ইতালিকে হারানোর গোপন অস্ত্র পেয়ে গেছে স্পেন

ইউরো সেমিফাইনালের আগে অনুশীলনে স্পেন দল।ছবি: এএফপি

সেই চুমুটা মনে আছে?

১৯৯৮ বিশ্বকাপ। ফ্রান্স দলের প্রতিটি ম্যাচ শুরুর আগে কাজটা করতেন লঁরা ব্লাঁ। কোন বিশ্বাস থেকে, কে জানে! গোলকিপার ফাবিয়েন বার্থেজের টেকো মাথায় চুমু খেতেন ব্লাঁ। ফুটবল–গাথায় সেই চুমুকে কেন ‘কিস অব লাক’ বলা হয়, সেটাও নিশ্চয়ই জানেন? ঘরের মাঠে আয়োজন করা বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরেই তুলেছিল ফ্রান্স।

বিজ্ঞানে তাকিয়ে সেই চুমুর সঙ্গে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের কোনো যোগসূত্র খুঁজে বের করা অসম্ভব। এমনকি সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্স দল প্রতি ম্যাচেই ড্রেসিংরুমে গ্লোরিয়া গাইনরের ‘আই উইল সারভাইভ’ গান যে শুনত—তার সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের যৌক্তিক কিংবা বৈজ্ঞানিক কোনো সম্পর্ক হয়তো নেই।

কিন্তু খেলার প্রতি অনুরক্তির সঙ্গে এসব বিজ্ঞান–টিজ্ঞান কে কবে টেনেছে! ফুটবল মাঠে কে, কত মাইল দৌড়াল, তার চেয়ে কে কতটা সৌন্দর্য ছড়াল কিংবা তুক–তাক, মন্ত্রপুত বিশ্বাস থেকে কার দল জিতল—এসব বিষয় জানতে আগ্রহী থাকেন সবাই।

যেমন ধরুন, কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল খেলতে আর্জেন্টিনা দল মাঠে নামছে কাল সকাল সাতটায়। অনেকে এর মধ্যে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে বের করেছেন, চলতি বছরেরর ৭ নম্বর মাসের (জুলাই) ৭ নম্বর দিনে সকাল ৭টায় মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা!

এই কাকতালে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা–ভক্তরা ঠায় বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে—‘লাকি সেভেন!’ অর্থাৎ সৌভাগ্যের সংখ্যার দিনে মাঠে নামা মানেই তো জয়! আবার ধরুন, এই যে ইউরো চলছে, সেখানেও কিন্তু চলছে ‘সাদা জার্সি’র কাকতাল।

ইতালির বিপক্ষে আজ ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচে সাদা জার্সি পরে মাঠে নামবে স্পেন।
ছবি: এএফপি

তথ্যটি জানামাত্রই স্পেনভক্তরা নড়েচড়ে বসতে পারেন। ওয়েম্বলিতে আজ বাংলাদেশ সময় রাত একটায় ইউরোর সেমিফাইনালে ইতালির মুখোমুখি হবে স্পেন। ম্যাচটি ইতালির ‘হোম ম্যাচ’ হওয়ায় ‘লা রোহা’দের চিরাচরিত লাল ‘হোম জার্সি’ পরার সম্ভাবনা কম।

সাদা জার্সিতে মাঠে নামবে লুইস এনরিকের দল। এবার এই ইউরোয় সাদা জার্সির মাহাত্ম্যটা বলা যাক। খেয়াল করে দেখেছেন, এবার ইউরোয় নকআউট পর্বে সাদা জার্সি পরে মাঠে নামা দলগুলোই জিতেছে। ইতালির ভক্তরা দয়া করে শাপ–শাপান্ত করবেন না। খেলাটা তো আর জার্সি খেলে না, খেলতে হয় খেলোয়াড়দের—জার্সি সেখানে শুধু অনুষঙ্গমাত্র।

কিন্তু অক্টোপাস ‘পল’কে যাঁরা বিশ্বাস করতেন, তাঁরা পাল্টা যুক্তি দিতে পারেন। ওই যে সেই প্রয়াত অক্টোপাসটি, ২০০৮ ইউরোয় জার্মানির ছয় ম্যাচের চারটিতেই জয়ী দলের সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা ‘জ্যোতিষী’—যে কি না ২০১০ বিশ্বকাপ যে স্পেন জিতবে, সেটাও বলে দিয়েছিল আগেভাগে! আছে, খেলার মাঠেও এমন ব্যাখ্যাতীত কিছু বিষয় আছে, যার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা চলে না।

কোয়ার্টার ফাইনালে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা জার্সি পরে জয় পেয়েছিল স্পেন।
ছবি: এএফপি

এ ইউরোয় শেষ ষোলো থেকে ধরুন—ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড ম্যাচে সাদা জার্সি পরে খেলেছিল সুইসরা। হেরে বিদায় নিয়েছে ফ্রান্স। স্পেন–ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে সাদা জার্সি ছিল আলভারো মোরাতাদের গায়ে। মিসের মহড়া দিয়েও শেষ পর্যন্ত মোরাতা–ই মানে স্পেন জয়ী!

ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ড–জার্মানি ম্যাচে সাদা জার্সি ছিল রাহিম স্টার্লিং–হ্যারি কেইনদের গায়ে। ইংল্যান্ডের জয়ের পর ‘ইটস কামিং হোম’ প্রচারণাকারীদের উল্লাস তো দেখেছেন! আর চেক প্রজাতন্ত্র বনাম নেদারল্যান্ডস?

সেখানেও ওই সাদা জার্সি মানে চেকরা জয়ী, কমলা রংকে (ডাচদের) ‘চেকমাত’ করে। বাদ যাবে না ডেনমার্ক–ওয়েলস ম্যাচও। গ্যারেথ বেলদের কাঁদিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে সাদা জার্সিতে মাঠে নামা ডেনিশরা।

বেলজিয়ামের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে সাদা জার্সি পরে জয় পেয়েছিল ইতালি।
ছবি: এএফপি

এবার আসা যাক কোয়ার্টার ফাইনালের পরিসংখ্যানে। স্পেন–সুইজারল্যান্ড ম্যাচে ‘অ্যাওয়ে’ সূচক সাদা জার্সি পরে মাঠে নামা স্পেন জিতেছে। বেলজিয়াম–ইতালি ম্যাচেও জিতেছে সাদা জার্সি—মানে ‘অ্যাওয়ে’ জার্সি পরে মাঠে নামা ‘আজ্জুরি’—রবার্তো মানচিনির দল। চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষেও একই ধারা বজায় রাখে সাদা জার্সি পরা ডেনমার্ক, আর ইউক্রেন বনাম ইংল্যান্ড? কী আবার! সেই সাদা জার্সিই—ইংল্যান্ড—জয়ী!

তাহলে আজ রাতে?

ইতালিভক্তরা মন শক্ত রাখুন। ইউরোয় এই সাদা জার্সিওয়ালাদের জয়রথের কাকতাল যদি কোনো দল থামাতে পারে, তবে সেটা ইতালি–ই।