এই ফর্মের আগুয়েরো ডাক পাননি আর্জেন্টিনায়!

সার্জিও আগুয়েরো, ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পরও ডাক পাননি জাতীয় দলে। ফাইল ছবি
সার্জিও আগুয়েরো, ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পরও ডাক পাননি জাতীয় দলে। ফাইল ছবি
>সার্জিও আগুয়েরো ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এই মৌসুমে করেছেন ২৮ গোল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১৮ গোল করে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবু আর্জেন্টিনা দলে ডাক পাননি।

নতুন আর্জেন্টিনার যাত্রা শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপের পরপরই। আগামীকাল রাতে সেই ট্রেনে চড়ে বসছেন লিওনেল মেসি। শুধু বসছেন না, চালকের আসনটাই নিয়ে নিচ্ছেন। এখন বিস্ময়মাখা প্রশ্ন উঠেছে, এই ট্রেনে মেসির বাল্যবন্ধু সার্জিও আগুয়েরোর কোনো জায়গা নেই!

বিস্মিত হওয়ারই কথা। ক্লাবের হয়ে আগুয়েরো জীবনের সেরা ফর্মে আছেন। এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিকে এরই মধ্যে ২৮ গোল এনে দিয়েছেন। আগুয়েরো ক্লাব ক্যারিয়ারে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৩ গোল করেছিলেন ২০১৬-১৭তে। এবার সেই পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাওয়ারই কথা। আগুয়েরো এ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়েও আছেন ভালোমতো। এমন একজন স্ট্রাইকারের জায়গা নেই আর্জেন্টিনা দলে?

বিস্ময়টা আরও বাড়ছে শুধু আগুয়েরোর ফর্মের কারণে নয়। আর্জেন্টিনা দলে নাম্বার নাইনের সংকট তীব্রতর। গঞ্জালো হিগুয়েইন নিজেই নিজের ছায়া হয়ে আছেন। মাউরো ইকার্দি ব্যক্তিগত ঝামেলায় জড়িয়ে ক্লাবেই অধিনায়কত্বের পাশাপাশি স্কোয়াডের জায়গাও হারিয়েছেন। ফলে এই দুজন হিসাবের আগেই বাদ। তাহলে বিকল্প কে?

ইন্টারে ইকার্দির বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নেওয়া লওতারো মার্টিনেজ আছেন। আছেন ক্লাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আসার পর থেকে আলো হারিয়ে ফেলা পাওলো দিবালা। এর বাইরে জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্টিনার বড় দুই ক্লাবের দুই ফরোয়ার্ডকে ডেকে পাঠিয়েছেন। বোকা জুনিয়র্সের দারিও বেনেদেত্তো ও রিভার প্লেটের মাতিয়াস সুয়ারেজ। লিওনেল মেসিকে নিয়ে পূর্ণ হলো আর্জেন্টিনার এই স্কোয়াডের আক্রমণ ভাগের পাঁচজন।

কিন্তু মেসিকে বাদ দিলে বাকি চারজনের নিজ নিজ লিগে করা গোলের সমষ্টি ১৭, একা আগুয়েরোর চেয়েও যেটি এক গোল কম। আগুয়েরোর ১৮ গোল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, এই তথ্যটাও রাখতে হবে মাথায়।

জাতীয় দলে আগুয়েরো কখনোই নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। গত বিশ্বকাপেও নিদারুণ ব্যর্থ হয়েছেন নামের প্রতি সুবিচার করতে। ফলে ২০২২ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে নতুন আর্জেন্টিনার যে ট্রেনটা স্কালোনি সাজাচ্ছেন, সেখানে আগুয়েরোর জায়গা না–ও হতে পারে। কিন্তু আগুয়েরো-সমর্থকদের দাবি, এবারের কোপা আমেরিকাকে আগুয়েরোর শেষ সুযোগের মঞ্চ হিসেবে দেওয়া উচিত ছিল। মেসির পাশাপাশি অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ও নিকোলাস ওটামেন্ডি (এই দুজন অবশ্য চোটের কারণে দল থেকে সরে গেছেন) যদি ডাক পান; আগুয়েরোর জন্য আরেকটা সুযোগ কেন নয়?

কোপা আমেরিকার আগে আর্জেন্টিনার আপাতত আর কোনো খেলা নেই। ফলে এই স্কোয়াডে ডাক না পাওয়া মানে কোপা আমেরিকার দলে নিজেকে দেখতে না পাওয়াই। অনেকেরই দাবি, স্কালোনি আর আগুয়েরোর সম্পর্ক ভালো নয়। তারই প্রভাব পড়েছে বিশ্বকাপের পর স্কালোনির অধীনে খেলা ৬ ম্যাচ এবং সামনের দুই ম্যাচের স্কোয়াডে আগুয়েরোর জায়গা না পাওয়া। না হলে জাতীয় দলের অতীত রেকর্ডই শুধু বিবেচ্য হতে পারে না। ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাব, পেপ গার্দিওলার মতো কোচের অধীনে খেলে; গ্যাব্রিয়েল জেসুসের মতো প্রতিভাকে হারিয়ে প্রথম পছন্দের স্ট্রাইকার হওয়ার পরও কেন তিনি জায়গা পাবেন না জাতীয় দলে?

আগুয়েরো-স্কালোনির দ্বন্দ্বের গুঞ্জন পুরোনো। স্কালোনি ছিলেন হোর্হে সাম্পাওলির দীর্ঘদিনের সহকারী। সেভিয়া থেকেই সহকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। গত বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনার সহকারী কোচ ছিলেন। গত বিশ্বকাপে আগুয়েরো সংবাদমাধ্যমে সাম্পাওলির তীব্র সমালোচনা করেন। বিশ্বকাপ শেষে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া ধন্যবাদ বার্তায় কোচিং স্টাফদের ছবি বাদ দিয়ে পোস্ট করেছিলেন।

সেই সম্পর্কের আঁচ এখনো রয়ে গেছে কি না, এ নিয়েই আলোচনা। স্কালোনি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘আমার সঙ্গে আগুয়েরোর সম্পর্ক একদম ঠিক আছে। বিশ্বকাপে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল এমন তথ্যও সঠিক নয়। ওকে দেখার জন্য এখনো ডেকে পাঠাতে পারিনি, তবে আমি সব সময়ই যাদের ডাক পাঠাইনি, তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর সবার মতো ওরও কোপা আমেরিকার দলে জায়গা পাওয়ার ভালো সুযোগ আছে।’

আগুয়েরো নিজে এমন ভাব করছেন, জাতীয় দল তাঁকে ডাকল কি না, এ নিয়ে থোড়াই কেয়ার করেন, ‘আমার ফর্ম আসলেই বেশ ভালো যাচ্ছে। তবে আমার মূল মনোযোগ ক্লাব নিয়েই। বাকি কিছু নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।’ তবে আগুয়েরোর বাবা লিওনেল দেল কাস্তিল্লোর কথা শুনে তা মনে হয় না। তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ, ‘আগুয়েরো জাতীয় দলে নেই এটা আমাকে ব্যথিত করে। যেকোনো যুক্তিতেই কোপা আমেরিকার দলে ওর থাকা উচিত। মেসিকে বাদ দিয়ে বাকি যত ফরোয়ার্ড এই দলে আছে, ওরা আসলে রিজার্ভ বেঞ্চে জায়গা পাওয়ার মতো। জানি না আগুয়েরোর চেয়ে এদের কার ফর্ম ভালো।’

১৪ জুন থেকে ৭ জুলাই ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে এবারের কোপা আমেরিকা।