এমন মৌসুম আর আসেনি কোচ জিদানের ক্যারিয়ারে

এবার ম্যাচ জিতেও মন খারাপ জিনেদিন জিদানের। ম্যাচ জিতলেও যে লা লিগার শিরোপা জেতা হলো না তাঁর দল রিয়াল মাদ্রিদের।ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের শেষ বাঁশি বেজে গেছে। মাথা নিচু করে প্রতিপক্ষ কোচের দিকে এগোলেন জিনেদিন জিদান। হাত মেলানোর পর বিষণ্ন মুখে পিঠও চাপড়ে দিলেন ভিয়ারিয়াল কোচের। দেখে কে বলবে, ম্যাচটা জিদানের দলই জিতেছে!

মন খারাপ করার মতো ঘটনা এই মৌসুমে কম ঘটেনি রিয়াল মাদ্রিদের! নিজেদের মাঠে লা লিগায় কাদিজ, আলাভেজ আর লেভান্তের কাছে হেরেছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দলটি। সব মিলিয়ে ড্র করেছে ৯টি ম্যাচ। স্প্যানিশ সুপার কাপ, কোপা দেল রে থেকে ছিটকে পড়ার পর জিদানের এমন মন খারাপের দৃশ্য ভেসে উঠেছে ক্যামেরায়। জিদানের এমন হতাশার ক্ষণ এসেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেও।

রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জিনেদিন জিদান।
ছবি: রয়টার্স

তবে এ মৌসুমে জিদানের সবচেয়ে মন খারাপের ক্ষণটি হয়তো এসেছে গতকালই এবং সেটা ম্যাচ জেতার পর! ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে নাটকীয়ভাবে ২-১ গোলে জিতে মৌসুম শেষ করেছেন রিয়াল। কিন্তু জয়ের উচ্ছ্বাস কীভাবে করবেন জিদান! পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে পাওয়া এমন এক জয়ের পরও যে তাঁকে পুড়তে হয়েছে লা লিগার শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপে। শুধু লা লিগাই শিরোপাই যে হাতছাড়া হয়েছে, তা নয়, এই মৌসুমে কোনো ট্রফিই জিততে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। কোচিং ক্যারিয়ারে জিদানও এই প্রথম কিছুই না জেতা একটা মৌসুম কাটালেন! এমন না পাওয়ার শূন্যতায় বুকে হাহাকার তো থাকবেই।

কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ—একেকটা টুর্নামেন্ট থেকে রিয়াল মাদ্রিদ ছিটকে গেছে, প্রতিবারই প্রশ্ন উঠেছে জিদানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। জিদান বারবারই বলে গেছেন—তাঁর চলে যাওয়াটাই সমাধান নয়। চলে গেলে তো যাওয়াই যায়, কিন্তু যাঁরা প্রকৃত যোদ্ধা, তাঁরা কি আর যুদ্ধের ময়দান থেকে লেজ গুটিয়ে পালান!
জিদানও পালিয়ে যাননি। দলকে অন্তত একটি শিরোপা এনে দিতে লা লিগার শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন। করোনার হানা, একের পর এক চোট মিলিয়ে দলটাকে এত নড়বড়ে করে দিয়েছিল যে মাঝে মাঝে জিদানের নিজেকে অসহায় মনে হওয়ার কথা। তারপরও করিম বেনজেমা, লুকা মদরিচ, কাসেমিরো...তাঁর একেকজন সেনানী তুমুল লড়াই করেছেন!

রিয়াল মাদ্রিদে জিনেদিন জিদানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু শেষে গিয়ে সবকিছু আসলে জিদান-বেনজেমাদের হাতে ছিল না! হিসাব-নিকাশ কঠিন হয়ে পড়েছিল এর আগেই। তাই তো শেষ ম্যাচে জয়ের পর শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি রিয়াল। ভায়াদোলিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে ৭ বছর পর আবার লা লিগার ট্রফি ঘরে তুলেছে দিয়েগো সিমিওনের আতলেতিকো মাদ্রিদ।

জয়ের পরও তাই জিদানের অবনত মস্তক, উদভ্রান্ত দৃষ্টি, ভারী দুটি পা টেনে টেনে টানেল দিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যাত্রা। এরপর একটা বিষণ্ন সংবাদ সম্মেলনে আরেকবার তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আতলেতিকো মাদ্রিদকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নে জিদান বলেছেন, ‘এমন একটি ম্যাচের পর আমাদের একটু শান্ত থাকতে হবে। এরপর কিছুদিন পর আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’ এর আগে বলেছেন তাঁর মনের অবস্থাটাও, ‘আমি প্রচণ্ড হতাশ। খুবই বিক্ষিপ্ত অবস্থা আমার। আসলে কিছুই ভালো লাগছে না।’

শেষ ম্যাচটি জিতেও শিরোপা জিততে না পারায় হতাশ ও বিক্ষুব্ধ জিনেদিন জিদান।
ছবি: রয়টাস

আপাতত বাতাসে গুঞ্জন, বার্নাব্যুতে আর থাকবেন না ফরাসি এই কিংবদন্তি। সেটা যদি হয়, তাহলে কোচিং ক্যারিয়ারেও নতুন এক অভিজ্ঞতা হবে জিদানের। প্রথমবার তিনি রিয়ালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। প্রথম দফায় টানা তিন মৌসুমে জিতেছেন টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ। এ ছাড়া একটি লা লিগাসহ রিয়ালকে এনে দিয়েছেন মোট ৯টি শিরোপা।

জিদান আবার রিয়ালে ফিরেছেন তাঁর সাবেক ক্লাবের ক্রান্তিকালে, ২০১৯ সালে। আগেরবারের মতো এবারও ফিরেই রিয়ালের ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন। ২০১৯-২০ মৌসুমে দলকে জিতিয়েছেন দুটি শিরোপা—লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। কিন্তু এ মৌসুমে জাদুর কাঠিটা যেন হারিয়ে ফেলেছেন জিদান। আর না হলে এমন শূন্যতায় কেন শেষ হবে মৌসুম!