ইতিহাস গড়েও ‘আরও উন্নতি’তে চোখ মানচিনির

টাইব্রেকারে ইতালির জয়ের পর উল্লসিত দলের কোচ রবার্তো মানচিনি।ছবি: রয়টার্স

আন্দ্রেয়া পিরলো, জিয়ানলুইজি বুফন, পাওলো মালদিনি, আলেসসান্দ্রো নেস্তা, ফাবিও কানাভারো, আলেসসান্দ্রো দেল পিয়েরো, ফ্রান্সেসকো টট্টি।


নাম আরও বলা যাবে। এমনকি বর্তমান দলের কোচ রবার্তো মানচিনি ও তাঁর সহকারী জিয়ানলুকা ভিয়াল্লি। কারও ভাগ্যেই জোটেনি ইউরোসেরা হওয়ার গৌরব। ইতালির কাছে যে কাজটা অসাধ্য বলে হতো এত দিন, সে কাজটাই করে দেখিয়েছেন বোনুচ্চি-কিয়েল্লিনিরা। তাঁদের মতো পোড় খাওয়া যোদ্ধার সঙ্গে বারেল্লা, দোন্নারুমা, কিয়েসাদের মতো তরুণেরা যুক্ত হয়ে ইতালিকে এনে দিয়েছেন ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার, যে ট্রফি ১৯৬৮ সাল থেকেই অধরা ছিল ইতালির।

আর এই সাফল্যের কারিগর আর কেউই নন, সাবেক স্ট্রাইকার রবার্তো মানচিনি। ২০১৮ সালে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি যখন বিশ্বকাপে জায়গা না পেয়ে ধুঁকছিল, মানচিনিই তখন দেশের ডাকে আসেন ত্রাতা হয়ে। ১৯৬৮ সালের পর ম্যানচেস্টার সিটিকে প্রথমবারের মতো লিগ জেতানো এই কোচের ওপরেই ভরসা রাখে ইতালির ফেডারেশন। নিয়োগের সিদ্ধান্তটা যে সফল ছিল, দুবছর পর আজ সেটা বলা যায় নির্দ্বিধায়।


তবে ট্রফিজয়ের পর মানচিনি নিজের কৃতিত্ব ভাগ করে দিয়েছেন শিষ্যদের মধ্যে, ‘আমার খেলোয়াড়েরা দুর্দান্ত। অসাধারণ একটা দল পেয়েছি আমি। সবাই অসাধারণ খেলেছে। ওদের নতুন করে বলার কিছু নেই আমার।’

ম্যাচটা জেতা যে মোটেও সহজ ছিল না, সেটাই ফুটে উঠেছে সাবেক ইন্টার মিলান কোচের কথায়, ‘সহজ ম্যাচ ছিল না এটা। এই ম্যাচেও অনেক কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু আমরা ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়েছি। কিন্তু টাইব্রেকারে একটু ভাগ্যের সহায়তা লাগেই। ইংলিশদের জন্য আমার একটু খারাপই লাগছে।’


ট্রফি হাতেও মানচিনি খুঁজছেন উন্নতির জায়গা, ‘আমার মনে হয় আমাদের আরও উন্নতির জায়গা আছে। এই খেলোয়াড়গুলো এমনিতেও অনেক উন্নতি করেছে। ইতালির প্রত্যেক মানুষের জন্য অনেক খুশি লাগছে।’

রবার্তো মানচিনি আর জিয়ানলুকা ভিয়াল্লি—একজন ইতালির কোচ, অন্যজন সহকারী কোচ। খেলোয়াড়ি জীবনে দুজনই ছিলেন স্ট্রাইকার। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে দুজন দারুণ জুটি গড়ে তুলেছিলেন ইতালি দলে। দুজন দীর্ঘদিন জাতীয় দল আর ক্লাব সাম্পদোরিয়ার হয়ে খেলেছেন।

সাম্পদোরিয়াকে জিতিয়েছেন কাপ উইনার্স কাপ, উঠিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে, জিতেছেন লিগ। ‘যমজ গোলদাতা’ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন তাঁরা। সেই যমজ গোলদাতারা এখন কিয়েলিনি-কিয়েসা-বোনুচ্চি-ইনসিনিয়ে-ইম্মোবিলদের অভিভাবক। দুজন একসঙ্গে তৈরি করছেন প্রতিপক্ষ বধের নানা ছক।

ভিয়াল্লি-মানচিনি
ছবি: রয়টার্স

দুজনই খুব ভালো বন্ধু। এতটাই বন্ধু যে মজা করে ‘দুই ভাই’ বলা হয়। ইতালি দলে খেলার সময় একসঙ্গে থাকা, খাওয়াদাওয়া, আনন্দ-ফুর্তি তো করতেনই। মাঠে নেমেও দুজন জুটি বেঁধে প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরাতেন। রবার্তো মানচিনি ইতালির কোচ হওয়ার পর সহকারী বেছে নিতে এতটুকু দেরি করেননি। মানচিনি, ভিয়াল্লি দুজনেরই জন্ম একই বছরে।

ট্রফি জিতে নিজেদের বন্ধুত্বের কথাটাও মনে পড়েছে মানচিনির, ‘আমাদের বন্ধুত্বের মূল্য অনেক বেশি। ওই সাম্পদোরিয়া দলটাও এমন কিছু, সবকিছু ছাপিয়ে অনেক কিছু অর্জন করেছিল দলটা। আমাদের বন্ধুত্বটাও অমন। একটা চক্র পূরণ হলো আজ। তবে আমাকে বলতেই হবে, ছেলেরা অনেক ভালো খেলেছে।’