উয়েফার হুমকিতে মাথা নোয়াবে না রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাস

জুভেন্টাস চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি (বাঁয়ে), রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (মাঝে) ও বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তাছবি: টুইটার

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ হয়তো শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে না, কিন্তু প্রস্তাবিত এই টুর্নামেন্ট নিয়ে উয়েফার সঙ্গে ভালোই টক্কর দিচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস।

মহা বিতর্কিত এ লিগের ভাবনা থেকে সরে না আসায় তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে উয়েফা। এদিকে রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা উয়েফার হুমকির সামনে মাথা নত করবে না।

সুপার লিগের সঙ্গে শুরুতে ইউরোপের ১২টি বড় ক্লাব ছিল। উয়েফার হুমকি ও বিশ্বব্যাপী সমালোচনায় ৯টি ক্লাব সুপার লিগ থেকে সরে আসে। কিন্তু রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাস এখনো সুপার লিগ চালুর ভাবনায় অনড়। সুপার লিগ চালু হলে ক্লাব ফুটবলে উয়েফার প্রধান টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগ আবেদন হারাবে।

এ ছাড়া আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হওয়ার ভাবনা থেকে সুপার লিগ চালু করতে চেয়েছিল ক্লাবগুলো, যা ‘ফুটবলের সংস্কার’ হিসেবে বলছে অনড় থাকা তিন ক্লাব।

কাল রাতে এক বিবৃতিতে তিন ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী মৌসুম থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও তারা ফুটবল সংস্কারের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাবে।

ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (উয়েফা) হুমকি কিংবা শাস্তির মুখে তারা মাথা নোয়াবে না। বিষয়টি আদালতে থাকতেই উয়েফার ‘জোরাজুরি’কে প্রত্যাখ্যান করেছে এই তিন ক্লাব। সূত্র মারফত ইএসপিএন জেনেছে, ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা থেকে রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাসকে অন্তত দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে উয়েফা।

এদিকে বিষয়টি আদালতে তুলে উয়েফাকেও সতর্ক করে দিয়েছে এই তিন ক্লাব। ক্লাবগুলোকে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ চালু করতে বাধা দিয়ে উয়েফা ইইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) প্রতিযোগিতার নীতিমালা ভেঙেছে কি না, সম্প্রতি তা ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের কাছে জানতে চেয়েছেন মাদ্রিদের আদালত।

তিন ক্লাবের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘(উয়েফার) এই উদ্বেগজনক আচরণ কোর্ট অব জাস্টিসের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে উয়েফাকে। কিন্তু এরপরও উয়েফার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করাটা অযৌক্তিক এবং আইনের প্রতি সরাসরি আক্রমণ...যা কোর্ট অব জাস্টিসের প্রতি অসম্মানের বহিঃপ্রকাশও। ফুটবলকে আধুনিক করতে আলোচনার পরিবর্তে উয়েফা আশা করছে, আমরা আদালতের প্রক্রিয়া তুলে নেব, যা ইউরোপিয়ান ফুটবলে তাদের একাধিপত্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।’

চ্যাম্পিয়নস লিগের মতোই নিজেদের মধ্যে সুপার লিগ আয়োজন করতে চেয়েছিল ইউরোপের ১২টি বড় ক্লাব। এতে চ্যাম্পিয়নস লিগ আবেদন হারাত এবং সুপার লিগের নিয়ম নিয়েও প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি ক্লাবগুলোর এ ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে উয়েফা।

৯টি ক্লাব আগেই এ জোট থেকে বেরিয়ে এসেছে। উয়েফার কাছে জরিমানা গুনে আইনি ঝামেলা এড়িয়েছে ক্লাবগুলো। তবে উয়েফার প্রতি সতর্কবার্তাও জানিয়েছে রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাস। ফুটবল খেলাটা সংস্কার করতে উয়েফা আলোচনায় না বসলে ‘পতন অবশ্যম্ভাবী’ বলেই মনে করে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস এক শতাব্দীর বেশি পুরোনো ক্লাব। তারা কোনো জোরজবরদস্তি বরদাশত করবে না। ফুটবলে এখন যে সংস্কার জরুরি, তার জন্য ক্লাবগুলো বিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে প্রস্তুত। আমরা হয় ফুটবল সংস্কার করব, নয়তো পতন অবশ্যম্ভাবী।’

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন এর আগে ক্লাবগুলোকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তারা যদি সুপার লিগে থাকতে চায়, তাহলে অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবে না।’

এদিকে আইনি প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে কাল উয়েফার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তথাকথিত সুপার লিগ নিয়ে উয়েফার নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা কর্মকর্তারা তদন্ত শেষ করেছেন। উয়েফার আইনি কাঠামোর সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিষয়টি মাথায় রেখে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও বার্সেলোনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।’