এমন হার গার্দিওলার কপালে কখনো জোটেনি

দলের রক্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা কমছেই না গার্দিওলার।ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার সিটিতে রক্ষণটাই শান্তি দিল না পেপ গার্দিওলাকে। সেই ২০১৬ সালে ক্লাবটাতে আসার পর থেকে যে রক্ষণকে গোছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ, কাড়ি কাড়ি ইউরো খরচ করে যাচ্ছেন, তাতেও এখনো যেন শেষই হচ্ছে তাঁর রক্ষণ গোছানো।

গত মৌসুমে লিভারপুলের কাছে ম্যান সিটির লিগ শিরোপা হারানোর বড় কারণ হিসেবে দেখানো হয় সিটির রক্ষণের ভুলকে। এবার ডিফেন্ডার কেনায় আরও কোটি কোটি টাকা ঢেলেছেন গার্দিওলা, লিভারপুলের কাছ থেকে এবার শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে নেমেছেন। কিন্তু লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই আজ ধাক্কা খেল সিটি। ধাক্কা বলতে লজ্জার হারই। পাঁচ গোল খেয়েছে সিটি! নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে লেস্টার সিটির কাছে আজ গার্দিওলার দলের হার ৫-২ গোলে।

পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করছেন ভার্ডি।
ছবি: রয়টার্স।

১২ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে এ নিয়ে বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার সিটি—তিনটি দলকে কোচিং করিয়েছেন গার্দিওলা। সব মিলিয়ে এর আগে তাঁর অধীনে ৬৮৫টি ম্যাচ খেলেছে ক্লাবগুলো। কিন্তু এক ম্যাচে পাঁচ গোল খাওয়ার অভিজ্ঞতা—এর আগে কখনো তাঁর দলকে এভাবে হারতে দেখেননি গার্দিওলা! লেস্টারের হয়ে দারুণ হ্যাটট্রিক করেছেন জেমি ভার্ডি। ভার্ডির তিন গোলের দুটি পেনাল্টি থেকে, সিটি পাঁচ গোলের মধ্যে মোট তিনটি খেয়েছে পেনাল্টি থেকে। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে একই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে তিন গোল করল লেস্টার।

গত মৌসুমে তবু রক্ষণের মূল ভরসা এমেরিক লাপোর্তের দীর্ঘমেয়াদী চোটকে সিটির রক্ষণের নড়বড়ে কারণ হিসেবে দেখানো গেছে। এবার সেই ফাঁকটাও ঢাকতে আবার ইউরোর বস্তা নিয়ে নেমেছেন গার্দিওলা। এরই মধ্যে ৪৫ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ করে বোর্নমাউথ থেকে নাথান আকেকে এনেছেন গার্দিওলা। সেন্টারব্যাক নিকোলাস ওতামেন্দির পাশাপাশি আরও সাড়ে ৪ কোটি ইউরো দিয়ে বেনফিকা থেকে রুবেন দিয়াজকে আনাও চূড়ান্ত।

কিন্তু আজকের ম্যাচে সেই ডিফেন্ডারের অভাবেই ভুগলেন গার্দিওলা। এক সেন্টারব্যাক জন স্টোনস চোটে, আর লাপোর্ত মাত্রই চোট থেকে উঠে এসে কদিন হলো অনুশীলন করছেন। দুজনকে একাদশে না রেখে তাই আকের সঙ্গে তরুণ এরিক গার্সিয়াকে সেন্টারব্যাকের জুটি হিসেবে রেখেছিলেন গার্দিওলা।

একদিকে রক্ষণ গোছাতে পারছেন না গার্দিওলা, তারওপর আক্রমণভাগেও চোটের চোটপাট। সের্হিও আগুয়েরো হাঁটুর অস্ত্রোপচারের ধকল কাটিয়ে ফিরতে আরও মাস দুয়েক লাগবে, নতুন করে চোটে দু-তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন আরেক স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল জেসুসও। উপায় না দেখে তাই রিয়াদ মাহরেজকে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে রেখেই একাদশ গড়েছেন গার্দিওলা।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য কে অনুমান করতে পেরেছিল, গার্দিওলার দল এভাবে অসহায়ভাবে হারবে! ৪ মিনিটেই বক্সের ডান দিক থেকে মাহরেজের গোলার মতো শটে সিটি এগিয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, সিটিই বুঝি গোল উৎসব করবে। কিন্তু কোথায় কী! জেমি ভার্ডি যে অন্য কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন।

৩৭ মিনিটে ভার্ডির পেনাল্টিতে সমতায় লেস্টার। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবার ভার্ডির জোড়া ধাক্কা। ৫৪ মিনিটে টিমোথি কাস্তানিয়ের দারুণ ক্রসে তার চেয়েও দারুণ ফ্লিকে নিজের ও লেস্টারের দ্বিতীয় গোল করেন ভার্ডি। চার মিনিট পর আবার পেনাল্টি, এবার হ্যাটট্রিক ভার্ডির।

গার্দিওলার দুঃস্বপ্ন তখনো শেষ হলে তো! ৭৭ মিনিটে লেস্টারের চতুর্থ গোলটি করেন জেমস ম্যাডিসন। মাঝে ৮৪ মিনিটে আকে গোল করে সিটির হয়ে ব্যবধান কমান। কিন্তু চার মিনিট পর আবার গার্দিওলা ও সিটির দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে পেনাল্টি। এবার গোল করেন লেস্টারের ইউরি তেলেমান। গার্দিওলার কপালে জোটে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় লজ্জার হার!