এক পয়েন্টেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো মোহামেডান-শেখ রাসেলকে

সোলেমানের গোলে মোহামেডান ম্যাচে প্রথম এগিয়ে গিয়েও জিততে পারেনি।ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের পর ফুটবলারদের নিয়ে মাঠের মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মোহামেডান কোচ শন লেন। ফুটবলাররা মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন কোচের আলোচনা। ৫৫ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকে পুরো ৩ পয়েন্ট পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল মোহামেডান, সেই ম্যাচই কিনা ড্র করতে হয়েছে! স্বাভাবিকভাবেই কোচের চেহারায় ছিল হতাশার ছাপ।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটি খেলতে নামে মোহামেডান। শেখ রাসেলের সঙ্গে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করেছে সাদা-কালোরা। মোহামেডানের গোলটি করেছেন সোলেমান দিয়াবাতে। শেখ রাসেলের গোলটি গিয়ানকার্লো লোপেজ রদ্রিগেজের।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আরামবাগকে হারিয়ে লিগে দারুণ শুরু করে মোহামেডান। ওই ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন মোহামেডানের মালির স্ট্রাইকার সোলেমান। কিন্তু পরের ম্যাচে সোলেমান গোল পাননি। কুমিল্লায় সাইফ স্পোর্টিংয়ের কাছে মোহামেডান হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে। আজ সোলেমান গোল পেয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে মোহামেডানকে।

শেখ রাসেল ওদিকে টানা দুই জয়ের পর আজ পয়েন্ট খুইয়েছে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শেখ রাসেল জেতে ২-১ গোলে, রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ১-০ গোলে। কিন্তু আজ শেখ রাসেল মোটেও জেতার মতো খেলেনি। বরং সমতাসূচক গোলটিতে রদ্রিগেজের কৃতিত্বের চেয়ে মোহামেডানের ডিফেন্ডারদের দায়টাই বেশি।

শেখ রাসেলের গোলের উল্লাস।
ছবি: প্রথম আলো

প্রথমার্ধে কোনো দলই সেভাবে গোছানো ফুটবল খেলতে পারেনি। শেখ রাসেল শুরু থেকে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে। ওবে মনেকে ও আবদুল্লাহর কেউই নিজেদের সেরাটা খেলতে পারেননি। অনেক বল তো অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে অহেতুক জমা দিয়েছেন ওবে মনেকে। দ্রুত কাউকে পাস দিলে বা নিজেও যদি বেরিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্য রকমও হতে পারত। তা ছাড়া গত দুই ম্যাচের নায়ক আবদুল্লাহও আজ ছিলেন অনেকটাই নিষ্প্রভ।

৪৪ মিনিটে মোহামেডান নিরীহ একটা আক্রমণ থেকে পেনাল্টি পেয়েছে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে জাফর ইকবাল বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন। জাফর ইকবালের শট বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো শেখ রাসেল ডিফেন্ডার সোহেল রানার হাতে লাগে। রেফারি বিতুরাজ বড়ুয়া পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে গোল করেন সোলেমান। ম্যাচ শেষে তো শেখ রাসেল কোচ সাইফুল বারী বলেই দিলেন, ‘এটা গোল খাওয়ার জন্য খুবই বাজে সময়।’

দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে শেখ রাসেল। তাদের কৌশলই ছিল আর কোনো গোল না খাওয়া এবং দ্রুত গোলটি শোধ করা। সেই লক্ষ্যেই ডান প্রান্ত দিয়ে আবদুল্লাহ দুর্দান্ত কিছু ক্রস ফেলেছেন বক্সে। কিন্তু জায়গামতো কখনোই দেখা যায়নি শেখ রাসেলের স্ট্রাইকারদের। অবশেষে ম্যাচের ৫৬ মিনিটে গোল শোধের উপলক্ষ পেয়ে যায় শেখ রাসেল।

বখতিয়ার দুশবেকভের চমৎকার ফ্রি–কিক এক ড্রপে বক্সে ঢোকে। সামনে দাঁড়ানো মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস হেডে বল তুলে দেন লোপেজ রদ্রিগেজের মাথায়। ততক্ষণে মোহামেডানের গোলরক্ষক আহসান হাবিব পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। বল আস্তে করে আহসান হাবিবের মাথার ওপর দিয়ে ঢোকে জালে। মোহামেডান মূলত বেশ কয়েকবার শেখ রাসেলকে গোল করার সুযোগ দিয়েছে। নিজেদের অর্ধেই তারা গুটিয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের বেশ কিছুটা সময়।

জয়ের জন্য শেখ রাসেল চেষ্টা করেছে বাকি সময়। জয়সূচক গোলটি পেতেও পারত। কিন্তু ৮৫ মিনিটে বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওবে মনেকে ও মোহাম্মদ ইলিয়াস ফাঁকা পোস্ট পেয়েও নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝির খেসারত দিয়েছেন। সুযোগ পেয়েও কেউ গোল করতে পারেননি! পরের মিনিটেই কর্নার থেকে মোহামেডানের হাবিবুর রহমানের শট ফিস্ট করে ফেরান শেখ রাসেল গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম।