ইরানের ১৪ গোল আর ৪০ বছরের নিষেধাজ্ঞা তোলার উদ্যাপন

ইরানের নারী দর্শকেরা গ্যালারিকে প্রাণবন্ত করে রেখেছেন পুরো ম্যাচে। ছবি: এএফপি
ইরানের নারী দর্শকেরা গ্যালারিকে প্রাণবন্ত করে রেখেছেন পুরো ম্যাচে। ছবি: এএফপি

৪০ বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার জালে আটকা ছিলেন তাঁরা। প্রকাশ্যে ফুটবল মাঠে গিয়ে প্রিয় দলকে সমর্থন জানানোর অধিকার ছিল না তাঁদের। কদিন আগেই খেলা দেখতে চাওয়ায় জেলের শাস্তি জোটায় আত্মহত্যা করেছিলেন ইরানের এক নারী সমর্থক। আজ তেহরানে আজাদি স্টেডিয়ামে সে সব দিন ভুলে যাওয়ার পথে এক ধাপ এগোল ইরান। ফিফার হুমকির পর মাঠে নারী দর্শক নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন ইরান। সে ম্যাচে কম্বোডিয়াকে ১৪-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে ইরান।

ম্যাচে একতরফা প্রাধান্য ছিল ইরানের। প্রথমার্ধেই ৯-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক দল। প্রতিটি গোলেই উল্লাসধ্বনি শুনিয়েছেন সাড়ে চার হাজার নারী দর্শক। সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারত। কিন্তু আগ্রহী অনেক নারী দর্শকই টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন আজ। অথচ এক লাখ দর্শকের স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে মাত্র হাজার দশেক দর্শক ছিলেন। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দেখার জন্য পুরুষদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি।

তবু এ দিনটি ইরানের ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবে, গত চল্লিশ বছরে এর আগে মাঝে মধ্যে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন নারীরা। তবে সেটা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিত কারা দেখতে পারবেন ম্যাচ। অধিকাংশ সময়ই সেটা খেলোয়াড়দের পরিবারের নারীরা হতেন। এই প্রথম ইরানে নারীরা নিজে গিয়ে টিকিট কেটেছেন ম্যাচের। সেটা সম্ভব হয়েছে সাহার খোদায়ারির কারণে। গত মাসে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন এই নারী। ফুটবল প্রেমী সাহার প্রিয় দলের ম্যাচ দেখার চেষ্টা করায় তাঁকে আটক করা হয়েছিল। এর পর জেলের শাস্তিও দেওয়ার সম্ভাবনা জাগায় নিজের জীবন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাহার। এস্তেঘাল দলের জার্সির রং মিলিয়ে তাঁকে ডাকা হয়েছে ‘নীল মেয়ে’ বলে।

সাহারের মৃত্যুর পর ইরানের অধিনায়ক মাসুদ সোজায়িও নারী দর্শকদের ব্যাপারে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে নজিরবিহীন বলেছিলেন। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকেই ইরানকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা। ফলে ফিফাও নারী দর্শকদের মাঠে ঢোকার অনুমতি না দেওয়া হলে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই ইরান নতি স্বীকার করেছে। এমন এক উপলক্ষকে স্মরণীয় করতে করিম আনসারিফার্দ ৪ গোল করেছেন। হ্যাটট্রিক করেছেন সর্দার আজমাউনও।

আজ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের অন্যান্য ম্যাচেও গোলবন্যা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া নেপালকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে। মঙ্গোলিয়াকে ৬-০ ব্যবধানে হারিয়েছে জাপান। দক্ষিণ কোরিয়া শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে ৮ গোলে। গুয়ামের বিপক্ষে চীনের জয়ের ব্যবধান সাত গোলের। কিরগিজ রিপাবলিক ও একই ব্যবধানে মিয়ানমারকে হারিয়েছে। উজবেকিস্তান ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছে ইয়েমেনকে। শুধু বাংলাদেশ- কাতার (০-২) ও সিরিয়া-মালদ্বীপ(২-১) ম্যাচেই যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এএফপি