একই সময়ে দুই দেশে খেলেছিল 'বাংলাদেশ'

২০০৭ সালে ভারতের নেহরু কাপে সিরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। একই সময়ে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের আরও একটি দল খেলছিল মারদেকা কাপে। ছবি: এএফপি, ফাইল ছবি
২০০৭ সালে ভারতের নেহরু কাপে সিরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। একই সময়ে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের আরও একটি দল খেলছিল মারদেকা কাপে। ছবি: এএফপি, ফাইল ছবি
>

একই সময়ে দুটি ভিন্ন দেশের টুর্নামেন্টে দুটি পৃথক জাতীয় দল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ২০০৭ সালের ঘটনা এটি

একই সময়ে দুই জায়গায় খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল! অবাক হচ্ছেন? অবাক হলেও ঘটনাটা সত্যি। ২০০৭ সালে একই মাসে দুটি পৃথক দেশে টুর্নামেন্ট খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আরও আশ্চর্যের বিষয় দুটি জায়গায় অনুষ্ঠিত ম্যাচই পেয়েছে ফিফার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

২০০৭ সালের আগস্টে ভারতের দিল্লিতে নেহরু কাপ টুর্নামেন্টে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ভারত, সিরিয়া, কম্বোডিয়া ও কিরগিজস্তান ছিল বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সময়ে মালয়েশিয়ার বিখ্যাত টুর্নামেন্ট মারদেকা কাপে বাংলাদেশ নামেই আরও একটি দল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত মারদেকা কাপে বাংলাদেশের অন্য দলটি খেলেছিল সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন ছিলেন মারদেকা কাপের দলটিতে। ১৩ বছর আগের সে স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল দেশের অন্যতম সেরা এই রাইটব্যাকের, ‘মারদেকা কাপে আমাদের দলটা মূল জাতীয় দল ছিল না। নেহেরু কাপে গিয়েছিল মূল দলটা। কিন্তু মালয়েশিয়াতে আমরা খেলেছি আমাদের বাংলাদেশ জাতীয় দল হিসেবেই। হাসানুজ্জামান বাবলু ভাই ছিলেন কোচ। মনে আছে টুর্নামেন্টে আমরা খুবই ভালো খেলেছিলাম। পরে হাসানুজ্জামান বাবলু ভাই আফসোস করেছিলেন দলটা যদি আরও একটু ব্যালান্সড হতো! ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল দুর্দান্ত। প্রথমার্ধে একটা বাজে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েছিলাম। আর ফিরতে পারিনি। জিম্বাবুয়ে আর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুটি গোল পেয়েছিলাম। হেরেছিলাম ২-১ গোলে।’

আরেক সাবেক অধিনায়ক আলফাজ আহমেদ ঠিক মনে করতে পারছেন না কেন, কী প্রেক্ষাপটে দুটি দল দুই জায়গায় খেলেছিল, ‘সত্যি বলতে কি, আমার ঠিক মনে নেই, কেন দুটি দল দুই জায়গায় খেলেছিল। তবে ভারতের নেহরু কাপে আমি ছিলাম। আমাদের দলটাই ছিল মূল জাতীয় দল। কোচ ছিলেন সৈয়দ নঈমুদ্দিন। বাইচুং ভুটিয়ার গোলে ভারতের কাছে হেরেছিলাম। সিরিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলেছিলাম। একটা ম্যাচ ড্র করেছিলাম।’

নেহরু কাপে বাংলাদেশ চারটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ চারটি হয় ১৮, ২০, ২২ ও ২৪ আগস্ট, ২০০৭। ১৮ আগস্ট সিরিয়া, ২০ আগস্ট ভারত, ২২ আগস্ট কম্বোডিয়া আর ২৪ আগস্ট কিরগিজস্তানের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। অন্যদিকে মারদেকা কাপে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ ছিল যথাক্রমে ২১, ২৩ ও ২৫ আগস্ট, ২০০৭। অর্থাৎ, একই সময়ে দুই দেশের দুটি পৃথক টুর্নামেন্টে খেলেছিল বাংলাদেশ দল।

হাসান আল মামুন মারদেকা কাপের একটা দারুণ স্মৃতি মনে করলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। খুব ভালো খেলেছিলাম আমরা। ম্যাচের শেষে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশি দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ১০০ ডলার করে দিয়েছিলেন। আমার দীর্ঘ খেলোয়াড়ি জীবনে এমন ঘটনা আর আর পাইনি। উনি খুশি হয়েই টাকাটা দিয়েছিলেন।’

নেহরু কাপে সিরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশ হারে ২-০ গোলে। ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে। ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় বাইচুং ভুটিয়া গোল করে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। দিল্লির আম্বেদকার স্টেডিয়ামে সে ম্যাচটিতে আর গোল শোধ দিতে পারেনি বাংলাদেশ। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হলেও বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে কিরগিজস্তানের কাছে হেরে যায় ৩-০ গোলে।

মারদেকা কাপে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর সিঙ্গাপুর আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশ হারে ২-১ গোলে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গোল করেন জুমরাতুল হোসেন মিঠু। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাইফুর রহমান মনি।