এমবাপ্পে-মেসি নয়, ১৫০০ কোটিতে নেইমারের নতুন সঙ্গী আনছে পিএসজি

নেইমার-এম্বাপ্পের জুটি পিএসজিতে সফল।ছবিঃ রয়টার্স

আগামী মৌসুমে লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলতে চেয়েছেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে তো বার্সেলোনার এখন আর কেনার সামর্থ্য নেই, ওদিকে বার্সায় মেসিরও চুক্তি শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তাই গুঞ্জন ছড়ায়, পিএসজি মেসিকে কিনবে।

কিন্তু মেসিকে পেলেও পিএসজি আগামী মৌসুমে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে হারাতে পারে বলেও গুঞ্জন চালু আছে বাজারে। গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে গিয়ে মেসির বার্সাকেই ধসিয়ে দিয়ে আসা এমবাপ্পেকে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল পেতে চায় বলে গুঞ্জন তো অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে।

তা এমবাপ্পে যদি চলে যান, আর মেসিও যদি শেষ পর্যন্ত ক্লাবে যোগ না দেন, সে ক্ষেত্রে পিএসজির একজন স্ট্রাইকার তো লাগবে। ইংলিশ সংবাদমাধ্যমের গুঞ্জন সত্যি হলে সে ক্ষেত্রে আক্রমণে নেইমারের আরেকজন সম্ভাব্য সঙ্গী খুঁজে বের করেছে পিএসজি। তাঁকে পেতে খরচটাও কম হবে না, প্রায় ১৫ কোটি ইউরো লাগবে বলে অনুমান। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তাঁর নাম—হ্যারি কেইন!

ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মিরর দিয়েছে খবরটা। দলবদলের গুঞ্জনে মিররের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে ইউরোপের ফুটবলপ্রেমীদের, তবে পত্রিকাটি লিখেছে, আগামী মৌসুমে নেইমার বা এমবাপ্পের কেউ দল ছাড়লে পিএসজি হাত বাড়াতে পারে কেইনের দিকে।

কেইনকে কিনবে পিএসজি?
ছবি: রয়টার্স

যদিও সেই মিররই নেইমার-এমবাপ্পেকে নিয়ে লিখেছে, এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে আর নেইমার বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন আছে। এমবাপ্পের ক্ষেত্রে গুঞ্জনটা সত্যি, কিন্তু বার্সার আর্থিক দুর্দশার মধ্যে নেইমারের বার্সায় ফেরার গুঞ্জন এখন আর শোনা যায় না। বরং পিএসজিতে সুখে আছেন, ফরাসি ক্লাবটিতে ইতিহাস গড়তে চান বলে জানিয়ে দিয়েছেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সেখানে চুক্তি নবায়নের ব্যাপারে প্রায় সবকিছু পাকাপাকি হয়ে গেছে বলেও খবর।

অনেকে অবশ্য এখানেও দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নিতে পারেন। পিএসজির বর্তমান কোচ মরিসিও পচেত্তিনো ২০১৯ সালের নভেম্বরে বরখাস্ত হন টটেনহাম থেকে, এক বছরেরও বেশি সময় বেকার থাকার পর পিএসজিতে যোগ দেন আর্জেন্টাইন কোচ।
কেইনের উত্থানের পেছনেও বড় অবদান পচেত্তিনোর।

প্রায় অখ্যাত এক নাম থেকে টটেনহামের জার্সিতে কেইনের ইউরোপের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হয়ে ওঠা, টটেনহামের অধিনায়ক বনে যাওয়া...সব টটেনহামে পচেত্তিনোর সাড়ে পাঁচ বছর কোচিংয়ের সময়েই। আর্জেন্টাইন কোচের সঙ্গে এখনো কেইনের সম্পর্ক বন্ধুর মতো, হোয়াটসঅ্যাপে দুজনের নিয়মিত যোগাযোগ হয় বলেও এর আগে জানিয়েছিল ডেইলি মিরর। গত মাসে পচেত্তিনো পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন কেইন।

আগামী জুনে ২৮-এ পা দিতে যাওয়া কেইনের নামও যোগ হওয়ায় ইউরোপের দলবদলের গুঞ্জনে এটা নিশ্চিত হয়ে গেল, আগামী মৌসুমে স্ট্রাইকারদের রমরমা বাজার থাকবে। দুই তরুণ স্ট্রাইকার—পিএসজিরই এমবাপ্পে আর বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের আর্লিং হরলান্ডকে নিয়ে তো এখন ইউরোপের বড় প্রায় সব দলেরই টানাটানির দশা। তালিকায় কেইনের নামটিও যোগ হওয়াতে আশ্চর্যের কিছু নেই।

মেসি-নেইমারকে পিএসজির জার্সিতে একসঙ্গে দেখার গুঞ্জনও শোনা যায়।
ছবি: রয়টার্স

জোসে মরিনিও টটেনহামের কোচ হয়ে আসার পরও একই ছন্দে আছেন ইংলিশ স্ট্রাইকার। গোল তো করছেনই, করাচ্ছেনও। ইংলিশ লিগে এই মৌসুমে গোল করা ও করানো—দুই হিসাবেই দুই অঙ্ক পেরোনো একমাত্র খেলোয়াড় কেইন। লিগে গোল করেছেন ১৩টি, করিয়েছেন ১১টি। সন হিউং-মিনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তুলেছেন, সন-কেইনের জুটির কারণেই মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ের হোঁচট কাটিয়ে এই মৌসুমে এখনো লিগে সেরা চারে থাকার আশা করতে পারছে টটেনহাম।

