান্তভাবেই না সুযোগটা নিয়েছেন এই তরুণ! গত মৌসুমেই সাম্পদোরিয়ায় যোগ দেওয়া ডামসগার্ড এবার ইউরোতে এসেই গতি, মুভমেন্ট ও চাতুর্য দিয়ে নজর কেড়েছেন। ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার বিপক্ষে গোল করেছেন দুটি, যার মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে গোলটি দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে। বার্সেলোনা থেকে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদ, লিভারপুল, রোমা, জুভেন্টাস, ইন্টারের মতো অনেক ক্লাবই ডামসগার্ডের দিকে নজর রাখছে।

মানুয়েল লোকাতেল্লি
ছবি : রয়টার্স

মানুয়েল লোকাতেল্লি (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার | ইতালি | সাসসুয়োলো)
লোকাতেল্লিকে নিয়ে বড় ক্লাবগুলোর মাতামাতি ইউরোর আগে থেকেই। ইউরোতে আলো ছড়িয়ে সে মাতামাতিটা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছেন লোকাতেল্লি, এই যা। ইউরোতে দুই গোল করে নজরে আসা লোকাতেল্লির দিকে জুভেন্টাসের নজর আগে থেকেই। দৌড়ে আছে ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল ও বার্সেলোনার মতো ক্লাবও। অথচ এই লোকাতেল্লির মূল্য না বুঝে বছর দুয়েক আগে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল এসি মিলান। মিলান থেকে দুবছর আগে সাসসুয়োলতে যাওয়ার পর থেকেই নিজের জাত চেনাচ্ছেন ২৩ বছর বয়সী তরুণ।

জোয়াকিম মেয়লে
ছবি : রয়টার্স

জোয়াকিম মেয়লে (ফুলব্যাক | ডেনমার্ক | আতালান্তা)
এবারের ইউরোকে নিঃসন্দেহে ফুলব্যাকদের ইউরো বলা যায়। আলো ছড়ানো সেসব ফুলব্যাকদের মধ্যে ডেনমার্কের জোয়াকিম মেয়লের নাম শুরুর দিকেই থাকবে। কী দুর্দান্তই না খেলেছেন ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তায় খেলা এই তরুণ! দুই গোল করার পাশাপাশি অসাধারণ এক পাসে গোল করিয়েছেন স্ট্রাইকার কাসপার ডলবার্গকে দিয়ে। চেলসি বা ইন্টার মিলানের মতো যেসব দলের ফুলব্যাক দরকার, আতালান্তার এই তরুণের দিকে তাঁদের নজর যাবেই। তার ওপর আবার ডান-বাম দুই প্রান্ত ধরেই সমানতালে খেলতে পারেন মেয়লে।

ক্যালভিন ফিলিপস
ছবি : রয়টার্স

ক্যালভিন ফিলিপস (ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার | ইংল্যান্ড | লিডস ইউনাইটেড)
ইংল্যান্ড যে দুই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবেই ইউরোতে খেলবে, এটা আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল। বোঝা যায়নি যেটা, সেটা হলো মূল একাদশে ডেকলান রাইসের সঙ্গে জর্ডান হেন্ডারসনের জায়গায় ক্যালভিন ফিলিপসের উপস্থিতি। হেন্ডারসনের চোটের সুবাদে সেই যে সুযোগ পেলেন ফিলিপস, পরে হেন্ডারসন সুস্থ হয়েও লিডস ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারকে সরাতে পারেননি একাদশ থেকে। ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার পেছনে এই মিডফিল্ডারের অনেক অবদান। রক্ষণভাগ সামলে রাখার পাশাপাশি রাহিম স্টার্লিংকে দিয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলও করিয়েছেন একটা। ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি আর কেউই দৌড়াননি। সাবেক বুলগেরিয়ান স্ট্রাইকার দিমিতার বারবেতভ এর মধ্যেই তাঁর সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিপসকে দলে নিয়ে আসার জন্য।

জেরেমি দোকু
ছবি : রয়টার্স

জেরেমি দোকু (উইঙ্গার | বেলজিয়াম | রেনেঁ)
জেরেমি দোকু যে প্রতিভাবান, সেটা গত মৌসুম থেকেই বোঝা গিয়েছিল। লিভারপুলের মতো ক্লাব তো আর এমনি এমনি তাঁকে দলে চায়নি! কিন্তু নিয়মিত মূল একাদশে সুযোগ পাওয়া যাবে না দেখে আন্ডারলেখটের এই ফরোয়ার্ড লিভারপুলে না গিয়ে যোগ দেন ফরাসি ক্লাব রেনেঁতে। বেলজিয়ামের মূল একাদশের খেলোয়াড় নন তিনি, তা–ও যে কবার সুযোগ পেয়েছেন, আলো ছড়িয়েছেন। ইতালির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে রোমেলু লুকাকু যে পেনাল্টিতে গোল করলেন, সে পেনাল্টিটা আদায় করেছিলেন দোকুই। রেনেঁর সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ দোকুর পেছনে এবার লিভারপুল ছাড়াও লেগে আছে রিয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখের মতো ক্লাব।

