এ কেমন লিভারপুল

জার্সির মতো কাল লিভারপুল দলটাকেই লাগছিল অচেনাছবি: এএফপি

ম্যাচের ৭৫ মিনিট তখন। লিভারপুলের সেনেগালিজ উইঙ্গার সাদিও মানে বাঁ প্রান্ত থেকে তেড়েফুঁড়ে এসে সাউদাম্পটনের ইংলিশ গোলরক্ষক ফ্রেজার ফরস্টারের দিকে একটা দুর্বল শট মারলেন। দুহাত বাড়িয়ে শটটা আটকাতে সমস্যা হলো না দীর্ঘদেহী এই গোলরক্ষকের। অবিশ্বাস্য মনে হলেও হতে পারে, গোটা ম্যাচে এর আগে লিভারপুল গোল বরাবর একটা শটও নিতে পারেনি!

লিভারপুলের গোটা আক্রমণভাগেরই চিত্র এই তথ্যটুকু। ডিবক্সের বাইরে থিয়াগো, রবার্টসন, ভাইনালডম, চেম্বারলিন, আলেক্সান্ডার-আরনল্ড, শাকিরিরা একের পর এক সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, সেগুলোকে একের পর এক নষ্ট করে গেছেন সাদিও মানে, মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোরা। আরেক ফরোয়ার্ড দিওগো জোতার অভাবটা কি বুঝতে পারছিলেন কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ? হয়তো! ব্যর্থতার এই রাতে সাউদাম্পটনের মাঠে গিয়ে ১-০ গোলে হেরে এসেছে ইংলিশ লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের দুই মিনিটে একমাত্র গোল করে লিভারপুলের বুকে শেল বিঁধিয়েছেন তাদেরই সাবেক স্ট্রাইকার ড্যানি ইংস।

একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছেন সালাহরা।
ছবি: এএফপি

প্রথমেই এগিয়ে যায় সাউদাম্পটন। ইংলিশ মিডফিল্ডার জেমস ওয়ার্ড-প্রাউসের এক বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে দলকে দুই মিনিটের মাথায় এগিয়ে দেন ড্যানি ইংস। প্রথমার্ধের বাকি সময়েও দুর্দান্তভাবে লিভারপুলকে প্রেস করে গেছে দলটা। এ যেন লিভারপুলের ওষুধেই তাদের ঘায়েল করার প্রচেষ্টা! লিভারপুলের দুই সেন্টারব্যাক হিসেবে দুই মিডফিল্ডার খেলেছেন এই ম্যাচে—অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন ও ফাবিনিও। ফলে সাউদাম্পটনের প্রেসে তাঁদেরও খাবি খেতে দেখা গেছে মাঝেমধ্যে। দ্রুতগতির কাউন্টারে প্রায়ই খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁরা।

দ্বিতীয়ার্ধে একদম খোলসে ঢুকে যায় সাউদাম্পটন। হয়তো বুঝেছিল, পিছিয়ে পড়ার কারণে দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম থেকেই ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে লিভারপুল। হয়েছেও তা–ই। কিন্তু ওই যে গোল মিসের মহড়া লেগেই ছিল! মাঝেমধ্যে ইংস, আর্মস্ট্রং, ভালেরি, টেলোদের কল্যাণে সাউদাম্পটনই বিপজ্জনকভাবে উঠে যাচ্ছিল প্রতি–আক্রমণে। শেষমেশ ওই এক গোলের অগ্রগামিতা ধরে রেখেই পুরো ৩ পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে সাউদাম্পটন।

ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সাউদাম্পটনের অস্ট্রিয়ান কোচ রালফ হাসেনহাটল। জার্মান ক্লাব লাইপজিগের সাবেক এই কোচ আজীবন লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের গুণগ্রাহী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। সেই ক্লপের দলকেই যেখানে হারিয়ে দিলেন, আনন্দাশ্রু কি আর বাঁধ মানে!