ইউরোপিয়ান সুপার লিগ: যা জানার জেনে নিন এখানেই

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে কাল। শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে তিনটি লিগের কিছু ক্লাব মিলে ‘ইউরোপিয়ান সুপার লিগ’ নামে নতুন এক প্রতিযোগিতা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১২টি ক্লাব (আরও ৩ ক্লাবের নাম এখনো প্রকাশ হয়নি) এই সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাতা। তাদের এই লিগ মাঠে গড়ালে চ্যাম্পিয়নস লিগ গুরুত্ব হারাবে। ফিফা ও উয়েফা ছাড়াও শীর্ষ পাঁচ লিগের ফুটবল বোর্ড এ প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

উয়েফা অবশ্য বলে দিয়েছে, ‘কিছু ক্লাবের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই ফন্দি।’ সে যা–ই হোক, শুরুর আগেই ভীষণ বিতর্কে পড়ে যাওয়া এই সুপার লিগ সম্পর্কে আসুন জেনে নিই—

কোন ১২টি ক্লাব সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাতা

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে ছয়টি ক্লাব—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, লিভারপুল, আর্সেনাল ও টটেনহাম হটস্পার। স্প্যানিশ লা লিগা থেকে তিনটি ক্লাব—রিয়াল মাদ্রিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ থেকেও তিনটি ক্লাব—ইন্টার মিলান, এসি মিলান ও জুভেন্টাস। জার্মান বুন্দেসলিগা ও ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ থেকে কোনো ক্লাব সুপার লিগে নেই।

জার্মান ও ফরাসি ক্লাবগুলো কী বলেছে

বুন্দেসলিগা ও লিগ আঁ-র ক্লাবগুলো বলেছে, সুপার লিগে তারা এ মুহূর্তে অংশ নেওয়ায় আগ্রহী নয়। এই ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী বায়ার্ন মিউনিখও। গত ফাইনালে হেরে যাওয়া পিএসজিও সুপার লিগে অংশ নেওয়ায় আগ্রহ দেখায়নি। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে পিএসজি।

প্রতিষ্ঠাতা ১২টি ক্লাব কি ঘরোয়া লিগ ছাড়বে

নিজেদের ঘরোয়া লিগে খেলার পাশাপাশি সুপার লিগে অংশ নিতে চায় প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবগুলো। তবে বিষয়টি বেশ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। জট পাকানো সূচি তো আছেই, কিন্তু তার আগেই ইংল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনের লিগগুলো বলে দিয়েছে, নতুন এই লিগে খেললে ঘরোয়া লিগে নিষিদ্ধ হবে ক্লাবগুলো।

আরও পড়ুন

সুপার লিগে কী পরিমাণ টাকা মিলবে

সুপার লিগ নিয়ে ১২টি ক্লাবের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিষ্ঠাতা ১২টি ক্লাব ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো করে পাবে, করোনার আঘাত কাটিয়ে নিজেদের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য।’ আরও বলা হয়, ‘বার্ষিক এই টুর্নামেন্ট ইউরোপিয়ান ফুটবলের শক্তি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।’ চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী দল এখন যে প্রাইজমানি পেয়ে থাকে, তার চেয়েও সুপার লিগের দলগুলো অনেক বেশি টাকা পাবে। এর আগে ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লা পারিসিয়েন’ জানিয়েছিল, সুপার লিগের ‘শীর্ষ ছয় দল মৌসুমে ৩৫ কোটি ইউরো পাবে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী আট কোটি ইউরোর কাছাকাছি আয়ের আশা করতে পারে।’

সুপার লিগে যেভাবে খেলা হবে
মোট ২০টি দল অংশ নেবে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা ক্লাব ১৫টি। আপাতত ১২টি ক্লাবের নাম প্রকাশিত হয়েছে। বাকি পাঁচটি দলকে আগের মৌসুমের পারফরম্যান্স বিচারে কোয়ালিফাই খেলে আসতে হবে। ১০ দলে ভাগ হয়ে দুটি গ্রুপ বানিয়ে খেলবে ক্লাবগুলো। এখনকার মতোই ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ ভিত্তিতে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি গ্রুপ থেকে শীর্ষ তিন দল উঠবে কোয়ার্টার ফাইনালে। বাকি দুটি স্থানের জন্য দুটি গ্রুপের চতুর্থ ও পঞ্চম দল দুই লেগের প্লে-অফ ম্যাচ খেলবে। এরপর বাকি পথটা চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো। ফাইনাল ছাড়া কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল হবে দুই লেগের ভিত্তিতে।

ম্যাচগুলো কখন হবে
সুপার লিগের ক্লাবগুলো যেহেতু ঘরোয়া লিগেও অংশ নিতে চায়, তাই মৌসুমের সূচি জট পাকিয়ে যেতে পারে। ঠাসা সূচি হয়ে যাবে। আর এমন এক টুর্নামেন্টে ব্যস্ত থাকা মানেই তো চ্যাম্পিয়নস লিগের বিদায়। ঘরোয়া লিগ ও এই লিগে খেলার পর সূচিতে আর কিছু রাখা কঠিন বৈকি। তবে সুপার লিগে অংশ নেওয়া ক্লাবগুলো জানিয়ে সপ্তাহের মধ্যে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনাল হবে এক ম্যাচেরই। মে মাসের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে।

সুপার লিগ কবে শুরু হবে

বার্সেলোনা তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ সুপার লিগ শুরু করতে চায়। তবে ক্লাবগুলোর যৌথ বিবৃতি বলা হয়, আগষ্টে তারা প্রতিযোগিতাটি শুরু করতে চায়

মেয়েদের সুপার লিগ হবে?
ক্লাবগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছেলেদের টুর্নামেন্ট চালু হওয়ার পর মেয়েদের টুর্নামেন্টও শুরু করা হবে। মেয়েদের ফুটবল এগিয়ে নিতেই এ সিদ্ধান্ত।’

সুপার লিগের আয়োজকদের দাবি

রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সুপার লিগেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ফুটবলকে যেকোনো পর্যায়ে সাহায্য করব এবং খেলাটাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাব। ফুটবল একমাত্র বৈশ্বিক খেলা, যেখানে ভক্তসংখ্যা ৪০০ কোটির বেশি। বড় ক্লাব হিসেবে তাদের চাহিদার প্রতি সাড়া দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’

পেরেজের সহসভাপতিদের একজন জুভেন্টাস সভাপতি আন্দ্রেয়া আগনেল্লি বলেছেন, ‘আমাদের ১২টি প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবের বিশ্বজুড়ে কয়েক শ কোটি সমর্থক আছে, ট্রফিসংখ্যা ৯৯টি। এই ক্রান্তিকালে আমরা ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা সংস্কার করেছি, অদূর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে খেলাটিকে একটি টেকসই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। এতে ভক্ত থেকে অপেশাদার খেলোয়াড়েরাও নিয়মিত বড় ম্যাচ দেখার মাধ্যমে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার খোরাক মেটাতে পারবেন।’