ইতালির আস্থা ইনসিনিয়ে, স্পেনের মোরাতা

আলভারো মোরাতা
ছবি: রয়টার্স

‘মোরাতার কী খবর? সে ঠিক আছে তো?’

প্রশ্নটা মার্কোস ইয়োরেন্তের। সুইডেনের সঙ্গে ড্র করে স্পেন এবারের ইউরো অভিযান শুরু করার পর প্রশ্নটা করেছিলেন দলটির ডিফেন্ডার।

শারীরিক নয়, স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাতা মানসিকভাবে ঠিক আছেন কি না, সেটিই জিজ্ঞেস করেছিলেন ইয়োরেন্তে। মোরাতা মানসিকভাবে অসুস্থ হতেই পারতেন। সেভিয়ায় গোলশূন্য সেই ম্যাচে গ্যালারি থেকে কম দুয়ো তো আর শোনেননি জুভেন্টাস তারকা। এরপর তো মোরাতার পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হলো, মৃত্যু কামনা করা হলো তাঁর সন্তানদের।

সুইডেনের বিপক্ষে সেই ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মোরাতা। মিস করেছিলেন সহজ সব গোলের সুযোগ। স্পেনের উগ্র সমর্থকেরা মেনে নিতে পারেননি মোরাতার সেই ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার পিছু পিছুই এসে হাজির হয়েছিল সেই সব হুমকি–ধমকি।

২২ দিন পর সেই মোরাতা আজ মাঠে নামছেন স্পেনের স্বপ্নসারথি হয়ে। ইতালিকে হারিয়ে দলকে ফাইনালে তুলতে যে তাঁর দিকে বড় মুখ করে তাকিয়ে আছেন কোচ লুইস এনরিকে। সুইডেনের বিপক্ষে গোল না পেলেও পরের ম্যাচেই পোল্যান্ডের বিপক্ষে মোরাতার গোল ১ পয়েন্ট এনে দিয়েছিল স্পেনকে। জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড গোল পেয়েছেন দ্বিতীয় রাউন্ডেও। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পাগুলে সেই ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন মোরাতা।

পাঁচ ম্যাচে মাত্র ২ গোল। এই পরিসংখ্যান বোঝাতে পারবে না প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে কতটা জ্বালিয়ে মারেন মোরাতা। আজ ওয়েম্বলিতে তাঁকে জ্বালাতে হবে দুই জুভেন্টাস সতীর্থ জর্জো কিয়েলিনি ও লিওনার্দো বোনুচ্চিকে।

স্পেনের রক্ষণভাগকে ত্যক্ত-বিরক্ত করতে ইতালি দলেও আছেন একজন—লরেনৎসো ইনসিনিয়ে। মোরাতার মতো ২ গোল করেছেন নাপোলি উইঙ্গারও। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে করা ইনসিনিয়ের গোলটি তো টুর্নামেন্টের সেরা গোলের তালিকায় রাখতে হবে।

৩০ বছর বয়সী উইঙ্গারের নাম জড়িয়ে আছে ইতালির ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নের সঙ্গেও। ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্লে-অফে সুইডেনের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল আজ্জুরিরা। সেই ম্যাচে ইনসিনিয়েকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন ইতালির সেই সময়ের কোচ জান পিয়েরো ভেনতুরা। মিডফিল্ডার দানিয়েলে দি রসিকে মাঠের নামার প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন কোচ। দি রসি যে উত্তরটা দিয়েছিলেন তা অমর হয়ে আছে। দি রসি কোচের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি, ডাগআউটে বসা ইনসিনিয়েকে দেখিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি কেন যাব? আমাদের তো জয় দরকার।’

লরেনৎসো ইনসিনিয়ে
ছবি: রয়টার্স

ভেনতুরা সেদিন ভরসা রাখতে পারেননি ইনসিনিয়ের ওপর। কিন্তু সাড়ে তিন বছর পর সেই ইনিসিনিয়ে আজ রবার্তো মানচিনির অন্যতম ভরসা।

উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। খর্বকায় সেই উইঙ্গারই বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে প্রতিপক্ষকে তছনছ করে দিতে ভালোবাসেন, পছন্দ করেন ডান পা দিয়ে প্রতিপক্ষের গোলে শট নিতে। নাপোলির স্টেডিয়ামে বলবয়ের কাজ করা ইনসিনিয়ের সেই পছন্দের বলি তো বেলজিয়ামই হলো। সেদিন কী ক্ষিপ্রতায় না বক্সের বাইরে থেকে গোলটা পেয়ে গেলেন ইনসিনিয়ে।

ইতালির হয়ে ৪৫ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন ইনসিনিয়ে। যার দুটিই কিনা এবারের ইউরোতে। বড় কোনো টুর্নামেন্টে প্রথমবার গোলের দেখা পাওয়া ইনিসিনিয়েকে কীভাবে সামলাবেন স্পেনের রাইটব্যাক সিজার আজপিলিকুয়েতা, দেখার বিষয় সেটিই।

ইনসিনিয়ে অবশ্য প্রতিজ্ঞা করেছেন দলকে ফাইনালে তুলবেন, উপহার দেবেন চোটের কারণে ইউরো থেকে ছিটকে যাওয়া সতীর্থ লিওনার্দো স্পিনাৎসোলাকে।

প্রতিজ্ঞা আছে মোরাতারও। সুযোগের পর সুযোগ হারানো স্ট্রাইকারের তকমাটাকে যে চিরতরে ঝেড়ে ফেলার সুযোগ সামনে। আজ সেমিফাইনাল পেরোতে পারলেই ফাইনাল। ফুটবল–তীর্থ ওয়েম্বলিতে শেষ হাসিটা হাসতে পারলে স্পেনকে ইউরোর ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল বানানোর সুযোগ। সব সমালোচনা উড়িয়ে দেওয়ার এটাই তো সুযোগ। সুযোগ সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়ো শোনার পরিবর্তে হাততালি শোনার, সুযোগ নিজের নামে স্লোগান শোনার। বয়স ২৬ পেরোনোর আগেই ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে ১৫টি শিরোপা জিতে ফেলা মোরাতার সামনে যে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম কোনো ট্রফি হাতে তোলার সুযোগ।

জাতীয় দলের হয়ে প্রথম কোনো ট্রফি জেতার সুযোগ তো ইনিসিনিয়েরও। টানা ১৩ ম্যাচ জিতেছে ইনসিনিয়ের ইতালি, অপরাজিত আছে টানা ৩২ ম্যাচ। আর দুটি ম্যাচ জিতলেই যে ব্রাজিল আর স্পেনের টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডের নিশ্বাস–দূরত্বে চলে যাবে ইতালি।

সুযোগটা নিশ্চিত হারাতে চাইবেন না ইনিসিনিয়ে।