ইউরোপিয়ান সুপার লিগের চেষ্টা ছিল মরিয়া আর্তনাদ: জুভেন্টাস সভাপতি

জুভেন্টাস সভাপতি আন্দ্রেয়া আনেয়েল্লি।ফাইল ছবি: এএফপি

ফুটবলকে বাঁচাতে চান, এমনই দাবি তাঁদের। এপ্রিলের শেষ দিকে বিদ্রোহী এক লিগের জন্ম দিয়েছিল ১২টি ক্লাব। এর সঙ্গে আরও তিন ক্লাবের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেই তিনটি নিয়ে মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ ২০ দলের টুর্নামেন্টের একটি গালভরা নামও দেওয়া হয়েছিল—ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। উয়েফার বর্তমান দুটি টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা থেকে প্রাপ্য অর্থে আর মন ভরছিল না এই ১২ ক্লাবের। তাই নিজেরাই এক লিগ আয়োজন করে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হতে চেয়েছিল তারা।

এত দিন সুপার লিগ নিয়ে প্রকাশ্যে যা বলার, সব বলেছেন রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। অবশেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে এ নিয়ে কথা বললেন জুভেন্টাসের সভাপতি আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি। তীব্র সমালোচনার মুখেও পিছু হটতে রাজি নন আনিয়েল্লি। এখনো দাবি করছেন, ফুটবলকে বাঁচাতেই নাকি সুপার লিগ আয়োজন করতে চেয়েছিলেন।

জুভেন্টাস চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি (বাঁয়ে), রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (মাঝে) ও বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা
ছবি: টুইটার

ফুটবল বিশ্বে বৈষম্য সৃষ্টি করতে যাওয়া এই লিগকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন ফুটবলার ও সমর্থকেরা। ইংলিশ ছয় ক্লাবের সমর্থকদের তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে মালিকপক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হয়। তাদের দেখাদেখি আতলেতিকো মাদ্রিদ ও মিলানের দুই ক্লাবও সরে পড়ে। কিন্তু সুপার লিগ নিয়ে এখনো গোঁয়ার্তুমি করছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস।

এর আগে সুপার লিগের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে পেরেজ বলেছিলেন, করোনার কারণে ফুটবলের আর্থিক দৈন্যের কথা প্রকাশ পেয়ে গেছে। এ থেকে বাঁচার জন্যই সুপার লিগ আয়োজন করতে চাইছেন তাঁরা। যদিও এই লিগ চালু হলে ধনী ক্লাবগুলো আরও ধনী হতো, ওদিকে ছোট ক্লাবগুলো স্পনসরদের কাছ থেকে সাহায্য পেত আরও কম। তবু এই লিগ নাকি ফুটবলকে বাঁচিয়ে তুলত—এমন দাবি করেছিলেন পেরেজ।

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন সুপার লিগের তিন ক্লাবকে বড় শাস্তি দেওয়ার পক্ষে।
ছবি: টুইটার

আনিয়েল্লি এখনো সে দাবি করে যাচ্ছেন। জুভেন্টাসের সাবেক ক্রীড়া পরিচালক ফাবিও পারাতিসির বিদায়ী অনুষ্ঠানে আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আনিয়েল্লি। সেখানেই সুপার লিগ সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

এখনো সুপার লিগের ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছেন আনিয়েল্লি, ‘বহু বছর ধরেই আমি ভেতর থেকে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা বদলানোর চেষ্টা করেছি। কারণ, মহামারির আগেই আর্থিক সংকটের ব্যাপারটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। সুপার লিগ কোনো অভ্যুত্থানের চেষ্টা ছিল না, বরং জেনে বা না জেনে দেউলিয়া হতে যাওয়া এক প্রক্রিয়ার জন্য সাহায্যের মরিয়া আর্তনাদ ছিল।’

ফুটবলের দর্শক, সমর্থক কিংবা খেলোয়াড়েরা যে এমন মনে করেন না, সেটা তাঁদের প্রতিক্রিয়াতেই টের পাওয়া গেছে। উয়েফাও এই লিগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাইছে।

চ্যাম্পিয়নস লিগের অর্থে মন ভরছে না ক্লাবগুলোর।
ছবি: টুইটার

এখনো এই লিগ থেকে নাম কাটিয়ে না নেওয়া তিন ক্লাবকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করছে উয়েফা। যদিও আনিয়েল্লির ধারণা, এতে এই তিন ক্লাবের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে, ‘প্রতিষ্ঠাতা দলগুলোর ঐকমত্য নির্ভর করছিল উয়েফার কাছ থেকে এ টুর্নামেন্টের স্বীকৃতি পাওয়ার ওপর। এর প্রতিক্রিয়া চমকে দেওয়ার মতো ছিল। খুবই আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক ছিল সেটা এবং তিনটি ক্লাবের ওপর সব ক্ষোভ ঢালা হয়েছে। এই সংকটের মুহূর্তে এমন আচরণ দিয়ে ফুটবলে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ভাগিস, আমার জানা আছে, উয়েফার মধ্যে সবাই এমন ভাবে না (সুপার লিগের বিরোধী নন)। আলোচনার পথ বরাবরের মতোই উন্মুক্ত আছে।’

আনিয়েল্লির ধারণা বাস্কেটবল ও বেসবলের মতো ফুটবলেও সেরা সব দলের জন্য আলাদা লিগের জন্ম দিয়ে দর্শক আগ্রহ ধরে রাখার সময় এসেছে, ‘অন্য খেলাও এ ধরনের পরিবর্তন দেখেছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই জানে, বর্তমান মডেলের পরিবর্তন দরকার। বর্তমান প্রতিযোগিতাগুলোর পরিবর্তন দরকার, এ ভীতিকর পরিস্থিতিতে ক্লাবের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান বের করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জুভেন্টাস, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ।’