এএফসি কাপে দশক–সেরায় সোহেলের গোল

সোহেল রানাকে ঘিরে আবাহনী–সতীর্থদের উদ্‌যাপন। গত বছর ঢাকায় এএফসি কাপে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিয় টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে সোহেল রানার সেই দুর্দান্ত গোলের পর।ফাইল ছবি

একটি গোল একজন ফুটবলারের জীবন বদলে দিতে পারে। তবে সোহেল রানার জীবনে হয়তো সেরকম বদল আসেনি। তিনি যা ছিলেন তাই আছেন। নেপালের বিপক্ষে ১৩ ও ১৭ নভেম্বর দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচের জন্য জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পের আছেন এই মুহূর্তে। কিন্তু এশিয়ার অন্যতম ক্লাব টুর্নামেন্ট এএফসি কাপে একটি গোল করে যে প্রচারের আলোয় এসেছেন, দশ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে তা কখনো পাননি।

এই একটি গোল সোহেল রানার ফুটবল জীবনে যেন নতুন দিনের আলো। আবাহনী লিমিটেডের জার্সিতে গোলটি করেছিলেন গত বছর ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এএফসি কাপের আঞ্চলিক সেমিফাইনালের প্রথম লেগে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে। নাবীব নেওয়াজের পাসে ২৫ গজ দূর থেকে করা তাঁর শটটি কোনাকুনি আশ্রয় নেয় জালে। প্রথম লেগে আবাহনী জেতে ৪-৩ গোলে। অবশ্য ফিরতি লেগে পিয়ংইংয়ে ২-০ গোলে হেরে আর ফাইনালে যাওয়া হয়নি আকাশি নীল দলের।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে সোহেল রানার গোলটি এসেছে এএফসি কাপের দশক–সেরা গোলের সেরা ১৬–তে।
ফাইল ছবি

তবে সোহেলের গোলটি ওই সময় এএফসি কাপে সপ্তাহ–সেরা হয়েছিল সমর্থকদের ২৬ হাজার ৮৮ ভোটে। এরপর এএফসি কাপের বর্ষসেরা রানার্সআপ হয়। এখানেই শেষ নয়। এএফসি কাপের গত এক দশকে সেরা ৩২ গোলের তালিকায় জায়গা করে নেয় এই গোল। সমর্থকদের ভোটে ৩২ থেকে আজ প্রথমে বাছাই করা হয় সেরা ১৬টি গোল। এরপর সেরা ৮, ৪, ২, ১ বেছে নেওয়া হবে।

সেরা ১৬-এ আসতে সোহেল রানার প্রতিপক্ষ ছিলেন সিঙ্গাপুরের হোম ইউনাইটেডের ফরোয়ার্ড খাইরুল নিজাম। ২০১৭ এএফসি কাপে তিনিও এক দুর্দান্ত গোল করেছিলেন। এই দুজনের একজনের গোল বেছে নিতে আজ বিকেল ৪ট পর্যন্ত সমর্থকেরা ভোট দিতে পেরেছেন । চারটায় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সোহেল রানা বিপুল ভোটের এগিয়ে। তাঁর নামের পাশে ৮৪ শতাংশ ভোট। নিজামের ১৬। এর আগে সোহেল তাঁর সমর্থকদের এএফসি ডট কমে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এএফসিতে আমার গোল জায়গা পেয়েছে যা অনেক বড় প্রাপ্তি। সমর্থকদের অনুরোধ করব আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য।’ তাতে ভালো সাড়াই পেয়েছেন।

একের পর সিঁড়ি ভাঙছে সোহেলের গোল। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দারুণ খুশি। আজ প্রথম আলোকে বললেন, ‘কী যে ভালো লাগছে বোঝাতে পারব না। কখনো ভাবিনি আমার একটি গোল এত দূর চলে আসবে।’ ২০১২ সালে কাঠমান্ডুতে নেপালের প্রীতি ম্যাচ দিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক। কোচ ছিলেন সাইফুল বারী। তারপর দেশীয় ফুটবলের অনেক চড়াই উতরাই, তবে সোহেল তাঁর জায়গা হারাননি ক্লাব ও জাতীয় দলে। প্রায় সব বিদেশি কোচের পছন্দের তালিকাতেই ছিলেন। এখন জেমির ডের একাদশেও সোহেলের অবস্থান শক্ত।

এএফসি কাপের এই গোল সোহেলের ফুটবল জীবনের সেরা গোল। নিজেই বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটিই আমার জীবনের সেরা। এক গোল করে এত আলোচনায় আসব ভাবতেই পারিনি। ম্যাচের পরও বুঝতে পারিনি আসলে গোলটা এত দূর নিয়ে আসবে আমাকে। সবাই মুখে এই গোলের প্রশংসা শুনছি। অনেক বেশি উজ্জীবিত হচ্ছি আগামীর জন্য।’

জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই ঢাকার আরামবাগে। পাশেই বালুর মাঠে ( বর্তমানে বাফুফের টার্ফ) খেলা শেখান স্থানীয় তৃণমূলের কোচ মোহাম্মদ কালা। এভাবেই উঠে এসে সোহেল খেলেছেন জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে । ক্যানারি ওয়ার্ফের হয়ে ইংল্যান্ডে অনুশীলনের সুযোগ হয়েছে। সুযোগ হয়েছে আরও ৬ বাংলাদেশি নবীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অনুশীলনের। ঢাকা মোহামেডানের জার্সিতে দেশের ফুটবলে আলো কাড়া সোহেল গত মৌসুম ধরে খেলছেন আবাহনীতে।

বড় ভাই ফুটবল খেলেছেন। তবে নিচের স্তরে। বাবার কম্পিউটার সামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে আরামবাগে। তবে এসব আর এখন তিনি দেখাশোনা করতে পারেন না। ভাই দেখেন। সোহেল শুধু খেলা নিয়েই ব্যস্ত। সেই ব্যস্ততাই আজ তাঁকে নিয়ে এসেছে এশিয়ার সেরার মঞ্চে। তবে কাল বিকেলে অনুশীলন থেকে হোটেলে ফিরেও এএফসি কাপের দশক–সেরা ১৬গোলের তালিকায় আসার ব্যাপারটা জানতেন না সোহেল। শুধু বলেন, ' মাত্র অনুশীলন করে আসলাম। এখনো আমি ভোটের সর্বশেষ পাইনি। যদি সেরা ১৬-এ যেতে পারি তাহলে সেটি হবে আমার জন্য বিরাট সম্মান। আমরা এভাবে ভালো ভালো গোল করতে পারলে সবার নজরে আসব।’

গত বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ জেতে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ভলিতে দুর্দান্ত গোল করেছিলেন বাংলাদেশের মনিকা চাকমা। গোলটি জায়গা করে নেয় ফিফার ফ্যানস ফেবারিটের সেরা পাঁচে। মনিকাকে ফিফা বর্ণনা করেছিল এভাবে, ‘ম্যাজিক্যাল চাকমা’ নামে।