মার্সেল সাবিৎসার
ছবি : রয়টার্স

মার্সেল সাবিৎসার (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার | অস্ট্রিয়া | আর বি লাইপজিগ)
দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা অস্ট্রিয়ার অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি ছিলেন লাইপজিগের মিডফিল্ডার সাবিৎসার। শুধু তা-ই নয়, কয়েক মৌসুম ধরে বুন্দেসলিগায় যে কয়জন মিডফিল্ডার নিয়মিত ভালো খেলছেন, তাঁর মধ্যে সাবিৎসার অন্যতম। ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের সঙ্গে লাইপজিগের চুক্তি আছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এসি মিলান, টটেনহাম ও এএস রোমার মতো ক্লাবগুলো চাইছে তাঁকে।

উরজান চাকির
ছবি : রয়টার্স

উরজান চাকির (গোলকিপার | তুরস্ক | ইস্তাম্বুল বাসাকশেহির)
এবার ইউরোতে সবচেয়ে বেশি সেভ করা গোলকিপারদের তালিকায় তুরস্কের উরজান চাকির ১৮টি সেভ করে আছেন তৃতীয় স্থানে। এই তথ্য শুনলে কে বলবে, তিনি খেলেছেন মাত্র তিন ম্যাচ? তিন ম্যাচেই নিজের জাত চেনানো এই গোলকিপারকে দলে টানার ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ফরাসি লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিল। দলটাকে গত মৌসুমে লিগ জেতানো গোলকিপার মাইক মাইনিয়ান যোগ দিয়েছেন মিলানে, তাঁর জায়গাতেই যাচ্ছেন চাকির।

কাসপার ডলবার্গ
ছবি : রয়টার্স

কাসপার ডলবার্গ (স্ট্রাইকার | ডেনমার্ক | নিস)
কয়েক বছর আগে থেকেই ডলবার্গ ফুটবলপ্রেমীদের কাছে মোটামুটি পরিচিত। আয়াক্সে খেলতেন। দলকে ইউরোপা লিগের ফাইনালেও তুলেছিলেন। সবাই ভেবেছিলেন বড় দলগুলো হয়তো তাঁর প্রতি আগ্রহ দেখাবে, সেটা হয়নি। উল্টো দলের সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়ে ডলবার্গ নাম লেখান ফ্রান্সের নিসে। এবার ইউরোতে ডলবার্গের তিন গোল নিঃসন্দেহে তাঁকে আবারও আলোচনায় নিয়ে আসবে। শুধু গোল করতে পারেন বলেই নয়, গতি-মুভমেন্ট দিয়েও নজর কেড়েছেন তিনি।

রেনাতো সানচেস
ছবি : রয়টার্স

রেনাতো সানচেস (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার | পর্তুগাল | লিল)
পর্তুগিজ এই মিডফিল্ডার এবার যে প্রথম ইউরোতে ভালো খেললেন, তা কিন্তু নয়। ২০১৬ ইউরোতে পর্তুগালের ইউরো জেতার পথে মাঝমাঠে আলো ছড়িয়ে টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনি। সেবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাব তাঁর ওপর আগ্রহী হলেও শেষমেশ সানচেস যোগ দেন বায়ার্নে। কিন্তু জার্মান পরাশক্তিদের হয়ে মোটেও ভালো খেলতে পারেননি। ফলে সোয়ানসি সিটি ঘুরে নাম লিখিয়েছেন লিলে। সেখানে নেইমারদের পিএসজিকে হারিয়ে লিগও জিতেছেন এবার। পাঁচ বছর পর আরেক ইউরোতে আবারও দুর্দান্ত খেলা সানচেসকে এবার দলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা, টটেনহাম, আর্সেনাল ও লিভারপুলের মতো ক্লাব।

ডেকলান রাইস
ছবি : রয়টার্স

ডেকলান রাইস (ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার | ইংল্যান্ড | ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড)
ইংল্যান্ড মাঝমাঠের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় এই রাইসের প্রতি চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলোর আগ্রহ আজকের নয়। এবার ইউরোর পর সে আগ্রহ আরও বেড়েছে। দুর্দান্ত এই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের জন্য আট কোটি পাউন্ড দাবি করেছে ওয়েস্ট হাম। দেখা যাক, তাঁরা প্রত্যাশিত অর্থ পায় কি না!

