এবার যাঁদের জন্য দেখবেন বাংলাদেশের ফুটবল

এবার আছে জমাটি ফুটবল মৌসুমের প্রতিশ্রুতিছবি: প্রথম আলো

এবার নিশ্চিত করেই বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল আপনার মন কাড়বে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এতটা নিশ্চিত হওয়া কীভাবে! দেশের ফুটবলের ন্যূনতম খোঁজখবর রাখলে জানা উচিত, এবার বাংলাদেশের ক্লাবগুলো কত ভালো মানের বিদেশি ফুটবলারদের সমাবেশ ঘটিয়েছে। সেই সঙ্গে ভালো মানের বিদেশি কোচ। বিদেশিদের সঙ্গে দেশিদের সমন্বয়ে ভালো ফুটবলের প্রত্যাশা এবার করাই যায়। বাংলাদেশের ফুটবল লিগের মান খারাপ নয়—এমন কথাবার্তা কয়েক বছর ধরে কান পাতলেই শোনা যায়। দু-এক মৌসুম ধরেই আফ্রিকান ফুটবলারদের ছায়া থেকে বেরিয়ে ক্লাবগুলো ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড়দের দিকে ঝুঁকেছে। এখানে খেলে গেছেন ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার। খেলেছেন মেসির সঙ্গে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে খেলা ফুটবলার। গত মৌসুমটা করোনার কারণে বাতিল না হলে জম জমাট ঘরোয়া মৌসুম দেখা যেত গতবারই। তবে এবার ক্লাবগুলো এরই মধ্য দিয়ে দিয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রিয়দের হৃদয় জয়ের প্রতিশ্রুতি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইরান, মিসর, ঘানা, ক্যামেরুন, তাজিকিস্তানের উঁচুমানের ফুটবলাররা এবার অন্য রকম একটা মৌসুমই উপহার দিতে যাচ্ছেন। এবারের ঘরোয়া ফুটবলে চোখ বিশেষ করে যাঁদের জন্য রাখতে হবে, তাঁদের কথা আসুন জেনে নিই...

রবসন ডি সিলভা (বসুন্ধরা, ফরোয়ার্ড, ব্রাজিল)

বসুন্ধরার জার্সিতে অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার। প্রথাগত উইঙ্গার হলেও কাল রহমতগঞ্জের বিপক্ষে রবসনকে খেলানো হয়েছে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে। ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে গোল করেছেন একটি। কিন্তু এক গোলে ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডকে বোতলবন্দী করে রাখা যাচ্ছে না। তাঁর পায়ে ফুটেছে ব্রাজিলিয়ান সুরভিত ফুটবল ফুল। তিনি দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয় জয়ের প্রতিশ্রুতি।

ব্রাজিলের রবসন এবার বসুন্ধরার বড় ভরসা।
সংগৃহীত ছবি

রবসনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব ফ্লুমিন্সের নাম। সেখান থেকেই এই বছরে আগস্টে এক বছরের ধারে এসেছেন আসছেন বসুন্ধরায়। এই তারকা ৪-২-৩-১ বা ৪-৩-৩ ছকে খেলতে পারেন সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা রাইট উইঙ্গার হিসেবেও। মূল ডান পায়ের এই খেলোয়াড় লেফট উইং থেকে উঠে এসে বক্সের মধ্যে ঢুকে গিয়ে ডান পায়ের শটে গোল করতে বেশ স্বচ্ছন্দ।

জোনাথন ফার্নান্দেজ (বসুন্ধরা, মিডফিল্ডার, ব্রাজিল)

রবসনের মতো পায়ে কারুকাজ নেই। তবে দুর্দান্ত পাস ও অনবদ্য ভিশনে দলকে খেলানোর দারুণ যোগ্যতা আছে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড রাউল বেসেরাকে দিয়ে বসুন্ধরার মৌসুমের প্রথম গোলটি করিয়েছেন তিনিই। ব্রাজিলিয়ান জাত আক্রমণ করতে জুড়ি নেই। তবে রক্ষণভাগকে ছায়া দেওয়ার ভালো গুণও আছে ফার্নান্দেজের।

বসুন্ধরার আরেক ব্রাজিলীয় জোনাথন
সংগৃহীত ছবি

বসুন্ধরায় নাম লেখানোর আগে সর্বশেষ ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব বোতাফোগোর জার্সিতে খেলেছেন এই মিডফিল্ডার। বোতাফোগো অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলে মূল দলে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সাল থেকে ব্রাজিলের শীর্ষ ক্লাব বোতাফোগোর মূল দলে খেলেছেন। ১০ বছর বয়সে এ ক্লাবের একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন ব্রাজিলের সিরি’আ ও সিরি’বিতে খেলা জোনাথন।

