উরুগুয়ের বিশ্বকাপ ২টি না ৪টি?

সুয়ারেজ-গোদিনদের দেশ উরুগুয়ের বিশ্বকাপ সংখ্যা নিয়ে উঠেছে বিতর্কছবি: এএফপি

উরুগুয়ের ফুটবল ফেডারেশনের যুক্তি শুনলে প্রথমে হাস্যকর মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, সে হিসাবে তো লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে আর নেইমার ব্রাজিলের হয়ে একটি করে বিশ্বকাপ জিতেছেন!

কিন্তু উরুগুয়ে ফুটবল ফেডারেশনের (এইউএফ) যুক্তিতেও ভার আছে। ফিফা যদি অলিম্পিককে প্রথমে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের’ স্বীকৃতি দিয়ে পরে সেটি বাতিল করে, তাতে উরুগুয়ের কী দোষ! তারা তো ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের’ স্বীকৃতি থাকার সময়ে দুটি অলিম্পিক জিতেছে! সে কারণেই জার্সিতে চারটি তারা দিয়ে রাখছে উরুগুয়ে। কিন্তু ফিফা সেটি মানতে রাজি নয়, উরুগুয়েকে জার্সিতে দুটি তারা বসাতে বলেছে তারা।

সাধারণত প্রতিটি বিশ্বকাপ জয়ের জন্য জার্সিতে একটি করে তারা বসানো হয়। এখন উরুগুয়ের জার্সিতে কয়টি তারা বসবে, এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এইউএফ আর ফিফার মধ্যে।

বিশ্বকাপে উরুগুয়ে দলের জার্সি কী রকম হবে, সেটি থেকেই যত বিতর্কের শুরু। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের জন্য উরুগুয়ের জার্সির একটা নমুনা ফিফার নির্ধারিত কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে উরুগুয়ের জার্সির স্পনসর পিউমা। সেই জার্সিতে চারটি তারা। ফিফার আপত্তি সেখানেই।

ফিফা এখনো এইউএফকে কিছু জানায়নি, তবে ফিফার আপত্তির কথা গত মঙ্গলবার পিউমা জানিয়েছে এইউএফকে। এরপর থেকেই চলছে বিতর্ক।

১৯৩০ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকাপ হয়েছে ২১টি। এর মধ্যে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছে সর্বোচ্চ পাঁচবার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার করে জিতেছে জার্মানি (১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪) ও ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ ও ২০০৬)।

দুবার বিশ্বকাপ জেতা দল তিনটি—বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স (১৯৯৮ ও ২০১৮) আর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ব্রাজিলের বাইরে বিশ্বকাপ জেতা বাকি দুই দল আর্জেন্টিনা (১৯৭৮ ও ১৯৮৬) ও উরুগুয়ে (১৯৩০, ১৯৫০)। একবার করে জিতেছে স্পেন (২০১০) ও ইংল্যান্ড (১৯৬৬)।

১৯৩০ সালে বিশ্বসেরা নির্ধারণে বিশ্বকাপ আয়োজনের আগে অলিম্পিককে ফিফাই দিত ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর স্বীকৃতি। আর সে সময়ে ১৯২৪ প্যারিস এবং চার বছর পর ১৯২৮ আমস্টারডাম অলিম্পিকে শিরোপা জিতেছে উরুগুয়ে।

তাহলে উরুগুয়ে চারবার বিশ্বজয়ের দাবি করে জার্সিতে চারটি তারা বসাতে চাইছে কেন? এখানেই আসছে অলিম্পিকের হিসাব।

অলিম্পিক ফিফা স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট নয়। সেখানে মূলত অংশ নেওয়া দেশগুলোর অনূর্ধ্ব-২৩ দলই খেলে, ২৩-এর বেশি বয়সী খেলোয়াড় থাকতে পারেন সর্বোচ্চ তিনজন (করোনার কারণে টোকিও অলিম্পিক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক বছর পিছিয়ে আয়োজিত হওয়ায় এবার সেখানে অনূর্ধ্ব-২৪ দল খেলছে, বেশি বয়সী খেলোয়াড় তিনজনই খেলতে পারছেন)।

কিন্তু ১৯৩০ সালে বিশ্বসেরা নির্ধারণে বিশ্বকাপ আয়োজনের আগে অলিম্পিককে ফিফাই দিত ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর স্বীকৃতি। আর সে সময়ে ১৯২৪ প্যারিস এবং চার বছর পর ১৯২৮ আমস্টারডাম অলিম্পিকে শিরোপা জিতেছে উরুগুয়ে।

এরপর প্রথম বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জেতা উরুগুয়ে ১৯৫০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে দুঃখসাগরে ভাসিয়ে জেতে নিজেদের দ্বিতীয় ও সর্বশেষ বিশ্বকাপ।

১৯৩০ বিশ্বকাপ জয়ের পর উরুগুয়ে দলের উচ্ছ্বাস
ছবি: এএফপি।

এইউএফের হিসাব, আসল বিশ্বকাপের দুই শিরোপা আর তার আগে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর স্বীকৃতি পাওয়া দুটি অলিম্পিকের শিরোপা জেতায় তাদের জার্সিতে চারটি তারকাই থাকা উচিত। কিন্তু ফিফা এই যুক্তি মানে না। তারা জার্সিতে তারার হিসাব করে শুধু আসল ‘বিশ্বকাপ’-এ কে কত শিরোপা জিতল, সে হিসাব নিয়ে।

এইউএফ তাই বলছে, ফিফা যে এখন তাদের ফুটবল ঐতিহ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সেটাতে তারা বিস্মিত। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার জানিয়ে এইউএফের সহসভাপতি গাস্তন তেয়াল্দি বলছেন, ‘ফিফা সব সময় স্বীকার করে এসেছে, জনসম্মুখেই করেছে, যে উরুগুয়ে চারটি বিশ্বকাপ জিতেছে। কারণ, ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালে (অলিম্পিক) টুর্নামেন্টটা ফিফাই আয়োজন করেছে। এরপর ১৯৩০ সাল থেকে তারা চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন নিজেদের মতো করে আলাদাভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

নিজেদের যুক্তির নেপথ্যে যথাযথ কাগজপত্রও ফিফার কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এইউএফ। ‘এটাই সুযোগ ব্যাপারটাকে (উরুগুয়ের চার বিশ্বকাপ জয়) স্বাভাবিক করার, তাতে যদি বিশেষ স্বীকৃতির দরকার হয় তো হবে,’ বলেছেন তেয়াল্দি।