এমবাপ্পে ‘যাচ্ছেন কিন্তু যাচ্ছেন না’

নেইমার ও এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে পারবে পিএসজি?ছবি: রয়টার্স

‘চলে যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না!’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল প্রচলিত এ কথাটি চাইলেই কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্ষেত্রে চালিয়ে দেওয়া যায়। দুই দিন পরপর তাঁর দলবদলের খবরে ফুটবলপাড়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রিয়াল মাদ্রিদ, লিভারপুল থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ক্লাবের নামই শোনা যায়। কিন্তু এমবাপ্পে এমন গুঞ্জনে কোনো পাত্তা দেন না।

এমবাপ্পে আবার পিএসজিতে থাকবেন বলে জোর গলায় কিছু বলতেও চান না। একটি কাজ করলেই সব গুঞ্জন ধামাচাপা পড়ে যায়, আর সেটা হলো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন। কিন্তু ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড সে কাজটাও করছেন না। নিজ ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ দিন দিন কমে আসছে। তবু এখনো নবায়নে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এমবাপ্পে।

গতকাল মপেলিয়েঁর বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন এমবাপ্পে। সে ম্যাচের পর নিজের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক দিন পর কথা বলেছেন। কিন্তু সে কথার মর্মার্থ বের করতে চাইলে একটি বাক্যেই সেটা বলা সম্ভব, ‘যাচ্ছি না কিন্তু যাচ্ছি!’

কাল জোড়া গোল করেছেন এমবাপ্পে।
ছবি: রয়টার্স

গত কিছুদিন ধরেই ফর্মে ছিলেন না। এর মধ্যে নতুন কোচ এসেছেন পিএসজিতে। মরিসিও পচেত্তিনো সবার আগে শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারকা হলেই আর পার পাবেন না বলে সতর্ক করা হয়েছে এমবাপ্পে-নেইমারদের। এর সঙ্গে এমবাপ্পের ফর্ম হারিয়ে ফেলার যোগসূত্র পাচ্ছিলেন বিশ্লেষকেরা। এত দিন নেইমার-এমবাপ্পেকে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছে পিএসজি। কিন্তু প্যারিসের ক্লাবটির ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দো এখন বলছেন, যেভাবেই হোক আটকানোর আর ইচ্ছা নেই তাঁদের। যদি কারও ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা না থাকে, দরজা খুলে দেবে পিএসজি।

গতকাল পিএসজির ৪-০ গোলের জয়ের পরও নিজের চুক্তি নিয়ে কথা বলতে হয়েছে বিশ্বকাপজয়ী এমবাপ্পেকে। ফরাসি টিভি তেলেফুতকে বলেছেন, ‘এর আগেও এই প্রশ্ন করা হয়েছে। আমরা একটা প্রকল্প খুঁজছি, এ নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে কথা বলছি। আমি এ নিয়ে চিন্তা করছি। যদি চুক্তি স্বাক্ষর করি, তার মানে আমি এই ক্লাবে নিজেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেখছি।’

এ কথা অবশ্য এমবাপ্পে না বললেও চলত। বিশ্ব ফুটবলে এখন নেইমারের চেয়েও আকাঙ্ক্ষিত ফুটবলার তিনি। দলবদলের বাজারে করোনার পরও তাঁর মূল্য ২০ কোটি ইউরোর নিচে নামছে না। এমন অবস্থায় তাঁকে পেতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ বা লিভারপুলের পক্ষে তাঁকে কেনা কঠিন। একমাত্র উপায় হলো, ২০২২-এ পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হতে যাওয়া এমবাপ্পের চুক্তি নবায়ন না করা। সে ক্ষেত্রেই কেবল এ দুই ক্লাব বা অন্য ক্লাবের পক্ষে পিএসজির সঙ্গে দর-কষাকষি করা সম্ভব। কিন্তু এর মধ্যেই যদি এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন করেন, তবে এ দুই ক্লাবের পক্ষে করোনা–পরবর্তী বিশ্বে নিকট ভবিষ্যতে আর এ দলবদলের পথে হাঁটা সম্ভব হবে না।

এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে চাইছে পিএসজি।
ছবি: রয়টার্স

এখনো চুক্তি নবায়ন করেননি নেইমারও। কিন্তু এই প্রথম নেইমারকে ‘বার্সেলোনায় যেতে চাই’ নয়, বরং ‘পিএসজির হয়ে জিততে চাই’ বলতে শোনা গেছে দলবদলের সময়টাতেও। এখন পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, নেইমার পিএসজিতেই আরও দীর্ঘ সময় থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু এমবাপ্পেকে নিয়ে ধোঁয়াশা কমছেই না। এমবাপ্পে কাল যা বলছেন তাতে আশা খুঁজে পেতে পারেন পিএসজির সমর্থকেরা, ‘আমি এখানে খুবই সুখে আছি। ক্লাব ও সমর্থকেরা সব সময়ই আমাকে সাহায্য করেছে। আগামী কয়েক বছরে আমি কী করব, এ নিয়ে ভাবতে হবে। কোথায় থাকতে চাই, চিন্তা করতে হবে।’

অনেক ফুটবলারই ক্লাবের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেই পরের মৌসুমেই দলবদলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নেইমার ও আঁতোয়ান গ্রিজমান যেমনটা করেছিলেন। কিন্তু এমবাপ্পে সেটা করার পক্ষপাতী নন। আর এ কারণেই চুক্তি নবায়নের আগে ভালোভাবে ভেবে দেখতে চাইছেন ২২ বছর বয়সী, ‘আমি এ নিয়ে ভাবছি। এমন নয় যে আমি আরেকটু সময় নেওয়ার চেষ্টা করছি বা এমন কিছু। যদি চুক্তি স্বাক্ষর করি, তাহলে আমি থেকেই যাব। তাই এ নিয়ে ভাবছি আমি।’

এখনো চুক্তি নবায়ন করেননি ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড।
ছবি: রয়টার্স

গত কিছুদিনে পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তবে এমবাপ্পে নিজের দায় অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি যে মানের খেলোয়াড়, মাঠে সেটা দেখাতে পারছিলেন না বলেই তাঁর ধারণা, ‘সত্যি কথা হলো, আমি ভালো খেলিনি। আর যদি আপনাকে গোল করতে দেখে সবাই অভ্যস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে যখন আপনি গোল করবেন না, তখন সমালোচনা হবেই। এটাই স্বাভাবিক। আমি অন্য সবার চেয়ে আমার দেশের মানুষকে ভালো চিনি। এখানকার মানুষদের মানসিকতা জানি এবং জানতাম কঠিন সময় আসছে।’

ওদিকে দায়িত্ব পাওয়ার পরই কঠিন সময় পার করেছেন পচেত্তিনো। খেলোয়াড়েরা প্রিয় কোচ টমাস টুখেলের বিদায়টা সহজে মেনে নিতে পারেননি। দলের পারফরম্যান্সও ভালো হচ্ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলে ফেলেছেন পচেত্তিনো। এরই মধ্যে লিগে শীর্ষস্থান বুঝে নিয়েছে। দুইয়ে ও তিনে থাকা লিল ও লিওঁর চেয়ে যথাক্রমে ৩ ও ৫ পয়েন্টে এগিয়ে পিএসজি।

এমন অবস্থায় তাঁর জন্য কাঁটা হয়ে আছে খেলোয়াড়দের চুক্তি নবায়নের বিষয়টি। পরে যা-ই হোক, আপাতত এমবাপ্পের ওপর পূর্ণ আস্থা পচেত্তিনোর, ‘আমার খেলোয়াড়েরা কী বলছে তা নিয়ে মন্তব্য করব না। এটা পরিষ্কার যা বলা হয়েছে তা বুঝেই বলা হয়েছে। সে পিএসজির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আশা করি আরও অনেক বছর সে আমাদের সঙ্গে থাকবে।’