ঈদে তাঁরা খুজে ফেরেন প্রিয়জনের ‘স্পর্শ’

ঈদের সকালে মোহামেডানের বিদেশিদের বারবিকিউ পার্টি।ছবি: সংগৃহীত

‘ঈদ মোবারক বাবা’

মোহামেডানের মালির স্ট্রাইকার সুলেমান দিয়েবাতের বুক ভেঙে যায় ভিডিও কলে মেয়ের শুভেচ্ছা পেয়ে। আদর করতে ইচ্ছে করে, দেখতে ইচ্ছে করে ছুঁয়ে। কিন্তু সেটি তো আর হওয়ার নয়। দুজনের মধ্যে যে হাজার মাইলের ব্যবধান। দিয়েবাতে বাংলাদেশে আর মেয়ে ফাহিমা জাহারকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ভিয়েতনামে। ভার্চ্যুয়ালি চোখের দেখাটা দেখা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু স্পর্শ? প্রযুক্তির সে সাধ্য কোথায়?

মেয়ে এবার বায়না ধরেছিল বাবার সঙ্গে ঈদ করবে। পাঁচ বছরের বাচ্চাটির তো আর ভূগোল জানা নেই। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ। মেয়ের ইচ্ছেটা আর তাই পূরণ হয়নি।

তিন মৌসুম ধরে মোহামেডানে খেলছেন দিয়েবাতে। এরই মধ্যে মোহামেডান সমর্থকদের চোখের মণি হয়ে উঠেছেন তিনি। চলতি মৌসুমেও গোল করেছে ১১ টি। ঢাকায় এবার দ্বিতীয়বারের মতো ঈদ পালন করছেন; ক্লাবের এক সমর্থকের কাছে থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন একটি পাঞ্জাবি। সেটি পড়েই ঈদের নামাজে গিয়েছিলেন দিয়াবাতে, ‘ক্লাবের এক সমর্থকের কাছে থেকে পাঞ্জাবি উপহার পেয়েছি। পাঞ্জাবি আমার খুব পছন্দ। সেটি পড়েই নামাজ পড়েছি।’

ক্লাবেই ঈদ করছেন দিয়াবাতে ও মোহামেডানের অন্যান্য বিদেশিরা
ছবি: সংগৃহীত

ঈদে দিয়েবাতে খুব পছন্দ করেন গরুর মাংসের বিরিয়ানি। ক্লাবের পক্ষ থেকে বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রিয় খাবারেরও আয়োজন করা হয়েছে। অন্য দুই মুসলিম সতীর্থদের নিয়ে নামাজের পরপরই বারবিকিউ পার্টিও করেছেন দিয়াবাদে, ‘ঈদের দিনে গরুর মাংস ও গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে আমি খুব পছন্দ করি। ক্লাবের থেকে সেগুলোর আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া নামাজ পড়ে এসে আমরা বারবিকিউ কিউ পার্টি করেছি।’

অনেক বছর পর লিগে এবার ভালো করার বার্তা দিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালে শিবির। ঈদের বিরতিতে যাওয়ার আগে টানা তিন ম্যাচ জিতেছে তারা। এর দুটি শেখ রাসেল আর সাইফ স্পোর্টিংয়ের মতো শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষ। দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এখন অনেক ওপরে। সমর্থকদের ভালোবাসার উষ্ণতাও অনুভব করছেন খেলোয়াড়ের। সমর্থকেরা ক্লাবেও আসতে চেয়েছিল। কিন্তু করোনাকালে সেটি উচিত হবে না ভেবে দিয়াবাতেই তাদের নিবৃত্ত করেছেন।

আবাহনির আফগান তারকা মসিহ সাইগানি মিস করছেন পরিবারকে।
ছবি: প্রথম আলো

আবাহনী লিমিটেডের আফগান তারকা মসিহ সাইগানিও ঈদ করছেন ঢাকায়। আবাহনীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিদেশিই ধরা হয় তাঁকে। ২০১৯ সালের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় ঈদ করছেন তিনি। তিনিও এক সমর্থকের কাছ থেকে পাঞ্জাবি উপহার পেয়েছেন। এমনকি কয়েকজন সমর্থক বাসায় দাওয়াতও করেছেন। সাইগানি ভাবছেন দাওয়াত গ্রহণ করবেন কিনা। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত ভেবেই একটু দোটানায় আছেন। তবে ক্লাবের দুই-একজন স্টাফ খুব করে ধরেছেন। ঈদের দিন রাতে হয়তো যেতে হতে পারে।

খুব ছোটবেলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে জার্মানি পারি দিয়েছিলেন সাইগানি। পরিবারের সবাই সেখানেই। ঈদের খুব মিস করছেন তাদের। কিন্তু পেশাদারি শৃঙ্খলে নিজেকে বেঁধে রেখেছেন অনেক আগে থেকেই। তাই মন খারাপ হলেও সেটি মেনে নিচ্ছেন, ‘জার্মানিতে পরিবারের সবাই আছে। ঈদ বড় উৎসব। সবাই চায় ঈদের সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাতে। মিস তো করছিই তাদের। কিন্তু আমি পেশাদার। আবাহনীর প্রতিও আমার প্রতিশ্রুতি আছে। এখানে আমি খেলতে এসেছি। আমি হাসি মুখেই কষ্টটা মেনে নিচ্ছি। আবাহনীও আমার পরিবার। এবারের ঈদটা না হয় দলকেই দিই।’

সাইগানি ঢাকায় হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। সাধ্যমতো দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই তো ঈদের আগের দিনই ছিন্নমূল বাচ্চাদের হাতে ঈদের উপহার তুলে দিয়েছেন। সেই কার্যক্রমের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘পোশাক, টাকা-পয়সা, অলংকার, নাহ্! আপনি যদি কাউকে আপনার নিজের কিছু সময় দেন, সেটিই সবচেয়ে বড় উপহার। কারণ আপনি আপনার জীবনের কিছু সময় অন্যকে দিচ্ছেন। যে সময়টা আপনি আর কখনোই ফেরত পাবেন না। আল্লাহ যেন, সারা পৃথিবীর বাচ্চাদের দুর্ভোগ লাঘব করেন।