এশিয়ান বলে হামজাদের ওপরে উঠতে দিচ্ছে না ইংল্যান্ড

হামজার মতো খেলোয়াড়দের একাডেমিতে নিতে চায় না ইংল্যান্ডের অনেক ক্লাব।
ছবি: টুইটার

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সন হিউং-মিন। দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড টটেনহাম অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে নিয়ে রীতিমতো গোল উৎসব করেছেন প্রথম কয়েক সপ্তাহ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এশিয়ার পতাকা ওড়ানোর দায়িত্ব পুরোটা প্রায় একাই বুঝে নিয়েছেন সন। ওদিকে লিভারপুলের আক্রমণে আছেন জাপানের তাকুমি মিনামিনো। ব্রাইটনে খেলছেন ইরানের আলিরেজা জাহানবাখশ। ব্যস, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে এশিয়ার অবদান এটুকুই।

প্রিমিয়ার লিগে এশিয়ান সুবাস আরও দুজনের গায়ে আছে। একজনকে বাংলাদেশের ফুটবলভক্তরা খুব ভালোভাবেই চেনেন। লেস্টার সিটির হামজা চৌধুরী যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত! এ ছাড়া এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ আর মাত্র একজনেরই আছে প্রিমিয়ার লিগে। অ্যাস্টন ভিলার নিল টেলরের গায়েও আছে বাঙালি রক্ত। টেলরের মা যে কলকাতার মেয়ে!

কিন্তু টেলর আর হামজাতেই আটকা পড়ে আছে প্রিমিয়ার লিগে এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের অংশগ্রহণ। কারণ, ইংলিশ ক্লাবগুলো এখনো খেলোয়াড় বাছাই করার সময় জাতিবিদ্বেষী মনোভাব নিয়েই মাঠে নামে! ফুটবলে বর্ণবিদ্বেষী আচরণ নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা কিক ইট আউটের দাবি এমনই।

লেস্টারের জার্সিতে হামজা।
ছবি: টুইটার

কিক ইট আউট-এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় ভান্ডারি দাবি করেছেন, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এশিয়ান খেলোয়াড় বা এশিয়ান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের নেয় না ক্লাবগুলো। আর তাদের এমন আচরণের পেছনে সস্তা জাতিবিদ্বেষী মনোভাবই প্রভাব ফেলছে। ভান্ডারি দাবি করেছেন, এ ব্যাপারে খেলাটার সঙ্গে যুক্ত আড়াই শ লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। গবেষণা করে দেখেছেন শীর্ষ ক্লাবগুলো তাদের একাডেমিতে তরুণ এশিয়ান খেলোয়াড়দের কেন নিচ্ছে না।

ইংল্যান্ডের ফুটবলে সব ধরনের শ্রেণি ও জাতির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় কিক ইট আউট। প্রিমিয়ার লিগের ৩০ বছরের ইতিহাসে এশিয়ান বংশোদ্ভূত ফুটবলারের তালিকা করতে গিয়ে হামজা চৌধুরীর মতো হাতে গোনা কয়েকটি নাম পাওয়া যায়। ডেইলি মিররকে ভান্ডারি বলেছেন, পর্যবেক্ষণে চমকে যাওয়ার মতো সব তথ্য পেয়েছেন তাঁরা, ‘প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একাডেমি দলের কোচ বা স্কাউট খেলোয়াড়ের বাবা-মাকে বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তো ওকে (খেলোয়াড়) অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা আইনজীবী বানানোরই চেষ্টা করবে, তোমার বাচ্চার পেছনে কেন সময় নষ্ট করব আমি?’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি, টটেনহাম, ম্যানচেস্টার সিটি—‘বিগ সিক্স’ নামে পরিচিত প্রিমিয়ার লিগের বড় এই ছয় ক্লাবের অন্তত একটির একাডেমির কোচ এমন আচরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন ভান্ডারি। ‘এখনো এ ধরনের সস্তা বর্ণবাদ চলছে এবং সেটা সবাই মেনে নিচ্ছে—এটা তো রীতিমতো কেলেঙ্কারি! সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে করা এমন বৈষম্যকে নিজেদের পুরো প্রক্রিয়া থেকে দূর করা উচিত ক্লাবগুলোর’—ভান্ডারির আহ্বান।

টেলরের মতো ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষস্থানে খেলার সৌভাগ্য হয় না অনেক এশিয়ান বংশোদ্ভূত ফুটবলারের।
ছবি: টুইটার

করোনাভাইরাসের কারণে ফুটবল এখন অনেকটাই অনলাইনভিত্তিক হয়ে উঠেছে। প্রিমিয়ার লিগে খেলা মাঠে ফিরলেও দর্শকদের ফেরা হয়নি গ্যালারিতে। লকডাউনের সময় থেকেই ফুটবল দর্শকদের মূল ভরসা হয়ে উঠেছে অনলাইন স্ক্রিন। সে সুবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সবাই শোরগোল তুলছেন। কিন্তু এটারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ফুটবলে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন ভুলভাবে। অনলাইনে অপদস্থ করছেন অন্যদের। আর এর মধ্য দিয়ে জাতিবিদ্বেষী ও বর্ণবিদ্বেষী আচরণের শিকার হচ্ছেন বহু খেলোয়াড়।

ব্যাপারটা কতটা তীব্র হয়ে উঠেছে, সেটা তুলে ধরেছেন ভান্ডারি, ‘কোভিডের কারণে চীনকে অপমান করার বিষয়টি অনেকবার উঠে এসেছে। যেহেতু খেলা এখন শূন্য গ্যালারিতে হচ্ছে; ইহুদিবিদ্বেষ, ইসলামবিদ্বেষ, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতি জাতিবিদ্বেষ, সমকামবিদ্বেষ ও হিজড়াবিদ্বেষ এখন অনলাইনে জায়গা করে নিচ্ছে। এগুলোই এখন মূল সমস্যা হয়ে উঠেছে। কিক ইট আউটে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাছে লাগিয়ে অনলাইনে এসব নিপীড়ন খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, ফুটবল ক্লাবগুলোর এ ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করা উচিত।’