রবিন গোসেনস
ছবি : রয়টার্স

রবিন গোসেনস (লেফট উইংব্যাক | জার্মানি | আতালান্তা)
রবিন গোসেনসের জার্মানি এবার ইউরোর প্রথম রাউন্ডে রোনালদোর পর্তুগালকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে। সেদিন জার্মানদের চার গোলেই গোসেনসের ছিল বড় অবদান। একটি গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও একটি, পর্তুগালের দুটি আত্মঘাতী গোলের একটি তাঁর পাস ঠেকাতে গিয়ে, জার্মানির আরেক গোলের আক্রমণেও অনেক প্রভাব রেখেছেন গোসেনস। ভাগ্য খারাপ ছিল বলে দুর্দান্ত সাইড ভলিতে করা তাঁর আরেকটি গোল বাতিল হয় সে ম্যাচে। এই ম্যাচের পরেই সবার নজরে আসেন এই লেফট উইংব্যাক। আতালান্তার হয়ে গত দুই মৌসুমে উইংব্যাক হয়েও ২০টির বেশি গোল করা এই তারকার পেছনে ইন্টার মিলান, চেলসি, জুভেন্টাসের মতো ক্লাব আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।

অ্যালেক্সান্ডার ইসাক
ছবি : রয়টার্স

আলেক্সান্ডার ইসাক (স্ট্রাইকার | সুইডেন | রিয়াল সোসিয়েদাদ)
লম্বা স্ট্রাইকাররা সাধারণত বল পায়ে অত কুশলী হন না। প্রথাগত এই ধারণার ব্যতিক্রম হয়ে গত দুই দশকে ইউরোপের ফুটবলে আলো ছড়াচ্ছেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। আর কয়েক বছর ধরে ইব্রার মতো আরেকজনকে পাওয়া গেছে, ইব্রারই দেশ সুইডেনের স্ট্রাইকার ইসাক। ডর্টমুন্ড, সোসিয়েদাদের হয়ে ক্লাব ফুটবলে প্রতিভার ঝলক দেখানো ইসাক এই ইউরোতে নিজেকে নিয়ে এসেছেন পাদপ্রদীপের নিচে। বার্সেলোনার মতো দল তাঁর প্রতি আগ্রহী বলে অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সোসিয়েদাদের সঙ্গে ২০২৬ পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করা ইসাকের ইউরোর পারফরম্যান্সের পর তাঁকে পেতে বার্সা কিংবা অন্য কোনো ক্লাবকে বড় অঙ্কই খরচ করতে হবে।

জোয়াও পালিনিয়া
ছবি : রয়টার্স

জোয়াও পালিনিয়া (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার | পর্তুগাল | স্পোর্তিং লিসবন)
বেলজিয়ামের বিপক্ষে এবারের ইউরোর মহাগুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে স্পোর্তিং লিসবনের তরুণ মিডফিল্ডার জোয়াও পালিনিয়াকে খেলিয়েছিলেন পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। টেকনিক্যাল দিক দিয়ে দানিলো পেরেইরা কিংবা উইলিয়াম কারভালিওর চেয়ে পালহিনিয়া যে অনেক ভালো, এ সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ। লিসবনকে লিগ জিতিয়ে ইউরোতে খেলতে আসা এই তরুণের দিকে এর মধ্যেই হাত বাড়িয়েছে উলভারহ্যাম্পটন ও আতলেতিকোর মতো ক্লাবগুলো।

নিকোলা ভ্লাসিচ
ছবি : রয়টার্স

নিকোলা ভ্লাসিচ (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার | ক্রোয়েশিয়া | সিএসকেএ মস্কো)
২০১৮ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেওয়া ইভান রাকিতিচের জায়গায় ক্রোয়েশিয়া দলে বহুদিন ধরেই খেলানো হচ্ছে সিএসকেএ মস্কোর ভ্লাসিচকে। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে হুটহাট করে গোল করতে বেশ ভালোই পারেন এভারটনে খেলে যাওয়া এই মিডফিল্ডার। এবারের ইউরোতেও নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। এসি মিলান তাঁকে চায়।

স্টিভেন জুবার
ছবি : রয়টার্স

স্টিভেন জুবার (লেফট উইংব্যাক | সুইজারল্যান্ড | আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট)
এবারের ইউরোর ফুলব্যাকদের মধ্যে ইতালির লিওনার্দো স্পিনাৎসোলা, ইংল্যান্ডের লুক শ, ডেনমার্কের জোয়াকিম মেয়লে, আতালান্তার রবিন গোসেনসদের নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও আড়ালে পড়ে যাচ্ছেন সুইজারল্যান্ডের স্টিভেন জুবার। যদিও টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তার রেকর্ড তাঁরই। কোয়ার্টারে বাদ পড়া সুইসদের চারটি গোলই বানিয়ে দিয়েছেন আইনট্র্যাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের এই লেফট উইংব্যাক। বয়সটা একটু বেশিই তাঁর—২৯। এই বয়সে তাঁর প্রতি কোনো বড় দল আগ্রহী হয় কি না, দেখা যাক!