এমন ছন্দে থাকা কেইনকে শুধু যে পিএসজিই চায়, তা নয়। গুঞ্জন শোনা যায় ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে জড়িয়েও। ম্যান সিটিতে নিয়মিত চোটের সঙ্গে যুঁঝতে থাকা ৩২ বছর বয়সী সের্হিও আগুয়েরোর বদলে পেপ গার্দিওলা নাকি কেইনকে চান, এমনটাই গত কিছুদিনে শোনা যাচ্ছে ইউরোপের দলবদলের গুঞ্জনে। ওদিকে ইউনাইটেডও নিয়মিত মৌসুমে ২০-এর বেশি গোল করতে পারা স্ট্রাইকার খুঁজছে। এমবাপ্পে-হরলান্ডকে নিয়ে মাতামাতির আগে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গেও জড়িয়ে গিয়েছিল কেইনের নাম।

কিন্তু শুধু এই ক্লাবগুলো চাইলেই তো হবে না, টটেনহাম কি ছাড়বে কেইনকে? সোনার ডিম পাড়া হাঁস বলে কথা। কিন্তু ইংলিশ সংবাদমাধ্যমে যা খবর, তাতে বোঝা যাচ্ছে, টটেনহামের আর্থিক অবস্থা আর মাঠে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা মিলিয়ে কেইনের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বছর দু-এক হলো ঝাঁ-চকচকে আধুনিক স্টেডিয়াম বানিয়েছে টটেনহাম। কোটি কোটি পাউন্ড খরচ করে বানানো সে স্টেডিয়ামের জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ধারের টাকা শোধ করতে হবে স্পার্সকে। টটেনহামের চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল লেভি তাই ঠিক করে রেখেছেন, কেইনকে যদি বিক্রি করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে নেইমার (দলবদল মূল্য ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো) ও এমবাপ্পের (১৮ কোটি ইউরো) পর কেইনকে দলবদলের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় বানিয়েই ছাড়বেন। নেইমার-এমবাপ্পেকে নিয়ে দলবদলের রেকর্ড দুটি গড়েছিল পিএসজি, কেইন তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার হয়ে পিএসজিতে গেলে সেরা তিনে ফরাসি ক্লাবটারই জয়জয়কার হবে।

কেইনের বেতন অবশ্য পিএসজির খুব একটা মাথাব্যথার কারণ হওয়ার কথা নয়। টটেনহামের সঙ্গে তাঁর চুক্তি আছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, সেখানে ইংলিশ স্ট্রাইকার বেতন পান সপ্তাহে ২ লাখ পাউন্ড। নেইমার-এমবাপ্পেরা এর চেয়ে বেশিই পান পিএসজিতে। তবে কেইনকে নেওয়ার ক্ষেত্রে পিএসজি—বা অন্য যেকোনো আগ্রহী ক্লাবের—মাথাব্যথার নাম হবে ড্যানিয়েল লেভি। দলবদলের ক্ষেত্রে এই ভদ্রলোকের নিজের চাহিদা যেকোনোভাবে বুঝে নেওয়ায় বেশ সুনাম আছে।

ছোটবেলা থেকে টটেনহামের ভক্ত কেইনের জন্য ক্লাবটা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্য মানসিক একটা পরীক্ষার সামনে দাঁড় করাবে। উত্তর লন্ডনের ক্লাবটাতে এ পর্যন্ত সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৩১৯ ম্যাচে ২০৯ গোল কেইনের, ক্লাবের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। কিন্তু সময়ের সেরা ফুটবলারদের একজন হলেও তাঁর নামের পাশে কোনো ট্রফি নেই, টটেনহামে তাঁর শিরোপা জেতার সম্ভাবনাও ক্ষীণ—সেটিই কেইনকে টটেনহাম ছাড়ার কথা ভাবাতে পারে।

গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে মেসির বার্সাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পিএসজি।
ছবি: রয়টার্স

এখন পর্যন্ত টটেনহামে দুবারই শিরোপার কাছে গিয়েছিলেন কেইন। কিন্তু ২০১৫ সালে লিগ কাপের ফাইনাল আর ২০১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল—দুটিতেই হেরেছে টটেনহাম। লিগ কাপে চেলসির বিপক্ষে, চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের কাছে।

এই মৌসুমে অবশ্য একটা শিরোপা জেতার সুযোগ আছে তাঁর। টটেনহাম এবারও লিগ কাপের ফাইনালে উঠেছে। তবে সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে পেপ গার্দিওলার ম্যান সিটি। লিগে তো শিরোপার সম্ভাবনা শুধু অঙ্কের হিসাবেই আছে, ইউরোপা লিগেও জোসে মরিনিওর দলকে বড় পরীক্ষার সামনে পড়তে হবে বটে।

সেখানে পিএসজিতে গেলে ফ্রান্সের ঘরোয়া শিরোপাগুলো জেতা তো ‘হাতের মোয়া’ই হয়ে যাবে কেইনের জন্য। পাশাপাশি পিএসজির গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠা আর এই মৌসুমে বার্সাকে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে গুঁড়িয়ে দেওয়া বলে, ইউরোপেও দলটার শিরোপার সম্ভাবনা বাড়ছে।