রাউল বেসেরা (বসুন্ধরা, ফরোয়ার্ড, আর্জেন্টিনা)

গোল দিয়েই বাংলাদেশে অভিষেক হয়েছে আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকারের। তাঁর গোলটি নতুন মৌসুমের বসুন্ধরারও প্রথম গোল। তবে নিজের প্রথম ম্যাচে অন্তত হার্নান বার্কোসের বিকল্প হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে ঢাকায় পা রাখা আর্জেন্টাইন অবশ্য এখনো পুরোপুরি ফিট নয়।

জন্মসূত্রে আর্জেন্টিনার নাগরিক বেসেরার চিলির নাগরিকত্বও আছে। ৩৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার সবচেয়ে বেশি খেলেছেন নিজের দেশ আর্জেন্টিনায়। আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, কোলন ও ক্লাব আলমাগ্রোর মতো নামকরা তিন আর্জেন্টাইন ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞা আছে তাঁর। এ ছাড়া কাতার, চিলি ও ইকুয়েডরেও খেলেছেন। সর্বশেষ কাতারের শীর্ষ লিগের ক্লাব উম সালাল স্পোর্টস ক্লাবের স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছিলেন বেসেরা। ১১ ম্যাচে করেছিলেন ৫ গোল। ডান পায়ের এই খেলোয়াড় আক্রমণভাগের যেকোনো জায়গায় খেলতে স্বচ্ছন্দ।

আর্জেন্টাইন বেসেরাকেও দেখা যাবে বসুন্ধরায়।
সংগৃহীত ছবি

রাফায়েল আগস্তো (আবাহনী, মিডফিল্ডার, ব্রাজিল)

প্রতিবেশী ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল আইএসএলে খ্যাতি আছে মিডফিল্ডার রাফায়েলের। ২৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ব্রাজিলের শীর্ষ লিগের দল ফ্লুমিনেন্সের যুব দলে খেলেছেন। ডাক পেয়েছিলেন ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলেও। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত হয়ে উঠেছিল তাঁর দ্বিতীয় দেশ। পাঁচ বছর ধরে খেলেছেন আইএসএলে। চেন্নাইয়িন এফসিতে খেলেছেন তিন বছর। এর সর্বশেষ বেঙ্গালুরু এফসির জার্সিতে খেলে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনীতে।

ক্রিস্টান বেকামেঙ্গা (মুক্তিযোদ্ধা, ফরোয়ার্ড, ক্যামেরুন)

ক্যামেরুন জাতীয় দলে খেলা স্ট্রাইকার ক্রিস্টান বেকামেঙ্গাকে দলে নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁর যে খেলোয়াড়ি বৃত্তান্ত, তার ছাপ রাখতে পারলেই উতরে যেতে পারে মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৬ সালে ক্যামেরুন জাতীয় দলে খেলা ছাড়াও ফ্রেঞ্চ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ফরাসি প্রথম সারির ক্লাব এফসি নঁতোতে খেলেছেন। সর্বশেষ তুরস্কের একটি ক্লাবে খেলে মুক্তিযোদ্ধায় নাম লিখিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধায় খেলবেন রজার মিলার দেশের বেকামেঙ্গো।
সংগৃহীত ছবি

সাদিক এডামস (আরামবাগ, ফরোয়ার্ড, ঘানা)

২০১৭ সালে ঘানা জাতীয় দলে খেলা মিডফিল্ডার সাদিক এডামসকে এবার দলে ভিড়িয়েছে আরামবাগ। ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ২০০৭ সালে তিনি আতলেতিকো ‘বি’ দলের হয়েও খেলেছিলেন। সর্বশেষ তিনি খেলেছেন লেবানন লিগে, বোর্ড এফসির হয়ে।

আরামবাগের ঘানাইয়ান ফুটবলার সাদিক যথেষ্ট উঁচুমানের।
সংগৃহীত ছবি

করোনার জন্য মাঠে এসে খেলা দেখার তেমন সুযোগ নেই। তবে ঘরে বসে টিভি পর্দায় চোখ রাখতে পারেন নিজের দেশের ফুটবল উপভোগ করার জন্য।