একুশের আবেগ ছুঁয়ে যাচ্ছে তাঁদেরও

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। ৬৯ বছর আগে আজকের দিনে ভাষায় জন্য প্রাণ দিয়েছেন সালাম-বরকত-রফিকরা। ভিনদেশি হলেও দিনটি নিয়ে আপ্লুত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা বিদেশি ফুটবলার ও কোচদের অনেকে। তাঁদেরই কয়েকজনের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাবনা নিয়ে বিশেষ এই আয়োজন।

ফ্রান্সেসকো তোরেস।
ছবি: প্রথম আলো

শহীদ মিনারে যাব ভাবছি

ফ্রান্সেসকো তোরেস

ব্রাজিল, আবাহনী

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে আমার একটা ধারণা আছে। আমি জানি, এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্যও জীবন দিয়েছেন বাঙালিরা। ভাষার জন্য কোনো দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ভাবলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। মায়ের ভাষা সব সময়ই মিষ্টি, সেই ভাষায় আবেগগুলো প্রকাশ করতে না বলতে পারলে মন ভরে না। সারা বিশ্বের মানুষের জন্য এটি বিশেষ একটা দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের কোনো খেলা নেই। আমরা কয়েকজন ফুটবলার শহীদ মিনারে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। মাত্রই আসায় আমি অবশ্য বাংলা বলতে পারি না। তবে কেউ কিছু বললে অল্পস্বল্প বুঝতে পারি। সতীর্থরা আমাকে বাংলা শেখানোর চেষ্টা করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সবার মায়ের ভাষার প্রতি ভালোবাসা রইল আমার।

মারিও লেমোস
ছবি: প্রথম আলো

ভাষার জন্য বাঙালির লড়াই বিরল ঘটনা

মারিও লেমোস

পর্তুগাল, আবাহনী কোচ

চার বছর আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে চাকরি নিয়ে এসেছিলাম। এরপর দুই মৌসুম আবাহনীর কোচ হিসেবে আছি। বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কেও জানি। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল উর্দুকে এ দেশের রাষ্ট্রভাষা করতে। কিন্তু বাঙালিরা এই ভাষার জন্য লড়াই করেছে। বিশ্বে এটা বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের মানুষের এই লড়াইটা গর্ব করার মতো। এখানে এসে বাংলা শিখেছি। ভাড়া গাড়িতে কথাবার্তা শুরু হয়, ‘ভালো আছেন, কেমন আছেন’, তারপর আমি কোথায় যাব, এসব কথাবার্তা বলি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ছুটি আছে, আমি শহীদ মিনারে যেতে চাই। ফুটবলের সুবাদে এ দেশের অনেক শহরে ঘুরেছি। অনেক কিছু দেখেছি। আসলে এই দেশকে নিজের বলেই মনে হয়। বাংলা ভাষাটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।

মাসিহ সাইগানি।
ছবি: প্রথম আলো

এখানে এসে অল্পস্বল্প বাংলা শিখছি

মাসিহ সাইগানি

আফগানিস্তান, আবাহনী

সত্যি বলতে আমি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে ভালোমতো জানি না। তবে এ দেশে দুই মৌসুম খেলার সুবাদে এটুকু জানি, এই দিনটাকে বিশেষভাবে পালন করে সবাই। এই দিনে সরকারি ছুটি থাকে, এটুকু জানি। এখানে এসে অল্পস্বল্প বাংলাও শিখেছি। ‘কেমন আছ, ভালো আছি’—এগুলো বলতে পারি। আমার মাতৃভাষা ফারসি। বাংলা ভাষায় অনেক ফারসি শব্দ আছে। হঠাৎ করে কেউ যদি কথার মধ্যে কোনো ফারসি শব্দ বলে, সেটা আমার কানে এসে লাগে। অন্যের মুখে নিজের ভাষা শুনতে বেশ লাগে আমার। আমি বাংলাদেশে খেলি, এটা ভাবলে কখনো কখনো ভীষণ গর্ব হয়। দেশের বাইরে গিয়ে যখন এএফসি কাপে খেলি, তখন আবাহনী ক্লাব নয়, বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করি।

সলোমন কিং
ফাইল ছবি

সতীর্থদের মুখে গল্প শুনেছি

সলোমন কিং

গাম্বিয়া, শেখ জামাল ধানমন্ডি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিষয়টি আমার জানা আছে। প্রায় চার বছর ধরে বাংলাদেশে থাকায় এখন বুঝি দিনটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের সঙ্গে ভাষার জন্য লড়াই করেছে। দিনটি নিয়ে সতীর্থ খেলোয়াড়দের মুখে অনেক গল্প শুনেছি। শুনেছি, সবাই খালি পায়ে শহীদ মিনারে যায়। অনেক ফুল দেয়। সবাই ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানায়। যদিও আমার কখনো শহীদ মিনারে যাওয়া হয়নি। তবে আমার খুব ইচ্ছা শহীদ মিনারে যাওয়ার। এরই মধ্যে কিছু বাংলা ভাষা শিখে নিয়েছি। প্রয়োজনীয় কিছু কথা আমি বাংলাতেই বলতে পারি। আমার খুবই ভালো লাগে টুকটাক বাংলা শব্দ উচ্চারণ করতে।