একাডেমির নামে বাফুফের আরেকটি প্রহসন

‘এলিট একাডেমি’র নামে বাফুফের আরও একটি প্রহসনফাইল ছবি
বাফুফে
ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল (আজ) কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাফুফে এলিট ফুটবল একাডেমির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান।’

গতকাল সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বাফুফের এই বিজ্ঞপ্তি দেখে যে কারও আনন্দিত হওয়ার কথা। দেশে একটা ‘এলিট ফুটবল’ একাডেমি হচ্ছে জেনে কেউ কেউ বাফুফেকে অভিনন্দনবার্তাও পাঠাতে পারেন! ‘এলিট’ শব্দের অর্থ অভিজাত। এ রকম একটা একাডেমি করার জন্য বাফুফের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানানোই যায়।

কিন্তু কোনো কিছুর সঙ্গে ‘এলিট’ শব্দ যোগ করলেই যে সেটা অভিজাত হয়ে যায় না। বাফুফের কথিত ‘এলিট একাডেমি’র অবস্থাও অনেকটা সে রকম। কমলাপুর স্টেডিয়ামটি সম্প্রতি সংস্কার করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। স্টেডিয়ামের ভেতরে পুরোনো কক্ষগুলো থাকার উপযোগী করা হয়েছে। সেখানেই অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সী ৫১ জন ফুটবলারকে তুলেছে বাফুফে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে তাঁদের নিয়ে অনুশীলন শুরু হয়েছে গত ১৬ আগস্ট। এটিকেই ‘এলিট একাডেমি’ নাম দিয়ে আজ সাড়ম্বরে উদ্বোধন করা হচ্ছে।

একাডেমির অর্থ, সেখানে খেলোয়াড়দের আবাসনের ও অনুশীলনের সব রকমের সুযোগ–সুবিধা থাকবে। জিম, সুইমিংপুল তো থাকবেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা—সবকিছুরই ব্যবস্থা থাকে একটা একাডেমিতে। সঙ্গে খেলোয়াড় তৈরির প্রক্রিয়াটাও থাকতে হবে ধারাবাহিক। কিন্তু কমলাপুরে মাঠ আর কোনোরকমে থাকার ব্যবস্থা ছাড়া যে আর কিছুই নেই! কিশোরেরা বাফুফে ভবনের জিমনেসিয়ামে আসে। ভালোভাবে জিম করার কোনো পরিবেশই নেই সেখানে। এভাবে কিছু কিশোরের নামমাত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেই ‘এলিট একাডেমি’ নাম দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

কমলাপুর স্টেডিয়ামেও ‘এলিট একাডেমি’ নাম দিয়ে নামমাত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল বাফুফে
ফাইল ছবি

বাফুফের সাবেক সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলামের ভাষায়, এর চেয়ে বড় প্রহসন আর হয় না, ‘এলিট একাডেমি মানে বিশাল একটা ব্যাপার। কিছু ছেলেকে কোথাও রেখে প্রশিক্ষণ দিলেই এলিট একাডেমি হয়ে যায় না। এটা এলিট শব্দেরই অবমাননা। ফুটবলের জন্যও খারাপ। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এ ধরনের নাম দেওয়া ঠিক নয়।’

তাহলে কেন এর নাম ‘এলিট একাডেমি’? বাফুফের হেড অব এলিট ইয়ুথ সাবেক ফুটবলার পারভেজ বাবুর ভাষ্য, ‘সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত এলিট প্লেয়ারদের নিয়ে এখানে বাফুফের কোচদের অধীনে দীর্ঘ মেয়াদে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’ কিন্তু সারা দেশ থেকে ছেলেদের বাছাই করে আনলেই সেটা এলিট একাডেমি হয়ে যাবে! এবার পারভেজের কথা, ‘এখানে আস্তে আস্তে সবই সংযোজন হবে।’

পারভেজের এই কথায় ভরসা রাখা কঠিন। কারণ, একাডেমি নিয়ে বাফুফের প্রহসন নতুন নয়। এর আগেও চেলসি, আয়াক্স আমস্টারডামের মতো ক্লাবের একাডেমির আদলে বাংলাদেশে একাডেমি করার অনেক আষাঢ়ে গল্প শুনিয়েছেন বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বলা হয়েছিল, কিশোরদের সব দায়িত্ব নেওয়া হবে। সেসব প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর ৫ মন্ত্রী নিয়ে সিলেট বিকেএসপিতে ঘটা করে একাডেমি খোলার পর এক বছরেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে রাজধানীর বেরাইদের ফর্টিস গ্রুপের স্থাপনায় একাডেমি করার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম চলে কিছুদিন। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে মাস কয়েক পরই। কমলাপুরের কথিত এই ‘এলিট একাডেমি’ কত দিন টেকে, সেটাই এখন দেখার।