ইয়ানিক ভেস্টারগার্ড
ছবি : রয়টার্স

ইয়ানিক ভেস্টারগার্ড (সেন্টারব্যাক | ডেনমার্ক | সাউদাম্পটন)
ভার্জিল ফন ডাইক যখন সাউদাম্পটন ছেড়ে লিভারপুলে নাম লেখালেন, বিকল্প হিসেবে বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের ভেস্টারগার্ডকেই দলে টেনেছিল সাউদাম্পটন। খারাপ কাউকে যে দলে আনেনি তাঁরা, সেটা প্রিমিয়ার লিগ অনুসরণ করা যে কেউই বলবেন। এবার ডেনমার্কের রক্ষণভাগের অন্যতম প্রধান প্রহরী ছিলেন সাড়ে ছয়ফুট উচ্চতার এই সেন্টারব্যাক। টটেনহাম ও এএস রোমার মতো দলগুলো এর মধ্যেই ভেস্টারগার্ডকে দলে টানার ব্যাপারে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

নিকো এলভেদি
ছবি : রয়টার্স

নিকো এলভেদি (সেন্টারব্যাক | সুইজারল্যান্ড | বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ)
আধুনিক সেন্টারব্যাকের মতো বল পায়ে দুর্দান্ত, খেলতে পারেন রাইটব্যাক হিসেবেও—সুইজারল্যান্ডের এই সেন্টারব্যাক বুন্দেসলিগায় আলো ছড়াচ্ছেন বহুদিন ধরেই। এবার ইউরোতেও বুঝিয়েছেন, কেন বড় দলগুলো তাঁর দিকে নজর দিতে পারে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পেকে যেন পকেটে পুরে রেখেছিলেন। আর্সেনাল ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো ক্লাব আগ্রহী তাঁর প্রতি।

কনরাড লাইমার
ছবি : রয়টার্স

কনরাড লাইমার (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার | অস্ট্রিয়া | আর বি লাইপজিগ)
অস্ট্রিয়ার এই মিডফিল্ডারের সবচেয়ে বড় গুণ—খেলতে পারেন একাধিক পজিশনে। সঙ্গে প্রেসিংয়েও দুর্দান্ত। লাইপজিগকে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে তোলার পেছনে এই মিডফিল্ডারের বড় ভূমিকা ছিল। এবার অস্ট্রিয়াকে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ইউরোর দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলেছেন, নজরে এসেছেন লিভারপুল, টটেনহামের মতো ক্লাবগুলোর।

রোমান ইয়ারেমচুক
ছবি : রয়টার্স

রোমান ইয়ারেমচুক (স্ট্রাইকার | ইউক্রেন | গেন্ট)
শারীরিকভাবে শক্তিশালী প্রথাগত নাম্বার নাইন যেসব দলের দরকার, তাঁরা নজর দিতে পারেন ইউক্রেনের এই স্ট্রাইকারের দিকে। দুটি গোল করেছেন, আক্রমণভাগে খেলেছেনও দুর্দান্ত। এর মধ্যেই ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড আগ্রহ দেখিয়েছে তাঁকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে। বেলজিয়ান লিগে গত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ইয়ারেমচুক।

ইয়ান সমার
ছবি : রয়টার্স

ইয়ান সমার (গোলকিপার | সুইজারল্যান্ড | বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ)
ফ্রান্সের বিপক্ষে কিলিয়ান এমবাপ্পের পেনাল্টি আটকে দেওয়া, দ্বিতীয় রাউন্ড আর কোয়ার্টার মিলিয়ে গোটা পনেরো সেভ করা ইয়ান সমারকে কি সহজে ভোলা যায়? জার্মান বুন্দেসলিগা যাঁরা মোটামুটি অনুসরণ করেন, ইয়ান সমারকে তাঁরা চিনবেন। সাত বছর ধরে বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের গোলপোস্টে ভরসা হয়ে আছেন তিনি। এক বায়ার্ন মিউনিখের মানুয়েল নয়্যার ছাড়া বুন্দেসলিগায় এই সমারের মতো ধারাবাহিক গোলকিপার হয়তো দ্বিতীয় কেউ নেই। কিন্তু ওই যে জুবারের মতো তাঁরও সমস্যা হতে পারে বয়স। ৩২ বছর এই গোলকিপারকে দলে নিতে কে এগিয়ে আসে, দেখা যাক!